ইবির বাসে শিক্ষার্থীকে হামলা, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
ইবি প্রতিনিধি:
|
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দুই শিক্ষার্থীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা ও হ্যারেজমেন্টের অভিযোগ উঠেছে আরেক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) হামলার বিচার, নিরাপত্তা ও মিথ্যা অপবাদের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উভয়পক্ষ। এতে উভয়পক্ষই নিজেদের ভুক্তভোগী বলে দাবি করছেন। এদিকে উভয়পক্ষই এ হামলার প্রতিবাদে ও বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেন। ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশিক ইকবাল সাদ ও অনিকা আশরাফী ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মোরসালিন মুন। তবে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি শাখার সহ-সমন্বয়ক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-২৯ শিক্ষাবর্ষের গোলাম রব্বানীকে ঘটনার মূল হোতা বলে অভিযোগ করেছেন সাদ ও অনিকা। তবে এ ঘটনার সাথে তার কোন সম্পক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। সাদ ও অনিকার লিখিত অভিযোগ সূত্রে, বাসে ফেরার সময় মোরসালিন মুনসহ অজ্ঞাত নামা কয়েকজন সাদের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। এতে অনিকা বাধা দিলে তার হাতে অস্ত্র চালিয়ে দেন। এতে তার রক্তক্ষরণ হয়। মারধরের সময় তাদের মুখে মাক্স ছিল। পরে তাদের মাক্স খুলতে গেলে তারা পালিয়ে যান। মোরসালিনের পাল্টা অভিযোগ সূত্রে, পূর্ব শত্রুতার জেরে গতকাল বাসে উঠলে সাদের সাথে মোরসালিনের বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদ এবং তার বন্ধু মোরসালিনের উপর আক্রমণ করলে আত্ম রক্ষার জন্য তাদের মোরসালিন প্রতিহত করেন। এতে তার হাত ও পা কেটে যায়। এক পর্যায়ে সাদরা মোরসালিনকে ধাওয়া করলে সাদ বাস থেকে নেমে যায়। সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী তার লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, গতকাল ওই দুজনের মধ্যে বিগত ঘটনার জের ধরে একটা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই ঘটনায় আমাকে জড়িয়ে পরিকল্পনাকারী হিসেবে অপবাদ দিয়েছে। অথচ এর সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা ও পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। দুপুর ২:৩০ মিনিটে বৈষমাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শহীদ আবরার ফাহাদ ভাইয়ের কবর জিয়ারতের জন্য আমি ও বন্ধুরা অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু দেরি হওয়ায় সেখানে বন্ধুদের সাথে গল্প করছিলাম। পরে বিকাল ৪ টার পর আমরা রওনা দেই এবং রাতে শহীদ আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করি। পরে ফেসবুকে দেখলাম আমাকে সন্ত্রাসী ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। সমন্বয়ক পরিষদকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এই বিষয়ে আশিক ইকবাল সাদ বলেন, করোনাকালীন আমি ক্যাম্পাসে আসার পর গোলাম রব্বানী ও শেখ সাকলাইনসহ আমাকে সাদ্দাম হলের মাঠে র্যাগ দেয়। পরে আমার এক বড় ভাই এর প্রতিবাদ করলে তাকেও তারা ছাত্রলীগ দিয়ে মারধর করেন। তখন থেকে মূলত তারা আমার উপর ক্ষেপে রয়েছে। সেটির জেরেই তারা আমাকে মারধর করেন। এর আগে বিকাল সাড়ে ৩ টা থেকে আমাকে ফলো করা শুরু করেন সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। এই ঘটনার মূল হোতা সহ-সমন্বয়ক গোলাম রব্বানী। আনিকা আশরাফী বলেন, আমি একজন নারী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র (সন্ত্রাসী) দ্বারা এই নর পিশাচ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একজন নারী হয়ে এই ক্যাম্পাসকে আমার ও অন্যান্য নারীদের জন্য নিরাপদ মনে করতে পারছি না। আমি যতটুকু সময় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছি পুরোটা সময় আতঙ্কে কাটাচ্ছি। আমি এই শ্লীলতাহানির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। মোরসালিন মুন বলেন, ২০২০ সালের সিনিয়র-জুনিয়র পরিচয় নিয়ে সাদ’রা আমাকে ও আমার জেলার বিভিন্ন স্যারকে অপদস্ত করেন। পরে বিষয়টি মিচুয়াল হয়। তবুও তারা আমার বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা ছড়াতে থাকে। এর আগে ২০২৪ সালের নীলফামারী জেলা সমিতির ইফতার মাহফিলে শাখা ছাত্রলীগের উপ-মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সাদমান ইরামের সহযোগিতায় বিভিন্ন টোকাই দিয়ে আমাকে ও সেখানে উপস্থিত ৫ ও ৭ জনকে বেদম প্রহার করেন। পরে আমিসহ ৪ জন অসুস্থ হয়ে পড়লে সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাসা যাই। এ ঘটনায় সিনিয়রকে মেরে সবচেয়ে অপ্রীতিকর আচরণ করেছেন ২০১৯-২০ শিক্ষবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের সাদ, আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের মারুফ ও ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের জাহিদ হাসান জিতু। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান বলেন, এই বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের কার্যক্রম চলছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। ডেল্টা টাইমস/ইদুল হাসান/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |