মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ আশ্বিন ১৪৩০

গণতন্ত্রের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
রায়হান আহমেদ তপাদার
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩, ৩:৫৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

.

.

দেশ ও জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ এবং চূড়ান্ত অনিষ্ট করার সামর্থ্য বা ক্ষমতা রয়েছে রাজনীতি ও রাজনীতিকদের। কোনো দেশের রাজনীতি যদি হয় নীতিহীন, পচনগ্রস্ত; তবে সে দেশটির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকেও সেই সংক্রমণ থেকে রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। একইভাবে, কিছু কিছু সীমাবদ্ধতার পরও, রাষ্ট্র পরিচালনব্যবস্থা হিসেবে পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। কিংবা হয়তো আছে, অধিকতর ও কার্যকর গণতন্ত্র। দায়িত্বশীলতা যার প্রধান ও অপরিহার্য শর্ত। মধ্যপ্রাচ্যে ২০১১ সালে আরব বসন্ত নামে যে গণবিক্ষোভ ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তন শুরু হয়েছিল এবং তার সূচনা ছিল তিউনিসিয়াতে। সেখান থেকে দাবানলের মতই গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল আরব বিশ্বের এক বিরাট অংশ জুড়ে, আর পরের কয়েক মাসে পতন ঘটেছিল ওই অঞ্চলের কয়েকটি শাসকচক্রের। কিন্তু তার ১০ বছর পর আজ সেই আরব বসন্তের সুতিকাগার তিউনিসিয়া পতিত হয়েছে গুরুতর সংকটে-যদিও সেই পটপরিবর্তনের পরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একমাত্র এই দেশটিই সাফল্য পেয়েছিল বলে মনে করা হয়। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের উত্তর আফ্রিকা সংক্রান্ত একজন বিশেষজ্ঞ রিকার্ডো ফ্যাবিয়ানি বলছেন, প্রেসিডেন্টের এসব পদক্ষেপ ২০১১ সালের বিপ্লব-পরবর্তী কালে তিউনিসিয়ার সবচেয়ে গুরুতর রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে যাবে তা অনিশ্চিত এবং প্রেসিডেন্ট সাইয়েদের পদক্ষেপকেও মনে হচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রার মত। কিন্তু তা সত্ত্বেও আরব বিশ্বে এ দেশটিকে দেখা হয় গণতন্ত্রের আলোক বর্তিকা হিসেবে বলছেন মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার একজন বিশেষজ্ঞ। এখানকার অন্য দেশগুলোর সাথে তুলনা করলেই আপনি এটা বুঝতে পারবেন, যেগুলোতে হয় গৃহযুদ্ধ, নয় তো একনায়কতান্ত্রিক শাসন চলছে।

তিউনিসিয়ায় আরব বসন্ত-পরবর্তীকালে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি, এবং এখানে যে সমস্যা চলছে তার একটা কারণ এটাই। গণতন্ত্রের হাত বাঁকা করার চেষ্টা কখনো ভালো ফল আনে না। আপনি যদি একবার এ কাজ করেন, তাহলে পরে আরো বেশি কিছু করার প্রলোভন তৈরি হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির কথা বলতে গেলে, বলতে হয়; সংসদের ভেতরেই হোক কিংবা বাইরে, বাংলাদেশের দুটি প্রধান দল ও তাদের জোটসঙ্গীদের সম্পর্ক সব সময় বিরোধিতা ও বৈরিতার। দেশের পাহাড়প্রমাণ সমস্যার মোকাবিলায় কোথাও দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার লেশমাত্র নমুনা দেখা যায় না। বরং সবকিছুর জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সমস্যার মূলে না গিয়ে ও তা সমাধানের চেষ্টা না করে, কিংবা মূল ইস্যু থেকে চোখ ফিরিয়ে বা তাকে পাশ কাটিয়ে, এভাবে একে অপরকে দোষারোপ করার, পাল্টাপাল্টির যে ভয়ংকর রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠেছে, তা দেশকে প্রকৃতই ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার কিংবা বিরোধী দলে যে অবস্থানেই থাকুন, আমাদের রাজনৈতিক নেতারাও যে কখনো কিছু দোষ করতে পারেন, তাঁদেরও যে কমবেশি ভুল হতে পারে, এটা তাঁরা মনে হয় বিশ্বাস করেন না। ফলে দোষ বা ভুল স্বীকারের, আত্মসমালোচনার এবং জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার সংস্কৃতি এ দেশে আজও গড়ে ওঠেনি। আর নেতারা যেখানে অভ্রান্ত, নির্দোষ, ফুলের মতো পবিত্র, সেখানে কর্মী-সমর্থকদের তো দোষ স্বীকারের প্রশ্নই ওঠে না। অথচ নেতা-নেত্রীদের মুখে যখন সামান্যও আত্মসমালোচনার কথা শুনেছে, দেশবাসী তা পছন্দ করেছে। এমনকি ওই দলটির প্রতি মানুষ সহানুভূতিও জানিয়েছে। দু-একবার নির্বাচনী ফলাফলেও যার প্রতিফলন ঘটেছে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলতে গেলে,বলতে হয়-এর জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বহীন রাজনীতিকরাই দায়ী।

স্বাধীনতার ৫১ বছর শেষ হয়েছে। এই ৫১ বছরে দেশের জনসংখ্যাসহ অবকাঠামোগত অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে যা আমাদের প্রত্যাশা ছিল কিন্তু সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়-দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে আশা জনগণ করেছিল তা না হয়ে রাজনীতি থেকে নীতি নৈতিকতা আজ নির্বাসিত। কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রো সোভিয়েত ধাঁচে নয় বরং নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতায় রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে এমন বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন, যা জনগণকে রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করেছে। লাতিন ভূখণ্ডে দ্বীপ এই রাষ্ট্রটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নয় বরং একত্রিত হয়ে নিরন্তর লড়াই করে চলছে। পঞ্চাশ বছর শাসনে ফিদেল কিউবার জনগণের কাছে কতটা প্রিয় নেতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন তা ক্ষমতা বর্হিভূত গত এক যুগের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা থেকে জানা যায়, বোঝা যায়। আধুনিক বিশ্বে রাষ্ট্রসমূহের অভ্যুদয় গত তিনশ বছরের মধ্যে ঘটেছে। তবে বেশিরভাগ রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে উনিশ এবং বিশ শতকে। স্বাধীনতার পর্বটি সংগঠিত হয়েছে পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে। মূলত ঔপোনিবেশিক শক্তির দখল থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় এসব ভূখণ্ডের মূল জনগোষ্ঠী আন্দোলন, সংগ্রাম এবং সশস্ত্র পন্থায় যুদ্ধ করে বিদেশিদের হটিয়েছে, স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে ব্রিটিশ উপনিবেশকে হটিয়ে। এর দক্ষিণে বিশাল ভূখণ্ডে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপীয় স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও ফরাসি দখলদারদের বিদায় জানিয়ে। ইউরোপে জার্মান ও ইতালি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে সংগ্রাম ও কূটনৈতিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। এসবই ঘটেছে আঠারো ও উনিশ শতকে।বিশ শতকে রুশ বিপ্লব,পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা, এশিয়ার পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত এবং সন্নিকটের বিশাল আফ্রিকা মহাদেশের ভূখণ্ডে নতুনভাবে উদিত হয়েছে স্বাধীন রাষ্ট্রব্যবস্থার। সব মিলিয়ে পৃথিবীতে এখন প্রায় দুইশ’র মত স্বাধীন রাষ্ট্র। এসব রাষ্ট্রের উত্থানে জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক নেতা, গোষ্ঠী ও শক্তির নেতৃত্ব ইতিহাসের এক অমোঘ নিয়মে পরিণত হয়েছে।

মানবসভ্যতার ইতিহাসে এই র্পবের রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সঙ্গে জনগণ ও নেতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য ছিল। এর আগে প্রাচীন ও মধ্যযুগে সীমিত সংখ্যক নগর রাষ্ট্র ও দখলদারি সাম্রাজ্যের উত্থানে জনগণের ইচ্ছাশক্তি ও অংশগ্রহণ মোটেও ছিল না। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রের চরিত্র ছিল ভিন্নতর। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও পরিচালনায় জনগণ ও নেতৃত্বের অপরিহার্যতা ইতিহাসের অনিবার্য নিয়মে পরিণত হয়েছে। সে কারণে প্রতিটি রাষ্ট্রের উত্থানের সঙ্গে বেশ কিছু দূরদর্শী নেতার ভূমিকা অন্যতম প্রধান র্শত হিসেবে কাজ করেছে। নেতারা আধুনিক রাষ্ট্র কী ও কেন, জাতীয় জীবনে এসব রাষ্ট্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজন কেন সেটি জনগণের মধ্যে ধারণা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন। সে কারণেই জনগণ অগ্রসর নেতৃত্বের পেছনে অংশ নিয়েছে, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ও যুদ্ধের মতো পরিস্থিতে অংশ নিয়েছে। এভাবেই আধুনিক সব রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ও স্বাধীনতা অর্জনে জনগণ ও নেতার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। প্রতিটি রাষ্ট্রই নেতৃত্বদানের জন্য অগ্রসর রাষ্ট্র চিন্তার নেতাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। জনগণের মধ্য থেকেই এই সব দেশপ্রেমিক নেতার আর্বিভাব ঘটেছে। বাইরের কোনো দেশ ও জাতির ভেতর থেকে এসব স্বাধীন রাষ্ট্রের নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। নেতা তৈরি হয় নিজ জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এই পর্বে সব রাষ্ট্রই এক বা একাধিক যোগ্য নেতৃত্ব লাভ করেছিল। তাদের অনুসরণে পরর্বতী সময়ে বেশিরভাগ স্বাধীন রাষ্ট্রে নেতৃত্বের ধারাবাহিক উত্থান ঘটেছে। তবে সব রাষ্ট্রই স্বাধীনতা, বিপ্লব ও যুদ্ধকালে যে ধরনের মেধাবী, যোগ্য ও আত্মউৎসর্গকৃত নেতৃত্ব পেয়েছিল পরর্বতী সময়ে সেই মান ও যোগ্য নেতৃত্বের ধারবাহিকতা সব সময়ে, সব রাষ্ট্রে অক্ষুণ্ণ থাকে নি। এর একাধিক ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। স্বাধীন রাষ্ট্রর্পবের বিকাশকে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে যোগ্য নেতৃত্বের সংকট ও অভাব প্রায় সব দেশেই কমবেশি ঘটেছে।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা লাভে জর্জ ওয়াশিংটনের নেতৃত্বের সাফল্য যতটা মহিমান্বিত হয়েছে, গত প্রায় আড়াইশ বছরের স্বাধীন পর্বে নেতৃত্ব দানে কেউ কেউ স্মরণীয় ভূমিকা রাখলেও অনেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক গৌরবকে নানা ধরনের প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। সিমন বলিভার একাধিক লাতিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, অন্য রাষ্ট্র সমূহের স্বাধীনতায় তিনি ছিলেন প্রেরণাদাতা। তারপরও বলিভারের শেষ জীবন কেটেছে কিছুটা অবহেলায়। অথচ বলিভার হচ্ছেন সেই নেতা যার নামে বলিভিয়া রাষ্ট্রের নামকরণ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সৌভাগ্য আর কোনো নেতার জীবনে ঘটেনি। ইউরোপে ইতালির একত্রীকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ম্যাৎসিনি, ক্যাভুর, রাজা ভিক্তর ও গ্যারিবল্ডির নাম। আর জার্মান রাষ্ট্রের সঙ্গে বিসমার্ক অমর হয়ে আছেন। ফরাসি বিপ্লবে অসংখ্য বিপ্লবী জড়িত থাকলেও ক্যুদেতা নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বিস্ময়কর নেতৃত্ব নিয়ে শুধু ফ্রান্সকেই নয় গোটা ইউরোপকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ শতকের শুরুতে লেনিনের নেতৃত্বে সংগঠিত রুশ বিপ্লব ছিল ইতিহাসের সাড়া জাগানো শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক নতুন ধাঁচের রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ঘটনা। তিনি এমন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যথার্থ মেধাসম্পন্ন, তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক সৃজনশীল নেতা ছিলেন। কিন্তু তার উত্তরসূরি নেতৃবৃন্দের কেউই জটিল এই রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অমরত্ব দানের আর্দশ ও সৃজনশীলতার চর্চায় সাফল্য দেখাতে পারেননি। ফলে সত্তর বছর পেরুতেই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কিউবা ব্যতীত অন্যত্র অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। কিউবায় ফিদেল কাস্ত্রো সোভিয়েত ধাঁচে নয় বরং নিজস্ব উদ্ভাবনী ক্ষমতায় রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্রে এমন বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন, যা জনগণকে রাষ্ট্রের সঙ্গে একাত্ম হতে সাহায্য করেছে। লাতিন ভূখণ্ডে দ্বীপ এই রাষ্ট্রটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে নয় বরং একত্রিত হয়ে নিরন্তর লড়াই করে চলছে। পঞ্চাশ বছর শাসনে ফিদেল কিউবার জনগণের কাছে কতটা প্রিয় নেতা হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন তা ক্ষমতা বর্হিভূত গত এক যুগের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা থেকে জানা যায়, বোঝা যায়।

এশিয়া মহাদেশ ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্ত হওয়ার কালে পেয়েছিল এক ঝাঁক জননন্দিত নেতাকে; যাদের মেধা, দেশপ্রেম ও প্রজ্ঞায় এশিয়ার স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের যাত্রা শুরু হয়। আমাদের ভারত বর্ষের ভূখণ্ডে গান্ধী, জিন্নাহ, নেহরু, আজাদ, সুভাষরা নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বাধীনতার জন্য। আমরা বাঙালিরা সেই নেতৃত্বের পর শেখ মুজিবকে পেয়েছি একজন বঙ্গবন্ধুরূপে-যিনি বাঙালির হাজার বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রচিন্তার সফল রূপায়ন ঘটিয়েছেন ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে। এরপর তিনি আমাদেরকে দিতে চেয়েছিলেন একটি শোষণহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা। যদিও গত শতকের পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তর দশকে স্বাধীন রাষ্ট্র লাভে অনেক যোগ্য নেতাই জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো সেই নেতাদের অনেকেই ষড়যন্ত্রের স্বীকার হলেন, কেউ কেউ নিহত হলেন, কেউ কেউ অপসারিত হলেন। নেতৃত্বের অভাবে সেই আন্দোলনের, স্বাধীন তৃতীয় বিশ্ব ব্যবস্থা এগুতে পারেনি। পৃথিবীতে এখন আর সেইসব বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর জীবিত নেই যেমনটি ছিলেন, টিটো, গামাল আব্দেল নাসের, ফিদেল, নেহরু, সুকর্ণ, বঙ্গবন্ধু, নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ।বলতে গেলে উন্নয়নশীল বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এখন নেতৃত্বের সংকট ও অভাবে বিচ্ছিন্নতায় ভুগছে। একুশ শতকের বিশ্ব আগের শতকের বিশ্ব থেকে অনেক বেশি পরিবর্তিত। এর যেমন রয়েছে বিকাশের অপার সম্ভাবনা, একই সঙ্গে রয়েছে উন্নয়ন, অগ্রগতিরই শুধু নয় টিকে থাকার ভয়ানক সংকটও। কেনো না পৃথিবী এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। অথচ এই সময়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন, জলবায়ু, বায়োটেকজনিত মানব ও প্রাণীজগতের অস্তিত্বের সংকট, ইকোসিস্টেমে ভারসাম্যহীনতা, নানা জটিল মহামারি ইত্যাদি সমস্যা মানবজীবনের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। এর উপর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও সমস্যাকে গবেষণা ও প্রজ্ঞার মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে না পারলে আগামী চার-পাঁচ দশকে পৃথিবীর অস্তিত্ব কতটা টিকে থাকবে-সেই আশঙ্কা পৃথিবীর অগ্রসর বিজ্ঞানীরা করছেন।


লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য।



ডেল্টা টাইমস্/রায়হান আহমেদ তপাদার/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com