মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ আশ্বিন ১৪৩০

সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
প্রকাশ: শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩, ৪:০১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন

সিরাজুল আলম খানের বর্ণাঢ্য জীবন

তিনি কখনও জনসম্মুখে আসতেন না। দিতেন না বক্তৃতা-বিবৃতি। আড়াল থেকেই ছিল তার তৎপরতা। বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ সিরাজুল আলম খান। যিনি দাদাভাই নামেও পরিচিত। শুক্রবার (৯ জুন) ৮২ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন তিনি। কিন্তু রেখে গেলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন।

১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে জন্মেছিলেন সিরাজুল আলম খান। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন সিরাজুল আলম খান। তারপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে। গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেয়ার পর তাকে ঢাবি থেকে বহিষ্কার করা হয় ‘কনভোকেশন মুভমেন্টে’ অংশগ্রহণ করার কারণে। থাকতেন ফজলুল হক হলে। প্রতিদিন রাত করে হলে ফিরতেন। ফলে হল থেকেও একবার বহিষ্কৃত হন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করায় তার পক্ষে মাস্টার্স করা সম্ভব হয়নি।
১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে ষাটের দশকের প্রথমার্ধে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সিরাজুল আলম খান : ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সিরাজুল আলম খান : ফাইল ছবি


ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা রাখেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সাথে বিরোধের জের ধরে ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাসদ (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর আন্দোলন-সংগ্রামের রূপ ও চরিত্র বদলে যায়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত ‘অভ্যুত্থান’ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এক ঘটনা। জাসদ গঠন এবং ‘অভ্যুত্থান’-এর নেপথ্য পরিকল্পনাকারী ছিলেন সিরাজুল আলম খান। আর এই দুটি বৃহৎ ঘটনার নায়ক ছিলেন মেজর জলিল, আ স ম আবদুর রব এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহের।

সিরাজুল আলম খান বিভিন্ন সময় প্রায় ৭ বছর কারাভোগ করেন। কনভোকেশন মুভমেন্টের কারণে ১৯৬৩ সালের শেষদিকে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে আবার গ্রেপ্তার এবং ১৯৭৯ সালে মুক্তি পান। ১৯৯২ সালের ২৪ মার্চ বিদেশ যাবার প্রাক্কালে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে সিরাজুল আলম খানকে গ্রেপ্তার করা হলে ৪ মাস পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পান।

সিরাজুল আলম খান গণিতের ছাত্র হলেও দীর্ঘ জেল জীবনে দর্শন, সাহিত্য, শিল্পকলা, রাজনীতি-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সমাজবিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, সামরিক বিজ্ঞান, মহাকাশ বিজ্ঞান, সংগীত, খেলাধুলা সম্পর্কিত বিষয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উপর গড়ে উঠে তার অগাধ পাণ্ডিত্য এবং দক্ষতা।



ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com