শনিবার ৩০ মার্চ ২০২৪ ১৬ চৈত্র ১৪৩০

সৃজনশীল জনসম্পদ তৈরিতে দরকার মানসম্পন্ন শিক্ষা
রায়হান আহমেদ তপাদার
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ২:০৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

.

.

আমরা যখন জীবনের সঙ্গে শিক্ষাকে মেলানোর কথা বলি, তখন সাধারণত আমরা কর্মমুখী শিক্ষাকে বোঝাই, অথবা কোনো কাজ করতে করতে কোনো কিছু শেখাকে বোঝায়। এই দুই ক্ষেত্রেই শিক্ষাকে জীবনের সঙ্গে মেলানোর একটা চেষ্টা থাকে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এই দুটিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটা সমাজের সবচেয়ে সুন্দর উপাদান হচ্ছে মননশীল মানুষ। আর সেই মননশীল মানুষ  সমাজের জন্য তৈরি করতে হয়। মানুষের প্রথম শিক্ষাজীবন, বিশেষ করে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি তার পরবর্তী জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ সময় তার চিন্তার ভিত তৈরি হয়, আর এর দায়িত্ব সম্পূর্ণ সমাজের। মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুবান্ধব-কারোরই নয়, আর এ জন্যই সমাজকে ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। যেমন শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঠিক এমনই একটা সমাজের খুবই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি প্রতিষ্ঠান মানে সরকারের নয়, বরং জনগণের টাকায় জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করবে এ রকম প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে সমাজের চিন্তাবিদ, শিক্ষিত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিজ্ঞ মানুষেরা। যাঁরা ব্যক্তিস্বার্থ ও ক্ষমতার ইগোকে বর্জন করে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা শুনে ও অর্জন করে নিজেদের সিদ্ধান্তের ইগোকে পাশ কাটিয়ে জাতীয় স্বার্থে কাজ করবে। একটা সমাজের চমৎকার সব মননশীল মানুষ তৈরি করতে হলে শিশুদের প্রতি যত্নের কোনো বিকল্প নেই। শিশু অধিকার আইন বাংলাদেশে অনেক উন্নত দেশের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু বাস্তবে আইনের প্রয়োগ কী বলে। এরই মধ্যে দেশে বিভিন্ন শিক্ষামাধ্যম যেমন মাদ্রাসা, কারিগরি, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম তৈরি করে শিক্ষা ও চিন্তার বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে আমরা বিভিন্ন সময়ে গুজব ও বিভিন্ন বিশ্বাসের নামে মিথ্যা ছড়িয়ে সামাজিক অশান্তি তৈরির মাধ্যমে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি, কিন্তু পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষকদের কোনো নির্দেশনা না দিয়ে ও তৈরি না করে এই কোমলমতি শিশুদের যদি তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তবে তা জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

কোনো নির্দেশনা ও সেই নির্দেশনার পেছনে গবেষণার উপাত্ত না থাকার কারণে বিভিন্ন অঞ্চলের শিশুর বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে বিভিন্ন ধরনের চিন্তা তৈরি হবে। এতে দুটি জিনিস হবে চিন্তার ব্যবধান আকাশ-পাতাল হবে এবং সমাজে আরও ভালোভাবে প্রমাণিত হবে যে টাকা বা অর্থই আসল। এতে রাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা লোপ পাবে। কারণ, যেহেতু পরীক্ষা নেই ও তার সঙ্গে কোনো নির্দেশনা নেই যে এই তিন বছর শিশুদের কী কী শেখানো হবে, সেহেতু মা-বাবারা আরও ভয়ংকর প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি শুরু করবেন। তাঁরা একরকম ঘরেই স্কুল খুলে বসবেন বিভিন্ন প্রাইভেট টিউটর দিয়ে। এগুলো বোঝার জন্য বড় কিছু হওয়া লাগে না। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করলে সহজেই এগুলো অনুমান করা সম্ভব। এ জন্যই কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাচ্চাদের মাসিক বেতন দেশের ফার্স্ট ক্লাস অফিসারের থেকে বেশি। এই পরিবারগুলো জানে শুধু রেজাল্ট বা পরীক্ষার ফলাফল। এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি শিক্ষাক্রম কি এক রাতে তাঁদের মানসিকতা পরিবর্তন করে দেবে? কখনোই নয়, বরং তাঁরা তাঁদের নিয়মের বাইরে চিন্তা করতে পারবেন না। ফলে লোভী ব্যবসায়ীর মতো জীবন নিশ্চিত করার জন্য আরও শিক্ষক দিয়ে সন্তানদের আরও প্রতিযোগী করে তুলবে। অন্যদিকে গ্রাম বা অনুন্নত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা অথই সমুদ্রে পড়বে। শিক্ষাবৈষম্য বাড়বে চরমভাবে। প্রাইভেট সেক্টর শিক্ষানৈতিকতাকে গ্রাস করবে। লোভী ধনী ব্যবসায়ীরা শিক্ষা বিক্রি করা শুরু করবে। রাষ্ট্র তার পবিত্রতা হারাবে। কিন্ত আমরা সবাই জানি, রাষ্ট্রীয়ভাবে সবার অধিকার সমান এবং তা নিশ্চিত করা: সবাইকে ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ–নির্বিশেষে এলাকা অনুযায়ী একই স্কুলে ভর্তি হতে হবে বাধ্যতামূলক। এতে সমাজে ছোট বয়সেই বিচ্ছিন্নতা বা বৈষম্য শেখানো হবে না। যেহেতু পরীক্ষা নেই, তার মানে জীবন ও সমাজ বোঝা হবে প্রথম অগ্রাধিকার। শিক্ষাক্রম একটি চলমান প্রক্রিয়া। সময়ের সঙ্গে মানুষের ব্যক্তিগত চাহিদা পরিবর্তনের সঙ্গে সমাজ, রাষ্ট্র, বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে।

তা ছাড়া বর্তমান পরিবর্তনশীল বিশ্বে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এসবের ফলে শিখন চাহিদারও পরিবর্তন হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজনীয় পরিমার্জনের মাধ্যমে শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী রাখা অত্যাবশ্যক। ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রম বর্তমানে চালু আছে। শিক্ষাক্রমকে যুগোপযোগী করার জন্য ২০২২ সালে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়, যা ২০২৩ সালের প্রারম্ভে সারা দেশে একযোগে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, কিন্তু নিরাময়মূলক সহায়তার কথা বলা হয়নি। নিরাময়মূলক সহায়তা ছাড়া শিখনকালীন মূল্যায়ন নিরর্থক। শিখনকালীন মূল্যায়নের মাধ্যমে শিখন-সমস্যা আছে এমন শিক্ষার্থী চিহ্নিত করে নিরাময়মূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের যোগ্য করা না হলে শিখনকালীন মূল্যায়নের কোনো অর্থ নেই। এখন যে শিক্ষাক্রম চালু আছে তা ২০১২ সালে উন্নয়ন করা হয়। তখন প্রতি বিষয়ে ২০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়নের জন্য রাখা হয়। ধর্ম শিক্ষাসহ সব বিষয়েই সামষ্টিক মূল্যায়ন ছিল। তখন পরীক্ষার বিষয় বেশির কথা বলে তা কমানোর ব্যাপারে ধুয়া তোলা হলো। কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠান করে চার-পাঁচটি বিষয়কে সামষ্টিক মূল্যায়নের বাইরে রাখা হয়। তার ফলটা কী হলো? সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রতি বছর এসব বিষয়ে বই দিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু অধিকাংশ স্কুল এ বিষয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের পড়ায় না। কিন্তু এসব বিষয়ে প্রায় শতভাগ নম্বর দিয়ে শিক্ষা বোর্ডে নম্বর পাঠানো হয়। এতে দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। একটি হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা এসব বিষয়ে কোনো জ্ঞান লাভ করল না, বিশাল পরিমাণ সরকারি অর্থের অপচয় হলো, অন্যটি হচ্ছে তাদের মনন-মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো যে না পড়েও নম্বর পাওয়া যায়। না পড়িয়ে ফাও নম্বর দেওয়া শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর। কর্মজীবনে অভিপ্রায় হয় কাজ না করে ফল লাভ করা। যেখানে সমস্যা আছে সেখানে সমাধানও আছে।

সঠিক কৌশল অবলম্বনে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও নিরাময়মূলক সহায়তা খুবই ফলপ্রসূ ব্যবস্থা। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আর একটি চ্যালেঞ্জ হলো শিক্ষক প্রশিক্ষণ। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা অসম্ভব আর মাত্র পাঁচ দিন প্রশিক্ষণ দিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করা যাবে না। এমন চিন্তা অবাস্তব। যারা এমন ভাবছেন তাদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা নেই হয়তো। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বেশকিছু ধাপ রয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন মাস্টার ট্রেইনাররা। আর মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ দেবেন শিক্ষাক্রম প্রণয়নে জড়িতরা। এই বিশেষজ্ঞের সংখ্যা কত? বিশেষজ্ঞরা তো এক মাসেও মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারবেন না। আর সারা দেশের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে লাগবে অন্তত এক বছর। অথচ মাত্র পাঁচ দিনে নাকি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শেষ করার পরিকল্পনা করেছেন তারা! এটা অসম্ভব, অবাস্তব। হাতে কলমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে চাইলে পাঁচ দিনে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের আরও চ্যালেঞ্জের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে যে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম করা হলো সে উদ্দেশ্য অর্জন করতে অনেক শিখনসামগ্রী দরকার। এর প্রথমটি হলো পাঠ্যবই। তারপর শিখন উপকরণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ-সামগ্রী উন্নয়ন। এমন বই লেখার যোগ্যতাসম্পন্ন লেখকের অভাব রয়েছে দেশে। বই লেখা, শিখন উপকরণ তৈরি, প্রশিক্ষণ সামগ্রী তৈরি করাও বড় চ্যালেঞ্জ।শিক্ষাক্রম পাইলটিংয়ের জন্য যে বই লেখা হয়েছে সেখানে কনসেপ্টের বড় বড় ভুল রয়েছে। অল্প কয়েকটি বইয়েই যদি এত ভুল থাকে আগামীতে এতগুলো বই লিখতে কত ভুল থাকবে। এসব বই দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করবেন শিক্ষক। শ্রেণি- শিখনে অভিজ্ঞতাভিত্তিক পদ্ধতির উল্লেখ আছে কিন্তু এর কলাকৌশল সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত নেই।

আসলে চলমান সৃজনশীল পদ্ধতিতে কোথাও যেন গলদ আছে। শ্রেণিকক্ষে বা বাইরে শিখন শেখানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করার সুযোগ না রেখেই শুধু সৃজনশীল পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সৃজনশীলতা মূল্যায়নের জন্য বহুবিধ প্রশ্ন করা যায়, কিন্তু তা না করে শুধু এক ধরনের সৃজনশীল প্রশ্ন ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। তা কোনো অবস্থাতেই সৃজনশীল মূল্যায়ন ব্যবস্থা নয়। নতুন শিক্ষাক্রমে সৃজনশীল পদ্ধতি বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি শিক্ষাক্রমের আরেকটি বড় গলদ। ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল করে তুলতে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে মূল্যায়নেও বহুবিধ সৃজনশীল ব্যবস্থা রাখতে হবে।শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল না করা হলে রূপান্তর যোগ্য যোগ্যতা অর্জন সম্ভব নয়। তা ছাড়া সৃজনশীল জনসম্পদ ছাড়া টেকসই জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব নয়। নতুন শিক্ষাক্রমে এমন অনেক কিছু আছে যেগুলো বাস্তবায়ন করা কঠিন এবং এমন কিছু আছে যা বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না,যেমন নবম ও দশম শ্রেণিতে প্রত্যেক শিক্ষার্থী কৃষি, সেবা বা শিল্প খাতের একটি বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জন করবে এবং দশম শ্রেণি শেষে যে-কোনো একটি বৃত্তিমূলক কাজ করার মতো পেশাদারি দক্ষতা অর্জনের কথা উল্লেখ আছে।পাকিস্তান আমলে এ ধরনের একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল কিন্তু কোনোটাই ফলপ্রসূ হয়নি। বলে রাখা ভালো-বৃত্তিমূলক দক্ষতা এবং পেশাদারি দক্ষতা এক নয়। সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে বৃত্তি ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও ঝোঁক সৃষ্টির ব্যবস্থা থাকবে যাতে সাধারণ শিক্ষা শেষে অনেকে এসব শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়। শিক্ষার্থী যদি যে-কোনো একটি বৃত্তির বিক্রয় উপযোগী দক্ষতা অর্জন না করে অর্থাৎ তার অর্জিত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে সে যদি কর্মক্ষেত্রে মান সম্মত উৎপাদন ও অর্থ উপার্জন করতে না পারে তা হলে এ শিক্ষা অর্থহীন, সময় ও অর্থ নষ্ট। তা ছাড়া একটি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্থ ও সুযোগ-সুবিধার অভাবে কোনো অবস্থাতেই একটি বা দুটির বেশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারবে না। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে এলাকায় ওইসব বৃত্তিধারী জনবলের আধিক্য দেখা দেবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমবে।

সত্যি বলতে কী বাস্তবায়নের কলাকৌশল নির্ধারণ না করে নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় এমন কিছু জাগরণের অবতারণা করা হয়েছে যেগুলোর প্রতিফলন পাঠ্যপুস্তক বা শ্রেণির শিখন শেখানোর পদ্ধতিতে লক্ষ করা যায়নি। নতুন শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন ধারার যৌক্তিক সমন্বয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও মূল শিক্ষাক্রমে সমন্বয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন নিরেট একাডেমিক টেক্সট পড়ে, তখনো এই একই ধরনের ঘটনা ঘটে। যেসব টেক্সট শিক্ষার্থীরা নিজেদের জীবনের সঙ্গে মেলাতে পারে না, সেগুলো তাদের মাথা থেকে বেরিয়ে যায়। তবে পরীক্ষাটা তাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে সেগুলো কেবল পরীক্ষা পর্যন্ত টেকে। কিন্তু পরীক্ষার পর সেই অধীত বিষয়গুলোর প্রাসঙ্গিকতা ফুরিয়ে গেলে সেগুলো ধীরে ধীরে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়। একাডেমিক টেক্সটের সঙ্গে জীবনের যোগসূত্র খুঁজে বের করার কাজটি তিনভাবে হতে পারে। প্রথমত, যাঁরা শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেন বা টেক্সট বই লেখেন, তাঁরা যোগসূত্রটি স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারেন। দ্বিতীয়ত, একজন শিক্ষক যেহেতু তাঁর শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনের সঙ্গে পঠিত বিষয়ের সম্পর্কটি সামষ্টিকভাবে তো বটেই, এমনকি একেবারে ব্যক্তিগত ভাবেও ধরিয়ে দিতে পারেন। তৃতীয়ত, শিক্ষার্থী নিজে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি পালন করতে পারে। সে যদি জানে যে সে যা পড়ছে বা করছে, তার সবই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং তাকে যদি বলা হয়, সম্পর্কটা খুঁজে বের করাও তার শিক্ষার একটা অংশ, তাহলে শিক্ষাজীবনে তো বটেই, সারা জীবন ধরে সে যা পড়বে বা শিখবে, তার সঙ্গে তার জীবনকে মেলানোর চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ, সারা জীবন ধরেই সে সময় ও শ্রমের বিপুল অপচয় রোধ করতে পারবে। ২০২৩ সালে যে নতুন শিক্ষাক্রম আসছে, সেখানে এ বিষয়ে নজর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য যে ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে, সেখানেও বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেরা শেষ পর্যন্ত কতটুকু এবং কী মানের প্রশিক্ষণ পান এবং তা কতটা বাস্তবায়ন করেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়। মূলত তার ওপরই নির্ভর করছে আমাদের শিক্ষা কতটা জীবনঘনিষ্ঠ।



লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য।


ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com