ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, তিন চিকিৎসকের সনদ বাতিলের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় জাকির হোসেন নামের এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অনৈতিক রিং বাণিজ্য ও অপচিকিৎসার দায়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম, ডা. শেখর কুমার মন্ডল ও ডা. রাশেদুল হাসান কনকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তার পরিবার। মঙ্গলবার (৬ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় ওই তিন জন চিকিৎসকের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) রেজিস্ট্রেশন বাতিলের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী নুরুন নাহার বলেন, গত ১২ মার্চ বুকে ব্যথা নিয়ে গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি হন জাকির হোসেন। ভর্তির পরেই ইসিজি করা হয়। সকাল বেলার ইসিজি রিপোর্টেই তার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানা যায়। তবে সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাশেদুল হাসান কনক সেটি ধরতে পারেননি। বিকেলে ৩টা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিয়ে ছাড়পত্র দিয়ে দেন তিনি। এমন কি একজন কার্ডিওলজিস্টও দেখানোর পরামর্শ দেননি। একই দিন সন্ধ্যায় বিআরবি হাসপাতালের গ্যাষ্ট্রোলজির চিকিৎসক মো. মাহবুবুল আলম প্রিন্সকে দেখালে উনি রোগীর ডায়াবেটিক ও বুকের ব্যথার বিষয়টি জেনে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞক দেখানোর পরামর্শ দেন। পরে একই হাসপাতালের ডা. শেখর কুমার মন্ডলকে (ক্লিনিক্যাল ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট) দেখালে তিনি রোগীর ইসিজি ও ইকো করান। এসব পরীক্ষার ফল দেখে রোগী ঘণ্টা দেড়েক এর বেশি বাঁচবে না জানান। একইসঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব রোগীর এনজিওগ্রাম করে হার্টে রিং পরাতে বলেন। পুনরায় গ্রীন লাইফে ভর্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও আমাদেরকে এক প্রকার ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। লিখিতভাবে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কথা বলা হলেও তিনি আমাদের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে আসতে বাধ্য করেন। এমনকি রোগী ভর্তি হওয়ার আগেই আমাদের সাথে কোন ধরনের পরামর্শ না করে বা আমাদের মতামত না নিয়ে রোগীকে রিং পরানো হয়। নুরুন নাহার বলেন, রোগীকে রিং পরানোর পরে হাসপাতালে পোস্ট অপেরেটিভ ম্যানেজমেন্ট করতে চরম অবহেলা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ডায়াবেটিস রোগী জানার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সারারাত ইনসুলিন না দিয়ে ফেলে রাখে। রাতে রোগীর সুগার কন্ট্রোল না করাতে রোগীর কিটোন বডি পজিটিভ চলে আসে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যন্ত্রপাতি না থাকা থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীকে সময়মত ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করতে পারেনি। ফলে মাল্টিপল অর্গান বিকল হয়ে গত ১৬ মার্চ রোগী মারা যান। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএমডিসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। দায়ীদের শাস্তির দাবিতে কলাবাগান থানায় জিডি করা হয়েছে। দুই মাস পর গণমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবারের সদস্যরা বলেন, রোগীর মৃত্যুর পর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক অভিযোগ করি। তারা আমাদের মৌখিক অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সাড়ে ছয় লাখের অধিক হাসপাতালের বিল ছাড়াই ১৬ মার্চ লাশ হস্তান্তর করেন। একই সাথে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায়। তারা তাৎক্ষণিকভাবে মৌখিক আদেশ ডা. শেখর ও কনককে বহিষ্কার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কোথাও জানায়। তবে তারা তাদের কথা না রাখায় আমরা আইনের দারস্থ হয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে তবে তারাও এখন পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি। এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. গোলাম আজম বলেন, রোগী জাকির হোসেনের হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত হওয়ার পর আমার সহকর্মী ডা. শেখর কুমার মন্ডলের অনুরোধে দ্রুততম সময় হাসপাতালে মধ্যে পৌঁছে রোগীকে ক্লিনিক্যালি পরীক্ষা করার পর ইসিজি এবং ব্লাড সুগার পর্যালোচনা করে প্রাইমারি পিসিআই এর পক্ষে মতামত প্রদান করি। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |