রাজনৈতিক সংস্কার, অর্থনীতি এবং মনুষ্যত্ব বিপর্যয়ে বাংলাদেশ
মোজাফফর হোসেন ভূইয়া:
|
রাজনীতির গ্যাড়াকলে আজ সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ বিপর্যয়ে দিনাতিপাত করছে। অসম রাজনৈতিক মানষিকতা মানুষকে হিংস্র থেকে আরো হিংস্রতর করছে। দিনে দিনে মানুষ হিংসাকে লালন করছে আর প্রতিহিংসাকে প্রতিপালন করছে। প্রতিশোধ পরায়নতা মানুষকে গ্রাস করছে। ভুলে যাচ্ছে যার উপড় প্রতিশোধ নিচ্ছে তিনি বা তারা ভাই, বন্ধু, প্রতিবেশি বা এই বাংলাদেশেরই নাগরিক। হীনতা, অমানবিকতা, মনুষ্যত্বহীন মানষিকতা, অনমনীয়তা, অসহনশীলতা মানুষের মাঝে এমন ভাবে বিরাজ করছে যা তাদেরকে হত্যা, খুনর রাহাজানির মতো কাজে উৎসাহ জোগাচ্ছে। কেউ সরাসরি হত্যা খুন ধর্ষন, জবর দখল কাজে নিয়োজিত আবার কেউ সে কাজে সমর্থন জোগাচ্ছে এধরনের মানষিকতা সরাসরি অমানুষ হিসেবে নিজেদের পরিচয় করে দিচ্ছে। ইহা দায়িত্ব প্রাপ্ত সর্বোচ্চ স্থর থেকেই ইন্দন জোগাচ্ছে। এধরনের কাজকে সমর্থন দেওয়া জঘন্য অপরাধ হিসেবেই বিবেচিত। এমন হীন মানষিকতা সম্পন্ন মানুষগুলোকে ধিক্কার জানানোর ভাষাও খোজেঁ পাওয়া যায়না। একটি দেশের শাসন ব্যবস্থা যখন চরম অবনতির দিকে পৌছে তখন সে রাষ্ট্র হয়ে ওঠে পুলিশি রাষ্ট্র , হয়ে ওঠে মিলিটারি রাষ্ট্র বা আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র । এসব কিছুই অমানবিক শাসন ব্যবস্থার বহিঃপ্রকাশ। তখন দুঃশাসন হয়ে ওঠে ছেলেখেলার মতো। তখন শাসন ব্যবস্থা হয়ে ওঠে উম্মাদ প্রায়। বর্তমান সময়ে চরম উম্মাদ প্রকৃতির আচরন আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। এখানে পুলিশ সেনাবাহিনীর দ্বন্দ যা শারীরিক আক্রমনে রুপ নিচ্ছে। এটা খুবই ভয়ংকর যে একজন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে একজন উর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তার অপমান বা সেই সেনা কর্মকর্তার মাধ্যমে সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্যাতন কি ধরনের ইঙ্গিত পোষন করে তা আর বলার ভাষা রাখে না। এখানে দায়িত্ব পালনে সহনশীলতার মরাত্বক ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। উভয় পক্ষের এই হীন আচরণ সরকারকে শুধু বিব্রতই করছে না তা তাদের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমাদের দেশের বর্তমান আইন প্রয়োগের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে বুদ্ধিজীবি ও সাধারন মানুষগুলো কারাগারে নির্যাতিত আর স্বঅকৃত শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গী, অপরাধকারীদের মুক্তি অবাধ বিচরণ সুবিধা। এগুলো সাধারন ভাবে ভাবলে হবে না এসবের যে হীন মানষিকতার পরিচূয় দিচ্ছে তা চরম অবনতির ও দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলেই ভাবা যায়। বর্তমান সময়ে চোর ডাকাতের ভয়ে মানুষের ঘুম হারাম প্রায়। রাস্তায় ছিনতাইকবারীর অবাধ চলাফেরা আর সুযোগ পেলেই কাউকে আঘাত করা যেন নিত্যনৈমিত্যিক ব্যপার। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বাক অবস্থান আমাদেরকে চরম হতাশায় ডুবিয়ে দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। আমি আগেও বলছি এই অন্তবর্তিকালীন সরকার দেশের আঠার কোটি মানুষের সরকার। এই সরকার সাধারন মানুষের সরকার। এই সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌমত্মরক্ষার সরকার । কিন্তু দিনে দিনে আমরা লক্ষ্যকরছি ইই সরকার হয়ে ওঠছে কোন নির্দিষ্ট দলের বা গোষ্ঠির। এরা হিংসাকে লালন করছে আর প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে পড়ছে। এখানে আইনের প্রয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আমরা চাই প্রকৃত অপরাধীর বিচার কোন ইন্ডেমনিটির প্রয়োগ আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা অপশাসনের বিচার চাই অতীত বর্তমান সকলের, আমরা অর্থ পাচারকারীদের বিচার চাই, আমরা দুঃশাসনের বিচার চাই। কিন্তু এই বিচার যখন অবিচারে পরিণত হয় তখন আমাদের চরম হতাশ করে। নিরপরাধ হাজার হাজার মানুষের বিরুদ্ধে মামলা মোকদ্দমার এমন খেলা খুবই জগন্য অমানবিক যা মনুষ্যত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। পরিবর্তন যদি প্রতিশোধ পরায়নতাকে উদ্ভোদ্য করে তবে তা জাতিগত দুঃখ সৃষ্টি করবে। বর্তমান সময়ে হটকারিতার একটি পরিচিত শব্দ হলো সংস্কার যা ব্যাক্তি স্বার্থ উদ্ধারে ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংস্কার মানে কি কোন দলকে বা গোষ্ঠিকে ধ্বংস করা পায়তারা নাকি তাদেরকে হত্যা, খুন, গুম, চারিচ্যুতি, বাস্তহারা করার মানষিকতা । এধরনের হীন মানষিকতা কখনোই কোন সংস্কার হতে পারে না। সাধারন মানুষকে যে আন্দোলনে ব্যবহার করে প্রতারনার মাধ্যমে অভিশপ্ত একটি অপসংস্কারে হাত দেওয়া হয়েছে তার পরিনাম কত ভয়াবহ রুপ নিতে পারে তা ভেবে দেখার দূরদর্শিতা বর্তমান দায়িত্ব পালনকারী মানুষজনের যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা বর্তমান হিংসাত্ব ও হিংস্রাত্বক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক আচরণকে বিগত সময়ের সকল অপশাসনকে হারমানিয়ে চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার গ্রহণ করতে পারে। আমার দৃষ্টিকোন থেকে তারা বিপুল পরিমান পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে যা বিগত সকল সরকারি অপশাসনের থেকেও বেশি দুঃশাসন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সেই জন্য বিশ^বরেণ্য ব্যাক্তিগনও সৃষ্টির সকল উপাদানকে টপকিয়ে নিজেকে বিশ^হীন মানষিকতার মানুষ হিসেবে পরিচিত করতে প্রস্তুত। তারা ১৪ই ডিসেম্বরকে পুনরাবৃত্তি করতে প্রস্তুত। আবার তারা বাংলাদেশকে পূর্বপাকিস্থান হিসেবে পরিচিত করতে প্রস্তুত। তারা জাতিকে বিভিষিকাময় নতুন কোন ক্রাইসিসে ফেলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জনগনের গলা কাটতে প্রস্তুত। আমরা খুবই উদ্বেগের সাথে দেখছি যে সংস্কার নামক শব্দটিকে খুব দ্রুতই নেগেটিভ অর্থবোধক শব্দে পরিণত করতে যাচ্ছে। অর্থাৎ সংস্কার যখন অপসং¯কারে রুপ নেয় তখন তা গালি হিসেবেই পরিগণিত হবে যা বর্তমানে হয়ে যাচ্ছে। এই অপসংস্কারকে আলিঙ্গন করা দায়িত্বশীল মানুষগুলোর উদ্দেশ্য এমন হীন যে তারা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সামাজিক বন্ধনকে বিকৃত করে মানুষের মাঝে হিংসা, বিদ্বেস, হানাহানি, খুন খারাপির মতো হীন কাজকে উৎসাহিত করছে। ইহা দেশের ভবিষ্যৎ সার্বভৌমত্মকে ধ্বংস করার মতো জঘন্য কাজকে সহায়তা করছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে অন্য একটি দেশের পাচাটা গোলাম হিসেবে পরিচিত করতে উদ্যত ভুমিকা পালন করছে। অনভিজ্ঞ, অযোগ্য মানুষের হাতে আজ আমাদের দেশের অর্থনীতি, প্রশাসনস রাজনীতি, সমাজ সংস্কৃতি । তারা দেশকে একটি অনিরাপদ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এমন হীন কাজ নয় যা তারা করছে না। তারা দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করছে, সমাজে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি আর অনৈতিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ করছে আমাদের সমাজকে। আমরা যে সংস্কার চেয়েছি তা তাদের মনের সংস্কার ছিলনা। তারা দেশকে এটি সাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে ধর্মকে ব্যবহার করছে। ধর্মের বানীকে নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তাদের এই হীন বিভ্রান্তি দেশের নতুন করে একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। বর্তমান সময়ে আমরা দেখেছি জাতীয় মসজিদে দাঙ্গা, আমরা দেখছি মন্দির ভাঙ্গার হীনতা, আমরা দেখছি খুন ডাকাতি আরব বর্বর আচরণ। এধরনের বর্বতা আমরা বিগত কোন কালেই দেখিনি। আজ আমরা খাদ্য অভাবে ভিক্ষার থালা হাতে নিতে বাধ্য হচ্ছি। বাজারে দ্রব্যমুল্যের নিয়ন্ত্রনহীনতা এই দায়িত্বশীল লোকদের অযোগ্যতাকেই প্রকাশ করছে। মুখে বড় বড় কথা বললেই সব ঠিক হয়ে যায় না। সব কিছু ঠিক করার জন্য দরকার সততা, নিষ্ঠা আর দুরদর্শিতা। কারো সাথে ব্যক্তিগত দ্বন্দের আর জেদের বসে দায়িত্ব গ্রহন আর দেশপ্রেমের দায়ে দায়িত্ব পালন এক নয়। এখানে দেশ প্রেমের কোন গন্ধ খোঁজে পাচ্ছি না কারন দায়িত্ব গ্রহনের কয়েকদিনের মধ্যেই নিজেদের কর মওকুফের মতো স্বার্থসিদ্ধি কোন ভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। যে মানুষের মাঝে স্বার্থপরতা কাজ করে তার মাঝে কোন দেশপ্রেম থাকতে পারে না। তার মাধ্যমে সুশাসন প্রত্যাশা করা যায় না। এই ধরনের হীনতা অপসং¯কারের একটি দৃষ্টান্তই হবে। বাচ্চা মানষিকতাই দেশ পরিচালনা করা যায়না। এর জন্য দরকার মানবিক ম্যাচুরিটি বা পরিপক্ষতা। আপনারা বাংলাদেশকে অস্বীকার করেছেন এখন আবার এই দেশকে শাসন করার স্বপ্ন দেখেন ইহা একটি প্রতারনা নয়। প্রতারক কখনো ধার্মিক হতে পারে না। তারা কপট, তারা বকধার্মিক। শংকর জাতির মানুষগুলোর আচরন বিকৃত হয়েই থাকে। তাদের এই বিকৃত আচরনকে সামাজিক আচরনে পরিণত করতে চাইলে প্রয়োজন মানুষের রুপধারন করা । আমরা এখন পর্যন্ত মানুষ হিসেবে কোন শাসক পাই নাই। এখানে কেউ পাকিস্থানের প্রেতাত্বা, কেউ ভারতের প্রেতাত্বা, কেউ আবার আমিরিকার প্রেতাত্বা, ইদানিং কেউ কেউ আবার ইহুদীদের প্রেতাত্বা হিসেবে নিজেদের পরিচিত করতে আনন্দ পায়। আমরা এমন সব প্রেতাত্বদের শাসন কাজ পরিচালনা করতে দিতে প্রস্তুত নই। তাদের হীন মানষিকতা সম্পন্ন শাসন কাজ থেকে বের করে দিতে হবে। আমরা কোন ব্যাক্তির নাম নিতে চাই না কারন তাদের হীন মানষিকতা আমাদের জীবনের জন্য হুমকী হিসেবে দাড়াঁয় । তাদের হিংস্রতা আমাদের জীবন নাশের কারন হয়ে উঠে। আমাদের দেশের মানুষ এক পাত্রে খেয়ে অভ্যস্থ সেখানে বর্তমান সময়ে যে বিভক্তির রেখা স্থাপন করা হচ্ছে তা পরিকল্পিত মনুষ্যত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। সত্যিকার অর্থে দেশ পরিচালনার জন্য যে ত্যাগ থাকা উচিত তা আমাদের নেতৃত্বের মাঝে লক্ষ্যকরা যায় না। ইহা আমাদের জন্য চরম পর্যায়ের ব্যার্থতা। আমাদের দেশের উন্নয়ন ও জবাবদিহিতার শাসন পেতে হলে দরকার মানবিক মূল্যবোধ ও মনুষ্যত্বের বিকাশ। এর পরিব্যাপ্তি বিরাজ করতে হবে শিক্ষায়, রাজনিিততে, অর্থনীতিতে, আচরণে, সমালোচনায়, আত্মউন্নয়নে এবং সম্প্রিতিতে। এসব কিছুর উন্নয়নে থাকতে হবে সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা। কার্যকর চিন্তার ধারাবহিকতা, বিকাশ ও বাস্তবায়ন করতে কার্য পরিচালনার জ্ঞানবোধ জাগ্রত করতে হবে। আচরণ বিজ্ঞান প্রসার ও শিষ্টাচার বিকাশে সামনে থেকে কাজ করতে হবে। সহনশীলতা বৃদ্ধি ও উগ্র আচরণ নিয়ন্ত্রন করে মানুষের সাথে অহিংস আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্য দুরীকরনের লক্ষ্যে সাামজিক মূল্যবোধকে জাগিয়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে মানুষ হতে হবে , দায়িত্বশীলতা অর্জন করতে হবে। লেখক: কথা সাহিত্যিক ডেল্টা টাইমস্/মোজাফফর হোসেন ভূইয়া/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |