কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ট্রেন থেকে ফেলে দেন সৎবাবা
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
যশোরে রেললাইনের পাশ থেকে কিশোরীর মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সৎবাবা ধর্ষণের পর চলন্ত ট্রেনে শ্বাসরোধে হত্যা করে কিশোরীকে ফেলে দেন। ধর্ষণের কথা গোপন রাখতেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন তিনি। ওই কিশোরীর হত্যার মূল আসামি মিন্টু সরদারকে (৩৯) গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। নিহত কিশোরীর নাম আঁখি খাতুন (১৪)। তার বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা ইউনিয়নের দড়িয়াপুর গ্রামে। পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে যশোর সদরের সাতমাইল ও মথুরাপুরের মাঝামাঝি স্থানে রেললাইনের পাশে অজ্ঞাতপরিচয় কিশোরীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। তার মুখমণ্ডল রক্তাক্ত ছিল। খবর পেয়ে ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরে পুলিশ সেখান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে যশোর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই কিশোরীর ছবি দিয়ে পরিচয় শনাক্তের জন্য সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়। ফেসবুকে ছবি দেখে মহেশপুর থেকে এক ব্যক্তি নিহতকে শনাক্ত করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, কিশোরীর পরিচয় পাওয়ার পরে সন্দেহভাজন হিসেবে তার সৎবাবা মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মিন্টু পুলিশকে জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শনিবার আঁখিকে চৌগাছার বলুহ দেওয়ানের মেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন মিন্টু। মেলায় ঘোরাঘুরি শেষে রোববার যশোর শহরের রেলস্টেশন এলাকার বৈকালি হোটেলে একটি কক্ষে উঠেন। সেখানে আঁখিকে ধর্ষণ করেন মিন্টু। তিনি আরও বলেন, পরের দিন রাতে ট্রেনযোগে বাড়ি ফেরার সময় রাতে যশোর রেল স্টেশনের ঝোপঝাড়ের মধ্যে আঁখিকে আবারও ধর্ষণ করেন মিন্টু। এদিন রাত ১১ টার দিকে সীমান্ত এক্সপেসযোগে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চলন্ত ট্রেনে গলা টিপে হত্যা করে ট্রেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন সৎবাবা। এরপর তিনি বাড়িতে এসে কিশোরীর দুই পায়ের একজোড়া নুপুর একটি সিগারেটের প্যাকেট ঢুকিয়ে তার বসতঘরের পাশে আবর্জনার মধ্যে পুতে রাখেন। বেলাল হোসাইন বলেন, মিন্টুর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের আগের ঘরের সন্তান আঁখি। পরবর্তী সময়ে সেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলে মিন্টুকে বিয়ে করেন নুরজাহান। এর আগেও মিন্টুর দুই বিয়ে হয়েছিল। এর মধ্যে এক স্ত্রী মিন্টুকে ছেড়ে চলে যায়। অন্যজন মারা যান। মিন্টু ও নুরজাহানের সংসার একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। আঁখি খুনের ঘটনায় তার মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে খুলনা রেলওয়ে থানায় মামলা করেছেন। মিন্টু দিনমজুরের কাজ করেন। এদিকে অভিযুক্ত আসামি মিন্টুকে সংবাদ সম্মেলনে আনলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনুতপ্ত হয়ে বলেন, আমি জীবনে বড় ভুল করেছি। আমার মেয়েকে মেলাতে ঘোরানোর কথা বলে খারাপ কাজ করেছি। তাকে দুইবার ধর্ষণ করেছি। এমন ভুল জীবনে আর করব না। আমার মতো এই ভুল যেন কেউ না করে। এই কথা ভাবতে গেলে আমি কিছু খেতেও পারছি না। কীভাবে কী করে ফেললাম ভাবতে পারছি না। মারার সময় মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- পুলিশ পরিদর্শক মামুন খান, জেলা ডিবি (ওসি) রুপন কুমার সরকার, ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম প্রমুখ। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |