চন্দ্রাভিযানে যুক্ত কিছু কর্মী বেতন না পেয়ে চা-ইডলি বিক্রি করছেন
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
![]() চন্দ্রাভিযানে যুক্ত কিছু কর্মী বেতন না পেয়ে চা-ইডলি বিক্রি করছেন সেই একই সময়ে তার এক সহকর্মী মধুর কুমার মোমো বেচছিলেন, আর আরেক সহকর্মী প্রসন্ন ভাই চায়ের দোকানে খদ্দের সামলাচ্ছিলেন। অথচ এই দীপক উপরারিয়া, মধুর কুমার বা প্রসন্ন ভাইয়েদেরও সফল চন্দ্রাভিযানের জন্য কিছুটা হলেও তো অভিনন্দন প্রাপ্য ছিল, কারণ এদের কারখানাতে তৈরি লঞ্চপ্যাড থেকেই উৎক্ষেপিত হয়েছিল চন্দ্রযান-৩, আর তারও আগে চন্দ্রযান-২। কিন্তু অভিনন্দন তো দূরস্থান, বিগত ১৮ মাস ধরে সরকারি কর্মচারী হয়েও তারা বেতনই পান না, তাই বাধ্য হয়ে ইডলি, মোমো বা চায়ের দোকান খুলেছেন তারা। এরা সবাই কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন, এইচইসির কর্মী। দেড় বছর ধরে বকেয়া বেতনের জন্য আন্দোলন করছেন সংস্থাটির প্রায় তিন হাজার কর্মী। এইচইসি-র টেকনিশিয়ান দীপক কুমার উপরারিয়ার দোকানটা রাঁচির ধুরওয়া এলাকায় পুরণো বিধানসভা ভবনের ঠিক সামনে। সকাল সন্ধ্যায় উপরারিয়া ইডলি বিক্রি করছেন, আর দুপুরে অফিস যাচ্ছেন। বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, “প্রথম কিছুদিন ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সংসার চালিয়েছি। তাতে প্রায় দুই লাখ টাকা বিল হয়ে গেল, আমাকে ঋণখেলাপী ঘোষণা করে দিল। তারপর আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার দেনা করছিলাম। এখনও অবধি চার লাখ টাকা ধার করেছি। ধার শোধ করতে পারি না, তাই কেউ আর এখন ধার দিতে চায় না। কিছুদিন স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখেও সংসার চালিয়েছি। “একটা সময় মনে হচ্ছিল না খেয়েই মারা যাব। তখনই মাথায় এল ইডলির দোকানের ব্যাপারাটা। আমার স্ত্রী খুব ভাল ইডলি বানায়, আর আমি বেচি। এখন তিন-চারশো টাকার ইডলি বিক্রি করছি প্রতিদিন। দিনের শেষে ৫০-১০০ টাকা লাভ হচ্ছে, তাই দিয়েই ঘর চালাচ্ছি,” বলছিলেন উপরারিয়া। অথচ তিনি ২০১২ সালে এক বেসরকারি সংস্থার ২৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে সাড়ে আট হাজার টাকায় এই সরকারি সংস্থার চাকরিতে ঢুকেছিলেন। ভেবেছিলেন সরকারি চাকরি, ভবিষ্যত সুনিশ্চিত থাকবে। কিন্তু এখন সামনে শুধুই ধোঁয়াশা। দুই মেয়ে তার, দুজনেই স্কুলে পড়ে। এবছর এখনও পর্যন্ত মেয়েদের স্কুলের ফি দিতে পারেন নি তিনি। স্কুল থেকে মাঝে মাঝেই নোটিস পাঠায়। “জানেন, সবার কাছে অপমানিত হতে হয়। মেয়েদের স্কুলে ক্লাস টিচার বলেন এইচইসি-র বাবা মায়েদের বাচ্চারা সবাই উঠে দাঁড়াও। মেয়ে দুটো কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে। ওদের কাঁদতে দেখে আমার বুকটা ফেটে যায়, কিন্তু ওদের সামনে চোখের জল ফেলি না,” বলছিলেন উপরারিয়া। এতটুকু বলে আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না দীপক উপরারিয়া। এই পরিস্থিতি শুধু দীপক উপরারিয়ার নয়। এইচইসি সংস্থার আরও অনেকেই এইভাবে রোজগারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ![]() চন্দ্রাভিযানে যুক্ত কিছু কর্মী বেতন না পেয়ে চা-ইডলি বিক্রি করছেন মধুর কুমার মোমো বিক্রি করছেন আর প্রসন্ন ভাই চা। মিথিলেশ কুমার ফটোগ্রাফি করছেন আর সুভাষ কুমার অনেক আগে গাড়ি কেনার জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা পরিশোধ না করতে পারায় ব্যাঙ্ক তাকে ঋণ খেলাপি ঘোষণা করে দিয়েছে। সঞ্জয় তির্কির মাথায় ছয় লক্ষ টাকা ঋণের বোঝা চেপেছে। টাকা যোগাড় না করতে পারায় শশী কুমারের মায়ে ঠিকমতো চিকিৎসা করানো যায় নি, মা মারা গেছেন। ওই সংস্থার ২৮০০ কর্মী, পরিবার পিছু পাঁচ জন করে হলে সরাসরি ১৪ হাজার মানুষ এই মহাসঙ্কটে পড়েছেন। কেন বন্ধ বেতন? রাজ্যসভার সংসদ সদস্য পরিমল নাথওয়ানি এবছরের বর্ষাকালীন অধিবেশনে, আগস্ট মাসে ভারী শিল্প মন্ত্রকের কাছে এইচইসি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। জবাবে সরকার বলেছে যে এইচইসি কোম্পানি আইনের অধীনে নিবন্ধিত একটি পৃথক এবং স্বাধীন সংস্থা। কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য সংস্থাটিকেই নিজস্ব সংস্থান তৈরি করতে হবে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে বিশাল আর্থিক দায়ের মুখে পড়তে হয়েছে কোম্পানিটিকে। ভারী শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এইচইসি গত পাঁচ বছর ধরে ক্রমাগত লোকসান দিয়ে আসছে। ২০১৮-১৯ সালে সংস্থাটির লোকসান হয়েছিল ৯৩.৬৭ কোটি টাকা, আর সেটাই ২০২২-২৩ সালে দাঁড়িয়েছে ২৮৩.৫৮ কোটি টাকায়। শুধুমাত্র কর্মচারীদের বেতন দিতেই এইচইসির প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা প্রয়োজন। এছাড়াও, বিদ্যুৎ বিল এবং কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী সিআইএসএফ-এর বকেয়া পরিশোধের জন্য প্রায় ১২৫ কোটি টাকা দরকার। এইচইসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এইচইসির মোট দায় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার। সূত্র: বিবিসি ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |