সচেতনতায় প্রতিরোধ হবে স্তন ক্যান্সার
মাহজুবা তানিজ:
|
![]() সচেতনতায় প্রতিরোধ হবে স্তন ক্যান্সার বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছে। এই রোগ যেন আজকাল একটা আতঙ্কের নাম। স্তন ক্যান্সার রোগে নারী পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হতে পারে। তবে, পুরুষের তুলনায় নারীদের আক্রমনের হার বেশি। সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে বাংলাদেশের নারীরা যেখানে প্রকাশ্য "স্তন" শব্দটা উচ্চারণ করতে চান না, সেখানে শারীরিক লক্ষণ দেখা দিলেও তারা গোপন করে এবং রোগ অসহনীয় পর্যায়ে গেলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করে। এই জন্য আমাদের দেশে প্রতিবছর ১৫-২০ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, আর মারা যান ৮-৯ হাজারের মতো নারী। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে মূলত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বর্তমানে জীবনযাত্রার এবং খাদ্যাভাসের পরিবর্তন স্তন ক্যান্সারের প্রধান কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার খাওয়া, শাকসবজি কম খাওয়ার প্রবণতা, কম শারীরিক পরিশ্রম করা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করা, অতিরিক্ত স্থুলকায় হয়ে পড়া, ব্যায়ামের অভাব, নিয়মিত জন্মনিরোধক পিল খাওয়া এছাড়া পরিবারের স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নানা উপসর্গ নিয়ে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। স্তনে চাকা দেখা দেওয়া, স্তনবৃন্ত থেকে দুধ অথবা পুজের মতো তরল আসা, স্তনের চামড়ার রং পরিবর্তন হওয়া, স্তনবৃন্তের চারপাশে ঘা, ক্ষত এবং কালো অংশে চুলকানি হওয়া, স্তনবৃন্ত ভিতরে ঢুকে যাওয়া। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। স্তনের সেল্ফ এক্সাম করানো (নিজে নিজে পরিক্ষা করা), মেমোগ্রাম, আল্টাসাউন্ড, এম আর আই এগুলোই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্তন ক্যান্সারে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। সিস্টেমিক থেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি, সার্জারি ইত্যাদি৷ বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল আছে চারটি। বাংলাদেশ ক্যান্সার ইন্সটিটিউটসহ সরকারি বেসরকারি অনেক হাসপাতালে স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা চলছে। তবে, কয়েকটি বেসরকারি ও কিছু বড় সরকারি হাসপাতালে একটি করে ক্যান্সার ইউনিট থাকলেও বাংলাদেশে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা দেড়শ'র কম। অন্যদিকে, বাংলাদেশে ক্যান্সারের যেসব চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে, তা একদিকে অপ্রতুল এবং অন্যদিকে দীর্ঘ মেয়াদে বেশ ব্যয়বহুল। ফলে পরিবারে কারো ক্যান্সার হলে, সেটি ঐ পরিবারের ওপর এক ধরণের দুর্যোগ ডেকে আনে। তবে আমরা যদি সচেতন হয় তাহলে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব। এর জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি। শরীরে মেদ/স্থুলতা দূর করা, নিয়মিত পরিশ্রম করা, মদ-সিগারেট এক কথায় নেশা জাতীয় দ্রব, মুখরোচক এবং অ্যালকোহল যুক্ত খাবার পরিহার করা, বাচ্চা হওয়ার পর ব্রেস্ট ফিডিং করানো, পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন-ডি গ্রহণ করা, রেডিয়েশন থেকে দূরে থাকা, প্রতিবছর ক্লিনিক্যাল এক্সাম করানো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা, প্রতিমাসে একবার খুব সাবধানে স্তনের সেল্ফ এক্সাম করানো, ৪৫ বছর বয়সের পর প্রতি দুইবছর পর পর ম্যামোগ্রাম করানো (যদি সামর্থ্য থাকে), ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া এবং প্রোগামের আওতায় আসা কারণ স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে তা ১০০% নিরাময়যোগ্য বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। আমাদের সুশৃঙ্খল জীবনযাত্রা এবং জীবনযাত্রার কিছু পরিবর্তন হলে যা ক্যান্সার রোগের কারণ তাহলে এ রোগের প্রকোপ অনেকাংশে কমে আসবে এবং আমাদের সমাজ হয়ে উঠবে সুস্থ-সুন্দর। তাই রোগহীন, সুস্থ সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সচেতনতার বিকল্প নাই। লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |