প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য সংকট: সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে জীবন রক্ষার কৌশল
ইয়াসমিনা হক ইমন:
|
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রথম প্রভাবগুলোর মধ্যে খাদ্য সংকট এবং ঘুমের অভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। খাদ্যের অভাবে জীবন নিস্তেজ হয়ে পড়ে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ছয়টি সুষম খাদ্যের নিয়ম মেনে প্রতিদিনের খাদ্য চাহিদা পূরণের পরামর্শ দিলেও বাস্তবে আমাদের দেশের মানুষের জন্য তা অনুসরণ করা বিভিন্ন কারণে সহজ নয়। মানুষ এখন নিজের দৈনিক খাদ্য তালিকা নিয়ে অনেক সচেতন, কিন্তু রান্নার কৌশল, স্বাদের প্রতি ঝোঁক, এবং পারিবারিক খাদ্যাভ্যাস দ্বারা খাদ্য গ্রহণ ও নির্বাচনের মনোভাব প্রভাবিত হয়।
জীবনের প্রতিটি স্তরে স্বাস্থ্য ও পুষ্টির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে সঠিক পুষ্টি সরবরাহ না হলে শুধু শারীরিক দুর্বলতা নয়, মানসিক চাপ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। যখন কোনো শক্তির প্রয়োজন হয়, তখন সঠিক খাদ্য গ্রহণের সুবিধা টের পাওয়া যায়। শারীরিক অভ্যাসও এ ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন শিক্ষা জীবন কাঠামোর মেরুদণ্ড, তেমনি সুস্থ থাকার জন্য মেরুদণ্ডের সোজা ও দৃঢ় থাকার ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্য উপাদান কার্যকরী। এই অতিরিক্ত পানির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিক করতে সঠিক খাদ্য নির্বাচন এখন অত্যন্ত জরুরি। আশ্রয় কেন্দ্রে খিচুড়ি রান্না সহজ, কিন্তু পানিবন্দী জায়গায় তা সম্ভব নয়; সংরক্ষণ হবে না, পচা খাদ্যে পরিণত হবে। সে ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু এবং সিদ্ধ আলু দুই দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং তা ভালো থাকবে। ডাবের পানি, নারকেল, সিদ্ধ ডিম শরীরকে উচ্চ মাত্রায় এনার্জি দেবে। খেজুর, ভাজা বাদাম, সিদ্ধ ছোলা, শশা হতে পারে সহজ একবেলার খাদ্য তালিকা, যা সহজে সংরক্ষণ করা সম্ভব। তেমনি বন, পাউরুটি, এবং জেলিও হতে পারে খাবারের সঙ্গী। তথাকথিত চিড়া-মুড়ি নির্বাচিত ত্রাণ হতে হবে—এই ধারণা থেকে কিছুটা বের হয়ে আসা উচিত। চিড়া-মুড়ি-গুড় অবশ্যই থাকবে, কিন্তু উল্লেখিত খাদ্যগুলো পুষ্টি ঘাটতি পূরণে সহায়ক হবে। তেমনি ভিটামিন সি ট্যাবলেট এবং মাল্টি ভিটামিন সপ্তাহে তিন দিন গ্রহণ করতে হবে খাদ্য চাহিদার অভাব দূর করতে। চিনি, লবণ, এবং সি-ভিটা সবই সম্ভব, যদি থাকে বিশুদ্ধ পানি। বৃষ্টির পানি প্রকৃতির নিয়ামত, যা অনেক প্রাচীন আমল থেকে ধরে রাখার অভ্যাস আছে মানুষের। খালি পরিষ্কার প্লাস্টিকের পাত্রে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে কিছুটা বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মিটবে। এই ধরনের প্রাকৃতিক পানি সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করা উচিত, বিশেষ করে যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পানির অভাব দেখা দেয়। লড়াকু মানুষ সব বাধা, সব সমস্যা ভুলে হাসিমুখে নতুন সূর্যের দিকে চেয়ে জ্বলে উঠবে—এই প্রত্যাশা সকলের। নিষ্ঠুর প্রকৃতি তার অসীম দয়ার ক্ষমতা দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ দূর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেবে—এই চাওয়াই একমাত্র। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, সচেতনতা এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা দুর্যোগের যেকোনো প্রভাবকে কাটিয়ে উঠতে পারি এবং নতুন দিনের আলোয় এগিয়ে যেতে পারি। লেখক: ইয়াসমিনা হক ইমন, পুষ্টিবিদ। ডেল্টা টাইমস্/ইয়াসমিনা হক ইমন/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |