বৃহস্পতিবার ৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৮ আশ্বিন ১৪৩১

থার্টি ফাস্ট নাইটের নামে ডিসকো সংস্কৃতি
অ্যাড.এম.মাফতুন আহমেদঃ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ৫:৪৬ পিএম আপডেট: ৩০.১২.২০২২ ৬:০২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

থার্টি ফাস্ট নাইটের নামে ডিসকো সংস্কৃতি

থার্টি ফাস্ট নাইটের নামে ডিসকো সংস্কৃতি

হুজগে বাঙালি। গুজবে বাঙালি। পরশ্রীকাতরতায় বাঙালি। যেনতেন একটি ইস্যু বের করতে পারলে হলো। তারপর একে একে ঢালপালা ছড়িয়ে পড়ে। এসব কাজে সিদ্ধহস্ত বাঙালি। জানা শোনা নেই মগজে একবার ঢুকিয়ে দিতে পারলেই হলো। অতঃপর গো গ্রাসের মত শুধু গিলবে। ভাড়ে না গ্রাসে খাবে তা নিয়ে কিংকর্তৃব্যবিমূঢ়।

বছর আসে,বছর যায়। বাঙালি সংস্কৃতির পালা পার্বন ক’জনে মনে করেন। ক’জন ঘটা করে পালন করেন। নেহাত কম। অধিকাংশই পালা পার্বনের নামই জানে না। তারাই আবার বড় বাঙালিত্বের ভাব দেখায়। থার্টি ফাস্ট নাইট অর্থাৎ ১লা জানুয়ারি। খৃস্টান জগতের উৎসব মুখর এ দিনটি। বাঙালিরাও এদিনটি বাংলা নববর্ষের মত বড়ই ঘটা করে পালন করে। পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে একাত্নতা প্রকাশ করে।

অথচ শতকরা ৯০ জন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশ। তারা এদিনে আবেগে,উচ্ছাসে,অজ্ঞতায়,মূর্খতায় পশ্চিমা সুরে রংঢং করে থাকে। অথচ ইসলামের বা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে এ ধরনের সংস্কৃতি মোটেই সম্পৃক্ত নয়। শুধু মুসলমানরা কেন একমাত্র খৃস্ট জগত ছাড়া অন্যান্য ধর্মালম্বীদের কাছে এ দিবসটি বড়ই বেমানান।
ইংরেজি নববর্ষের ইতিহাস জানতে হবে। বিশ্ববাসীকে জানান দিতে হবে। যাদের কাছে এটা সংস্কৃতি তারা বুকে ধারণ করে রাখবে। আর যাদের কাছে অপসংস্কৃতি তারা এটাকে বর্জন করবে। পশ্চিমারা শ্রদ্ধার সাথে এ দিবসটি পালন করে থাকে। কারণ এটা তাদের সংস্কৃতি।

কিন্তু বাংলাদেশের জনগনের সাথে এই সংস্কৃতির কী সম্পৃক্ত? ইতিহাসের তথ্যনুযায়ি খ্রিস্টপূর্ব ১৫৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজি নববর্ষ উৎসব প্রচলন করে। সে থেকে ১লা জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ হিসেবে নির্ধারিত হয়ে আসছে। সেভাবে খৃস্টীয় সমাজ নববর্ষ উৎসব পালন করে আসছে।

১৫৮২ খৃস্টাব্দে গ্রেগরিয়ান ক্যালেণ্ডার প্রবর্তনের পর পোপ গ্রেগরীর নামানুসারে নববর্ষ পালন করে আসছে। উল্লেখ্য গ্রেগরিয়ান খৃস্টানদের তথাকথিত ধর্মযাজক এবং একজন দুশ্চরিত্র ব্যক্তি।

নববর্ষে বিকৃত আনন্দ নববর্ষের দিন ঘরে-বাইরে চলে বিকৃত আনন্দ। জড়িয়ে পড়ে তথাকথিত সংস্কৃতির নামে উৎকট এক ভোগবাদি সংস্কৃতিতে। নারী-পুরুষের মধ্যে এদিন থাকে না কোন সামাজিক ভেদনীতি। থাকে না পরস্পরের মধ্যে একরাশ মমত্ব ও ভালবাসা। অভদ্রতা,বর্বরতা নানা কুসংস্কারে পরস্পরকে যেনে গ্রাস করে রাখে।

দিনটির প্রতিক্ষায় রাজধানীর টি.এস.সি’র মোড় থেকে শুরু করে বাংলার পথে প্রান্তে সোনার ছেলেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। প্রতিবারের ন্যায় ইংরেজি নববর্ষকে সু-স্বাগত জানায়। ইংরেজি নববর্ষে চলে ধূমধাম আয়োজন। চলে দেশজ গানের বিপরীত হিন্দি আর ইংলিশ গানের ধূমধারাক্কা হিড়িক।

ইংরেজি নববর্ষকে সামনে রেখে প্রতি বছর একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে। রাস্তায় রাস্তায় পাশ্চত্য ষ্টাইলে আনন্দ ফুর্তি করে। অকাতরে নির্লজ্ব,বেহায়ারমত বুকে বুক দিয়ে হুস্কি পান করে। তারপর বেসামাল হয়ে পড়ে।

জামানাটা এমন হয়েছে যে,পাশ্চত্য সভ্যতার অনুকরনে স্বামী রাখে না স্ত্রীর খবর,স্ত্রী রাখে না স্বামীর খবর। এক অদ্ভুত ভোগবাদি সভ্যতা। সভ্যতার নামে পশ্চিমাদের সীমাহীন বর্বরতা। বলগাহীন জীবন ব্যবস্থা। তাই আজ তারা মানুষের সীমা ছড়িয়ে পশুত্বের সীমানায় গিয়ে পৌঁছেছে। তাদের এই পচা রুচির র্দুন্ধে আমাদের সমাজ আজ আক্রান্ত ও রোগাক্রান্ত।
জনমনে একরাশ প্রশ্ন জেগেছে কোথায় চলেছি আমরা? কোন ঠিকানায়? আমরা কী আবহমান বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি কী ভুলে যেতে বসেছি? কেন এত নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? কেন দিনকে দিন ভুলে যাচ্ছি আমাদের চিরায়িত বাঙালি সংস্কৃতিকে।

যে সংস্কৃতির আদলে বেড়ে উঠেছে আমাদের আবহমান জীবন সভ্যতা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে,সংস্কৃতিক পরাজয় হলে একটি স্বাধীন জাতির পরাজয় ঘটে। অস্থিত্বকে বিপন্ন করে। এক পর্যায়ে জাতি নানাভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। অতঃপর নৈতিক পরাজয় ঘটে। নৈতিক পরাজয় মানে একটি জাতির শিকড়ের পরাজয়। পশ্চিমা সভ্যতায় আমরা আসক্ত হয়ে পড়েছি। তারা যেটাকে বর্জন করে,আমরা সেটাকে সানন্দে গ্রহণ করি।

তারা তাদের বর্ষকে কৃষ্টি অনুযায়ী বরণ করে। পাশ্চত্য সভ্যতানুযায়ি আনন্দ-ফূর্তি করে। তাদের কৃষ্টি-সভ্যতা থেকে তারা এক পা দূরে সরে আসেনি। আসার কথাও নয়। তাদের জীবন ধারা বা লাইফ ষ্টাইলের সাথে আমাদের রয়েছে মৌলিকগত পার্থক্য। তাদের কাছে যেটা সংস্কৃতি,আমাদের কাছে সেটা অপসংস্কৃতি।

আমরা সেই অপসংস্কৃতিকে অনুকরণ করছি। উচ্ছৃঙ্খল ভোগবাদী অপসংস্কৃতিতে দিনকে দিন আসক্ত হয়ে পড়ছি। না ভেবে তাদের সংস্কৃতিকে রসগোল্লার মত শুধু গ্রাস করছি। অতঃপর অতি প্রগতি সাজতে যেয়ে ভোগবাদি নোংরা সভ্যতায় মেতে উঠছি।

তবে শ্লীল আর অশ্লীল বলে সর্বত্রই একটা কথা আছে। পাশ্চত্য মহিলারা উলঙ্গ হয়ে প্রকাশ্য চলাফেরা করে। রাস্তায় নাচানাচি করে। হাতধরে কপোত-কপতিরা প্রকাশ্য বুক উচিয়ে উদামের মত চলাফেরা করে। বিভিন্ন বারে যেয়ে হুস্কি পান করে।

সিগারেট টানে। রাতভর কপোত-কপোতি নিয়ে মনের আনন্দ ফূর্তি করে। ভোগবাদী এক যৌবিক সভ্যতায় উবে থাকে। ধরে নিতে পারেন এটা ইউরোপিয়ান সভ্যতা। পাশ্চত্য সংস্কৃতি। এই সভ্যতায় তাঁরা বেড়ে উঠেছে। এই সভ্যতাকে সামনে রেখে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তারা গড়ে উঠেছে। ধনে-মানে বড় হয়েছে।

পৃথিবীময় সাম্রাজ্য স্থাপন করেছে। এটাই তাদের কালচার। তাঁদের কাছে এসবে দোষের কিছু নেই। বরং জাতীয় কালচার ভেবে তাঁরা এটাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। তাদের বেড়ে উঠার ইতিহাস বিশ্ব সমাজে তুলে ধরেছে। তাদের কৃষ্টি সভ্যতার সাথে তারা মিশে আছে। এটাই তাদের স্বাতন্ত্র্যতা। একজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের ভূমিকা।

কিন্তু আমাদের দেশে! এটা অশ্লীল,সামাজিক ও ধর্মীয় বিরুদ্ধ এক কুরুচিপূর্ণ একটি বর্বর বিকৃত সভ্যতা। এ কারনে যে,আমাদের স্বতন্ত্র্যতা আছে,ধর্মীয় বৈশিষ্ট আছে,নিজস্ব পোষাক আছে,আহার প্রনালীতে ভিন্নতা আছে,হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে।

আজকে স্বাধীন বাংলাদেশের ঘরে-বাইরে যে সভ্যতা দেখতে পাচ্ছি এসব পাশ্চত্য সভ্যতা। ওটা তাদের কাছে একটি ‘পার্ট অব কালচার’। সংস্কৃতির একটি অঙ্গ। তারা তাদের কালচার থেকে বিন্দুমাত্র দূরে সরে আসেনি। আসা উচিতও নয়। আসলে তাদের নাগরিক চেতনা থাকে না। জাতীয়তাবোধ থাকে না।
 
আমরা কেন তাদের কালচার গ্রহণ করব? কেন এ নিয়ে এত মাতামাতি করবো? কেন রাতভোর ডিসকো কালচারে মগ্ন থাকব? কেন বিভিন্ন ক্লাবে,বারে মদের নেশায় বিভোর থাকব? আমাদের কী কোন স্বাতন্ত্র্যতা নেই? কোন আত্নমর্যাদা নেই? সবকিছু কী হাওয়ায় চলছে?



লেখক:  কলামিষ্ট ও আইনজীবী।


« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com