ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক বিজয় ও ভবিষ্যৎ বিশ্ব রাজনীতি
মো. হাসান তারেক:
প্রকাশ: বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪, ১০:৫৩ এএম

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক বিজয় ও ভবিষ্যৎ বিশ্ব রাজনীতি

ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক বিজয় ও ভবিষ্যৎ বিশ্ব রাজনীতি

ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোটি কোটি আমেরিকান ভোট দিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ইলেকট্রোরাল ভোটের ৫৩৮ টির মধ্যে বিজয়ী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়েছে ২৯৫ টি এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে পড়েছে ২২৬ ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে ১৩২ বছরের পুরনো রেকর্ড ভেঙে একবার হেরে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হ্উাজে প্রত্যাবর্তনের ঘটনা ঘটলো। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নিবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে তুরুপের তাস হিসেবে কাজ করেছে তার অর্থনীতি, অভিবাসননীতি, পররাষ্ট্রনীতি। বিগত চার বছর মূল্যস্ফীতির কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা  অনেকটা হাঁফিয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বেকারত্বের হার অনেক কম, প্রবৃদ্ধির হার গড়পড়তার উপরে, মানুষের খরচ করার পরিমাণ বেশি,আর মানুষের কাছে এখন অনেক সম্পদ থাকলেও তারা মনে করছে যে, অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। অর্থনীতি নিয়ে মানুষের এমন ভাবনাকে ‘কনজিউমার ইনডেক্স’ দিয়ে মাপা হয়। বর্তমানে এই সূচক ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের চেয়ে অনেক নিচে রয়েছে।  

গবেষণা প্রতিষ্ঠান এডিসন রিসার্চের বুথ ফেরত এক জরিপ থেকে জানা যায়, ৪৫ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা চার বছর আগের তুলনায় এখন খারাপ অবস্থায় আছে। এই ৪৫ শতাংশ ভোটারের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন মাত্র ১৭ শতাংশ ভোট। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই যুগান্তকারী বিজয়ের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে পারে। এক্ষেত্রে, ভয়ের কারণ হতে পারে, ডোর্নাড ট্রাম্প ঘোষিত ‘রক্ষণশীল’ অর্থনৈতিক নীতি। তাছাড়া তিনি যে, ‘আমেরিকা ফাস্ট’ ও যুক্তরাষ্ট্রের বৈরি দেশগুলোর বিরূদ্ধে ‘বাণিজ্যযুদ্ধ’ শুরুর হুমকি দিয়েছেন তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে চীনসহ চীনের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করা দক্ষিণ –পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন নিয়েও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ছিলেন সাধারণ ভোটাররা। এ কারণেই ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস সাধারণ ভোটারদের নিজের পক্ষে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। জো বাইডেনের শাসনামলে দেশটিতে অবৈধ অভিবাসন নতুন রেকর্ড গড়েছে। বাইডেনের নীতির অধীনে কিউবা, হেইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনিজুয়েলা এই চারটি দেশ থেকে আসা প্রতি মাসে ৩০,০০০ অভিবাসীকে শতর্ সাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আইনসম্মতভাবে প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এই রাস্তা বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার শাসনামলে যেসব অভিবাসীর বৈধ কাগজপত্র নেই, তাদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমিয়ে আনবেন বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রতি তার সমর্থকদের সমর্থন থাকলেও সেটা বিরোধিতার সম্মুখীন হতে পারে আইন বিশেষজ্ঞ এবং অধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।এবারের নির্বাচনি প্রচারণায় ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফাস্ট’ স্লোাগান ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এ ব্যাপারটিও ট্রাম্পের এই ঐতিহাসিক বিজয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। অনেক মার্কিনি মনে করেন, ইউক্রেনে যে লাখ লাখ বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে, তা যদি আমেরিকার মধ্যে খরচ করা হতো, তাহলে দেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী হতো। ইউক্রেনকে সহায়তা দিতে গিয়ে পেন্টাগনের নিজের অস্ত্রভান্ডারে টান পড়েছে। এ কারণে সাম্প্রতিক কয়েক মাসে কিয়েভের জন্য ওযাশিংটনের সহায়তা প্যাকেজগুলো পরিমাণে ছোট হয়ে এসেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আলোচনার মাধ্যমে তিনি এই যুদ্ধ শেষ করবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হবার পরপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।  অনুরূপভাবে, ভ্লাদিমির পুতিনও নির্বাচনের পর অভিনন্দন জানিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এবং আলোচনায় বসার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। এখন হয়তবা নিকট ভবিষ্যতে এই যুদ্ধ বন্ধের স্বপ্ন দেখা যেতেই পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যা ইরান, সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশের জন্য নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। এই অঞ্চলগুলোতে মার্কিন সেনাবাহিনীর সংখ্যা কমালে তা একটি সামগ্রিক মেরুকরণ তৈরি করবে, যেখানে স্থানীয় শক্তিগুলো তাদের নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে থাকলেও তিনি এবার ভিন্ন নীতিতে  যাবেন বলে আশা করা যেতে পারে। কেননা, ইতিমধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে বলেছেন, এসব শেষ করেন। লড়াই বন্ধ করেন এবং শর্তে আসেন। তাছাড়া, ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যুদ্ধের ক্ষতি ’ প্রকল্পের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিতে গিয়ে রেকর্ড ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুত ‘আমেরিকা ফাস্ট’ নীতির আলোকে ইসরায়েলকেও উৎসাহিত করবে এই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এমনটা আশা করা যেতে পারে।

অপরদিকে, যুদ্ধ বন্ধ করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফাস্ট’ দৃষ্টিভঙ্গি ন্যাটোর ভবিষ্যত সম্পর্কিত কৌশলগত ইস্যূতেও প্রভাব ফেলতে পারে। ন্যাটোর বর্তমান আক্রমণাত্নক রূপকে পরিবর্তন করে দিতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেননা, ন্যাটোর এই আক্রমণাত্নক ভূমিকার কারণে ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গোলমেলে অবস্থায় পড়েছে। আশা করা হচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোর সদস্যদের বিষয়ে বেশ কঠোর হবেন। তিনি চাইবেন সদস্যদেশগুলো যেন ন্যাটোতে নিজেদের ভাগের অংশ বাড়ায়, আর তা নাহলে বেরিয়ে যায়। ন্যাটো যেন সামনের দিনগুলোতে কম আগ্রাসী হয় সেটা নিশ্চিত করতে চাইবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কেননা, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর আগ্রাসী মনোভাবের জন্য অনেক ইউরোপীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী মনে করে। যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোর বরাদ্দ কমাতে  শুরু করেন তাহলে হয়ত জোটটি অনেক বেশি আঞ্চলিক হয়ে যেতে পারে।  সর্বোপরি, ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি তার প্রতিশ্রুত এ্যাজেন্ডাগুলোকে নিয়ে কাজ করেন তাহলে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতিতে নয়া মেরূকরণ হতে পারে।


লেখক : শিক্ষক ও কলাম লেখক।


ডেল্টা টাইমস/মো. হাসান তারেক/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com