যাপিত জীবন: ধান কুড়ানী হামিদা
কিউ. এম. সাঈদ টিটো, মহাদেবপুর (নওগাঁ) :
|
এলাকার মানুষ এখন তাকে ধান কুড়ানী হামিদা বলেই চেনে। হাটে হাটে ধান কুড়িয়ে পরিস্কার করে যা পান, তাই দিয়ে চলে সংসার তার। একসময় স্বামী সংসার সবই ছিল হামিদার। এখন একা। ঠাঁই হয়েছে আবাসন প্রকল্পে। বছরের শেষ দিন শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে তার সাথে কথা হয় নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের ধানহাটিতে। সারি সারি চাটি ফেলে ধান কিনছেন বয়লারের লোকজন। এক একটি ধানের পাহাড়। কেনা ধান বস্তায় ভরা হলে ধূলো মাটিতে পড়ে থাকে ছিঁটেফোটা। সেই সামান্য ধান ধূলো, মাটি, ময়লাসহ ঝাড়ু দিয়ে জমা করেন হামিদা বেওয়া। তার পর প্রথমে চালুনি দিয়ে চেলে খড়, ঘুঁটে, কাঁকর থেকে আলাদা করেন। সেগুলো আবার কুলোয় ঝেড়ে কাঁকর, বালু, মাটি আর ময়লামুক্ত করেন। অনেক চেষ্টায় বেরিয়ে আসে সামান্য ধান। সেগুলো উষিয়ে শুকিয়ে চাল করে তবেই জোটে খাবার। কাঁদো কাঁদো সুরে এসব বলতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন হামিদা। জানালেন, বয়স ৭০ পেরিয়ে গেছে। স্বামী আব্দুস সাত্তার মারা গেছেন অনেক দিন। এক ছেলে পাগল। দু’মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এখন তিনি একা। উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের চকহরিবল্লভ আবাসন প্রকল্পে একটি ঘর পেয়েছেন। পান বৃদ্ধ ভাতাও। কিন্তু তা দিয়ে চলেনা। তাই পেট চালাতেই এ ধান কুড়াতে আসেন। কুড়ানো ধানের ময়লা পরিস্কার করার সময় চারিদিক ধূলোয় ভরে যায়। ধূলো মাটি ফুসফুসে ঢুকে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে ভোগেন। উপায় নেই। এই অবস্তাতেও নাকে মুখে মাস্ক এঁটে ধান কুড়াচ্ছেন তিনি। ঠাণ্ডায় জবুথবু হামিদার গায়ে জ¦র। তবুও হাটের দিন। তাই উপায়ে নেই শুয়ে বসে থাকার। সপ্তাহের শনিবার আর বুধবার প্রায়ই দেখা যায় তাকে ধান কুড়াতে। |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |