শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবন
এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন
প্রকাশ: রোববার, ১৯ মার্চ, ২০২৩, ৪:০৯ পিএম আপডেট: ১৯.০৩.২০২৩ ৪:২০ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

.

.

“৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, 'আব্বা বালি চলো'। কি উত্তর ওকে আমি দিব।ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ওতো বোঝে না আমি কারাবন্দী। ওকে বললাম, “ তোমার মার বাড়ি তুমি যাও।আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।“ ও কি বু বুঝতে চায়! কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দু:খ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা। অন্য ছেলেমেয়েরা বুঝতে শিখেছে।কিন্তু  রাসেল এখনও বুঝতে শিখে নাই। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।“ ( কারাগারের রোজনামচা : পৃষ্ঠা-২৪)

১৭ মে ইতিহাসের মহানায়ক,বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মাত্র পঞ্চান্ন বছর বয়সে ইতিহাসের কলঙ্কজনক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার পঞ্চান্ন বছরের জীবনে প্রায় সাড়ে আট বছর জেলে কাটান। পাকিস্তানের তেইশ বছরের শাসনামলে ষোল বার কারাবন্দী হন। তিনি ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৮ সালে সর্বপ্রথম কারাবাস করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনে বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের জন্য অসীম ত্যাগ ও তার ৩০৫৩ দিনের জেল জীবন নবীন লেখক এ্যাডজুটেন্ট আসাদ মিলন তুলে ধরতে প্রয়াসী।

পাকিস্তান আমলে বাংলা ভাষার উপর শাসকগোষ্ঠীর আগ্রাসন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারে নাই।তিনি ১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মিছিলে নেতৃত্ব দেন এবং সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হন। ১১ই মার্চ থেকে ১৫ই মার্চ পর্যন্ত তিনি জেলে ছিলেন।একই বছর ১১ই সেপ্টেম্বর তিনি তৎকালীন সরকার কর্তৃক ফরিদপুরে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৪৯ সালের ২১ শে জানুয়ারি মুক্তি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবির প্রতি বঙ্গবন্ধু সমর্থন জানান এবং তাদের দাবি আদায়ের জন্য তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালের ১৯শে এপ্রিল থেকে ২৬শে জুন পর্যন্ত তিনি কারাবন্দী থাকেন। ১৯৪৯ সালের ১৪ই অক্টোবর দরিদ্র মানুষের খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল বের করেন ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি মাওলানা ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হকের সাথে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। তিনি ১৯৫২ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দুই বছর পাঁচ মাস জেলে কাটান।

১৯৫৪ সালে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয় কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চক্রান্ত করে একই বছর ৩০ মে ৯২ ক ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট সরকার বাতিল করেন। সেই সরকারের মন্ত্রী ছিলেন বঙ্গবন্ধু এবং ঔদিনই করাচী ফেরত বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৪ সালের ২৩শে ডিসেম্বর তিনি মুক্তি লাভ করেন।

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি হয়। সেনাপ্রধান আইয়ুব খান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত হন।

তৎকালীন সামরিক সরকার একই বছর ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু কে গ্রেপ্তার করেন। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৫৯ মোট ৪৩২ দিন জেলে থাকার পর তিনি মুক্তি লাভ করেন। কিন্তু জেলগেটে তিনি আবারও গ্রেফতার হন ফলে ১৯৬০ সালের ৭ই ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করে মুক্তি লাভ করেন।১৯৬২ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন এবং ১৮ই জুন মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন আগে তিনি আবারও গ্রেফতার হন।


১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঔতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। যা বাঙালির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকার্টা হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু ৬ দফায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করেন যার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। একের পর এক দাবি নিয়ে জনগণের অধিকারের কথা বলার কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৮ই মার্চ মধ্যরাতে গ্রেফতার হন এবং ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬১৯ দিন কারাবন্দী থাকেন।

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে রাষ্ট্রদ্রোহি মামলা করেন যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হিসেবে পরিচিত। ১৯৬৮ সালে ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে তাকে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দী করে রাখে এবং ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু মুক্তি লাভ করেন।১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এই ঘোষণার সাথে সাথেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেন।

১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারি মোট ২৮৯ দিন পাকিস্তান কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি বন্দী থেকে বাঙালি জাতির এই মহানায়ক মুক্তি লাভ করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ ও তার স্বজন প্রিয় বাঙালির মুক্তির জন্য নিজের জীবন আন্দোলন ও সংগ্রামে উৎসর্গ করে গেছেন।“ রক্ত বৃথা যায় না। যারা হাসতে হাসতে জীবন দিল,আহত হলো, নির্যাতন সহ্য করলো তাদের প্রতি এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদের প্রতি নীরব প্রাণের সহানুভূতি ছাড়া জেলবন্দি আমি আর কি করতে পারি! আল্লাহর কাছে এই কারাগারে বসে তাদের আত্মার শান্তির জন্য হাত তুলে মোনাজাত করলাম। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, এদের মৃত্যু বৃথা যেতে দেব না, সংগ্রাম চালিয়া যাবো।যা কপালে আছে তাই হবে। জনগণ ত্যাগের দাম দেয়। ত্যাগের মাধ্যমেই জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। “ ( কারাগারের রোজনামচা : পৃষ্ঠা-৭৪)।


লেখক: সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র‍্যাব-৯ শ্রীমঙ্গল ক্যাম্প।



ডেল্টা টাইমস্/আসাদ মিলন/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com