ভিশন ২০৪১
মোস্তফা মোর্শেদ
|
স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার পথে দৃপ্তপদে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ পরপর দুইবার স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের সকল শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে চলছে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সরকার ইতিমধ্যে ভিশন -২০৪১ ঘোষণা করেছে। বিগত এক যুগেরও বেশি সময়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ হাত ধরে এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমান এগিয়ে চলছে। টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের সাথে সাথে উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য হ্রাস পাওয়ায় মানুষের জীবন বদলে যাচ্ছে। ২০১৫ সালে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নত হবার পর বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্প উন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নত হবার পথে রয়েছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু, মাথাপিছু আয়, সাক্ষরতার হার, মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণ ইত্যাদিতে লক্ষ্যণীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার ২০৩১ এর মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং ২০৪১ এর মধ্যে দারিদ্র্যকে ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনে দেশকে উচ্চ আয়ের দেশের মর্যাদায় পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২০২২ সালের প্রথম দিকে শুরু হওয়া রাশিয়া - ইউক্রেনের মধ্যকার সংকট আমাদের দেশের জন্য অনাঙ্ক্ষিত সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ বৈশ্বিক সংকটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের সরবরাহের সাথে সাথে মূল্যের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। অতিমারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ আমাদের উন্নয়নের ধারাকে কিছুটা হলেও বাধা সৃষ্টি করেছে। সরকার ঘোষিত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর প্রধান দুইটি ভিশন হলো বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হবে, যেখানে মাথাপিছু আয় হবে বর্তমান বাজারমূল্যে সাড়ে বারো হাজার মার্কিন ডলারের বেশি এবং তা ডিজিটাল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল হবে। এ লক্ষ্যে সরকার দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। আইসিটি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে ৩ মিলিয়ন অতিরিক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বাংলাদেশকে চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মৌসুমি বেকারত্ব রোধে ' কাজের জন্য খাদ্য ', 'গ্রামীণ অতিদরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসৃজন' কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এগুলোর আওতা সম্প্রসারণের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরবরাহের দিক থেকে দেশে নতুন শ্রমশক্তি প্রতিবছর ২.২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে, এটা জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় যথেষ্ট বেশি। সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১২.৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৪.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শুরু করছে। সমাজের পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিভিন্ন রকম আর্থিক নগদ সহায়তা হস্তান্তরে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সুবিধাভোগীর জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে জি টু পি পদ্ধতিতে সুবিধাভোগীদের সরাসরি নগদ অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম ২৬২ টি উপজেলাকে অন্তর্ভুক্তকরণের মধ্য দিয়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। উৎপাদনশীলতা ও আয় বৃদ্ধি এবং পল্লী অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্হান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনাবাদি জমিতে ফসল চাষের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। একটুকরোও জমি যাতে অনাবাদি না থাকে সে জন্য সবাইকে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শহরের সকল আধুনিক সুযোগ সুবিধা পর্যায়ক্রমে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে 'আমার গ্রাম, আমার শহর' প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ লক্ষ্যে উপযুক্ত প্রযুক্তি ও ফসলের জাত উদ্ভাবন ও হস্তান্তরের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্হায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও টেকসই আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকার এ খাতে ভর্তুকি,প্রণোদনা ও পুনর্বাসনের সহায়তা দিচ্ছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে সরকার কৃষি যন্ত্রপাতি ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ হারে ভর্তুকি মূল্যে কৃষকদের প্রদান করছে। জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরনে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মাছ,মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং অচিরেই দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে মাংসের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরনের পাশাপাশি মাছ ও মৎস্যজাত পণ্য এবং প্রাণীজ পণ্য রপ্তানি করে বৈদিক মুদ্রা অর্জন করছে। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকার স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি প্রদানের মাধ্যমে একটি সুস্থ ও উৎপাদনশীল জনসংখ্যা তৈরি করা। মা ও শিশুস্বাস্হ্যের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কিশোর - কিশোরীদের সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র কিশোরবান্ধব স্বাস্থ্য কর্নারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হচ্ছে। সরকার শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নয়ন, শিক্ষায় বৈষম্য দূরকরণসহ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্হা উন্নয়নে কাজ করছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি তৈরির জন্য অবকাঠামো উন্নয়নসহ সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। সরকার অর্থনীতির ডিজিটালাইজেশনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে,কারণ ডিজিটালাইজেশন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা এবং সুশাসনই নিশ্চিত করে না বরং উপকরণের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। ডিজিটাল অর্থনীতিতে সকল ব্যবসায়িক কর্মকান্ড তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাহ করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প পাঁচটি ভাগে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এগুলো হলো সংযোগ এবং অবকাঠামো, ই- গভর্নমেন্ট,মানবসম্পদ উন্নয়ন, আইসিটি শিল্পের প্রসার এবং আইন, বিধি ও নীতিমালা প্রনয়ণ। সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে রপ্তানি ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছে। একটি ক্যাসবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। ভিশন ২০২১ এর অর্জিত সাফল্যের উপর ভিত্তি করে সরকার ভিশন ২০৪১ ঘোষণা করছে। ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমাজের সকল ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিতকরণ,দারিদ্র্য দূরীকরণ, মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদের বিকাশ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, পুষ্টি বৈষম্য দূরীকরণ এবং টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য। পিআইডি ফিচার ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |