ইনশাআল্লাহ না বলায় যে পরিণতি হয়েছিল সোলাইমান (আ.)-এর
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
ইনশাআল্লাহ একটি ইসলামি পরিভাষা। এর অর্থ হলো- আল্লাহ যদি চান। ভবিষ্যতে কোনো কাজের আগ্রহ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ বলা ইসলামের শিক্ষা। ইনশাআল্লাহ না বললে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। কারণ আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই। এমনকি একিদন জীবিত থাকার গ্যারান্টিও কোনো বান্দার নেই। সেখানে বান্দা কীভাবে ইনশাআল্লাহ উচ্চারণ ছাড়াই ভবিষ্যতের কথা বলতে পারে?
ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতাপশালী ও ক্ষমতাধর বাদশাহ হজরত সোলাইমান (আ.) একবার ইনশাআল্লাহ না বলার কারণে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। এ সম্পর্কে সহিহ বুখারিতে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, একদা দাউদ (আ.)-এর পুত্র সুলাইমান (আ.) বলেছিলেন, ‘নিশ্চয়ই আজ রাতে আমি আমার একশ’ স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হব এবং তাদের প্রত্যেকেই একটি করে পুত্র সন্তান প্রসব করবে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এ কথা শুনে একজন ফেরেশতা বলেছিলেন, আপনি ’ইনশাআল্লাহ’ বলুন; কিন্তু তিনি তা ভুলক্রমে বলেননি। এরপর তিনি তার স্ত্রীগণের সঙ্গে মিলিত হলেন; কিন্তু তাদের কেউ কোনো সন্তান প্রসব করল না। কেবল একজন একটি সন্তান প্রসব করল, তা-ও অপূর্ণাঙ্গ। (এ সম্পর্কে) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যদি সোলাইমান (আ.) ’ইনশাআল্লাহ’ বলতেন, তাহলে তাঁর শপথ ভঙ্গ হত না। আর তাতেই ভালোভাবে তার আশা মিটত। (সহিহ বুখারি: ৫২৪২, ৩৪২৪, ৭৪২৯) এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে সোলাইমান (আ.) বিশ্বের সর্বাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন বাদশাহ হলেও আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছুই করার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। সুতরাং তাঁর ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলে যাওয়াটা আল্লাহর কাছে ছোটখাট কোনো অপরাধ নয়। এ ঘটনায় এটাও স্পষ্ট হয় যে যারা যত বড় পদাধিকারী হবেন তাদের ততবেশি আল্লাহর অনুগত হতে হবে এবং সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। সর্বদা বিনীত হয়ে চলতে হবে। একবার আমাদের প্রিয়নবী (স.)-ও ইনশাআল্লাহ না বলার কারণে কষ্ট পেয়েছিলেন। এ ঘটনা বর্ণনায় মুফাসসিরগণ বলেন যে, একবার ইহুদিরা নবী (স.)-কে তিনটি কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। আত্মার স্বরূপ কী এবং গুহার অধিবাসী ও জুলকারনাইন কে ছিল? নবী (স.) বললেন, আমি তোমাদেরকে আগামীকাল উত্তর দেব। কিন্তু এরপর ১৫ দিন পর্যন্ত জিব্রাইল (আ.) ওহি নিয়ে এলেন না। এতে নবীজির কষ্ট হয়েছিল। অতঃপর যখন এলেন, তখন মহান আল্লাহ ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার নির্দেশ দিলেন। বললেন- ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার সংকল্প করলে, অবশ্যই ‘ইন শা-আল্লাহ’ বলে নেবেন। কেননা, মানুষ তো জানেই না যে, ভবিষ্যতে কোনোকিছু করার তাওফিক আল্লাহ তাকে দেবেন কি দেবেন না। (তাফসির, সুরা কাহাফ: ২৩-২৪) এ ঘটনার পর থেকে নবীজি (স.) ও সাহাবায়ে কেরাম কাজ শুরুর আগে কখনও ইনশাআল্লাহ বলতে ভুলতেন না। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে এই শব্দটি ব্যবহার করার অনেক ফজিলত রয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, নবীজি (স.) বলেন, কেউ ইনশাআল্লাহ বলে কোনো কসম করলে তার গুনাহ হবে না। ( তিরমিজি: ১৪৫১) ভাবুন বন্ধুরা যদি নবীদের ক্ষেত্রে ইনশাআল্লাহ না বলায় মহান আল্লাহ এতটা নারাজ হতে পারেন তাহলে আপনার আমার মতো গুনাহগার বান্দার উপর আল্লাহ কতটুকু অসন্তুষ্ট হতে পারেন? হয়ত এই ইনশাআল্লাহ না বলার কারণে আমাদের আশাগুলো পূরণ হয় না বা হচ্ছে না। আমাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই সকল পরিকল্পনা, আশাপোষণ, ফিউচার প্ল্যানিং সবক্ষেত্রে আল্লাহ যেন আমাদের ইনশাআল্লাহ বলার তাওফিক দেন। সবাই বলি আমিন। ডেল্টা টাইমস/সিআর/জেএইচ |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |