এইডস চিকিৎসায় আমূল বদলাতে পারে
মো. শফিকুল ইসলাম:
|
![]() এইডস চিকিৎসায় আমূল বদলাতে পারে এইডস (অ্যাকুয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম) হলো এক ধরনের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এ রোগ এইচআইভি নামক ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। এইচআইভি এমন একটি ভাইরাস, যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। তাছাড়া এ ভাইরাসটি রক্তের সাদা কোষ নষ্ট করে দেয়, যার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অকার্যকর হয়ে পড়ে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হওয়ার চূড়ান্ত পরিণতি হচ্ছে এইডস রোগে আক্রান্ত হওয়া। তবে এইচআইভি ও এইডস কিন্তু একই নয়। এইচআইভি একটি ভাইরাস এবং এইডস একটি অসুস্থতা, যা এইচআইভির কারণে হয়। এইডস রোগের বর্তমানে কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সারা বিশ্বের একটা বড় সংখ্যক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যাও দীর্ঘ। ভারতীয় এই গবেষক দলের প্রধান ডক্টর অজিত চান্ডে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এই ধরনের আরএনএ কোশে খুব বেশি থাকে না। এর কাজ কী? আরএনএ বা রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড কোশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ভাইরাসে থাকা আরএনএ কোশের সমস্ত তথ্য নকল করতে পারে। এছাড়াও ওই কোশকে প্রোটিন জোগান দেওয়ার কাজ করে আরএনএ। এই তথ্য নকল করে ভাইরাসকে বংশ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে গোলাকার আরএনএ। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, মানবদেহে বিভিন্নভাবে এইডস রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে। এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা বীর্য বা জরায়ু রসের সঙ্গে যদি সুস্থ কোনো ব্যক্তির রক্ত, শরীর রস বা মিউকাশ আবরণের সংস্পর্শ ঘটে, তবে এইচআইভি তথা এইডস রোগের বিস্তার ঘটে। এসব সংস্পর্শ নানাভাবে ঘটতে পারে। যেমন-অবাধ যৌনাচার, এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে ধারণ বা গ্রহণ, অঙ্গ প্রতিস্থাপন বা দাঁতের চিকিৎসা বা অপারেশনসহ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ব্যবহার। এমনকি সংক্রমিত গর্ভবতী নারী থেকে শিশুর দেহেও এ রোগ ছড়াতে পারে। এইডস রোধকল্পে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিকারের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিলে এইচআইভির সংক্রমণ থেকে মানুষ মুক্ত থাকতে পারে। যেমন-অবাধ যৌনাচার বন্ধ করে নিরাপদ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, কনডমের ব্যবহার নিশ্চিত করা, রক্ত সংগ্রহের আগে রক্তদাতার রক্ত পরীক্ষা করা, গর্ভাবস্থায় মায়ের এইডস ছিল কি না তা পরীক্ষা করা, সুচ-সিরিঞ্জ জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা, মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকা, প্রচারমাধ্যমগুলোকে এ ব্যাপারে সক্রিয় করা। এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই সর্বদা এইডস হয় না। শুরুতে ক্ষেত্রবিশেষে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের উপসর্গ দেখা যেতে পারে। এরপর বহুদিন কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। এইচআইভি ভাইরাসের আক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেহের প্রতিরক্ষাতন্ত্র দুর্বল হতে থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সাধারণ সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এমনকি টিউমার হতে পারে, যা কেবল সেসব লোকেরই হয় যাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে না। এইচআইভি সংক্রমণের এ পর্যায়টিকে এইডস বলা হয়। এইচআইভি দ্বারা আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীই কোনো লক্ষণ ছাড়া এ রোগ বহন করে। তবে কখনো কখনো এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ পর কিছু কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন-জ্বর, গলাব্যথা, মাথাব্যথা, মুখের অভ্যন্তরে ঘা, দীর্ঘমেয়াদি কাশি, স্বাস্থ্যের অবনতি, লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ কোনো চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়, যে কারণে রোগী এই ভাইরাস সম্পর্কে বুঝতে পারে না। এইচআইভি কোনোরকম লক্ষণ ছাড়াই সর্বোচ্চ ১০ বছর মানুষের শরীরে বাস করতে পারে। বর্তমানে এইডস একটি ভয়াবহ রোগ হিসাবে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সর্বপ্রথম ১৯৮১ সালে আমেরিকায় এ রোগ আবিষ্কৃত হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রক্ত পরিসঞ্চালনের আগে রক্ত এইচআইভিমুক্ত কি না, তা স্ক্রিনিং করে নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল রক্ত সরবরাহ করার পরামর্শ দেয়। একসময় এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু অনিবার্য ছিল, তখন এ রোগকে ঘাতক রোগ বলা হতো। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |