নুরজাহান বেগমের নিরাপদ মাতৃত্বের জননী হয়ে ওঠার গল্প
নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি:
|
![]() নুরজাহান বেগমের নিরাপদ মাতৃত্বের জননী হয়ে ওঠার গল্প শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নয়াবিল ইউনিয়নের রাতকুচি এলাকায় নুরজাহানের বাড়ি। তিনি বলেন, প্রায় ৫৫ বছর আগে বিয়ে হয়ে রাতকুচি এলাকায় এসেছিলেন তিনি। বিয়ের পর এক প্রতিবেশির সঙ্গে বাড়ি বাড়ি যেতেন তিনি। দেখে দেখেই নারীদের স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করানোর কাজটি তখন শিখেছিলেন। একসময় টাঙ্গাইলের মধুপুরে ব্র্যাকের সহায়তায় দুই মেয়াদে ধাত্রীসেবা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। নিজের বয়স হওয়ায় এখন তিনি অন্য নারীদের ধাত্রীর কাজটি শিখিয়েছেন। এ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি নারীর সন্তান প্রসবের ‘জননী’ হিসেবে কাজ করেছেন নুরজাহান। স্বামী মারা গেছেন প্রায় একযুগ আগে। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ের ঘরে ৬ জন নাতি-নাতনি আছেন। সবার প্রসব করিয়েছেন নুরজাহান বেগম নিজে। ধাত্রীসেবা দিতে গিয়ে তিনি বা এলাকার অন্য যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কোনো অর্থ নেন না। তবে এলাকায় রেওয়াজ আছে, যেদিন নবজাতককে প্রথম আঁতুড় ঘর থেকে বের করা হয়, সেদিন ওই পরিবার সাধ্যমতো দাওয়াতের আয়োজন করে। সেদিন ধাত্রীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। তখন কেউ কেউ খুশি হয়ে ধাত্রীকে নতুন শাড়ি উপহার দেন। এই রীতি এখনো গ্রামে আছে। নুরজাহান বলেন, একসময় গ্রামে নারীদের সন্তান প্রসবে তাঁরাই মূল ভূমিকা পালন করতেন। তখন গ্রামের যোগাযোগব্যবস্থা এখনকার মতো উন্নত ছিল না। মানুষজন উপজেলা সদরে কিংবা শহরে যাওয়ার চিন্তাও করত না। এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসূতি নারীদের গর্ভকালীন নানা পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে বাড়ির বদলে অনেকে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তবে অনেকেই আছেন, যাঁরা ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান প্রসবের কাজটি করিয়ে থাকেন। কেমন ছিল তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা? নুরজাহান জবাবে বলেন, নিজের গ্রাম তো আছেই, উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে তাঁকে নিয়ে যেত। দিন নেই, রাত নেই, যখন-তখন তাঁর ডাক পড়ত। তখন যোগাযোগব্যবস্থা ভালো ছিল না। বর্ষায় নৌকা আর হেমন্তে হেঁটেই যেতে হতো গ্রামগুলোতে। নুরজাহান জানান, এই গ্রামে বিয়ে হয়ে আসার পরের কয়েক বছর থেকে এ যাবত নিরাপদ মাতৃত্বের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। গ্রামের আরও কয়েকজন এ সেবা দেওয়ার কাজটি করছেন। তিনি তাঁদের পরামর্শ দেন। কখনো নিজে উপস্থিত থেকে অন্য ধাত্রীদের কীভাবে কাজটি করতে হয় সেটি শেখান। নুরজাহান বেগমের ছেলের বউ সুমি আক্তার জানান, তাঁর শাশুড়ি এই কাজে খুবই অভিজ্ঞ। এখনো জটিল কোনো সমস্যা দেখলে তাঁকে ডাকে লোকজন। তিনিও ছুটে যান। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বলেন, নুরজাহান বেগমকে এলাকার সবাই সম্মান করেন। তিনিও মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ডেল্টা টাইমস্/মো: হারুন অর রশিদ/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |