আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও ভোটাধিকার
আশিকুর রহমান
|
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পেয়ে সরকার নির্বাচিত হয়। জনগণ তাদের এ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন করে থাকে। অর্থাৎ, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান ভোটাধিকার থাকে। আব্রাহাম লিংকনের মতে, গণতান্ত্রিক সরকার হলো সেই সরকার, যে সরকার জনগণেরই সরকার, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার এবং জনগণের জন্যই গঠিত সরকার। তত্ত্বগতভাবে, গণতন্ত্রে জনগণের মতামত ও সংগঠনের অবাধ অধিকারকে স্বীকার করা হয়। এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনাকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এটি স্বাভাবিক ব্যাপার হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ভিন্ন। কেননা, বিগততে দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত ১৯৭৩, ১৯৭৯, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনগুলোতে দলীয় সরকারই পুনরায় সরকার গঠন করেছিল, যদিও সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে রাজনৈতিক মহল ও জনসাধারণের মাঝে নানাবিধ প্রশ্ন রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। সংবিধানে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের কথা স্পষ্ট বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ- ৭(১) এ সংবিধানের প্রাধান্যের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে। অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয়, তাহলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হবে। ভোটপ্রদানের অধিকার কোনো সাংবিধানিক বা মৌলিক অধিকার নয়। বরং এটি একটি রাজনৈতিক ও আইনদ্বারা সৃষ্ট অধিকার। সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ অনুসারে, বাংলাদেশ একটি গণতন্ত্র এবং এখানে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য সকল প্রকার জাতীয় সংসদ এবং স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনগুলোতে সুস্থ মস্তিষ্কের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক তথা ভোটারদের ভোটদানের অধিকার আইনদ্বারা সৃষ্ট। প্রতিটি নাগরিক ভোটপ্রদানের অধিকার রাখে। যখন কোনো নাগরিককে ভোটপ্রদানে নিষেধ বা বাধা দেওয়া হয় তখন তার আইনগত অধিকার লঙ্ঘন হয়। তবে নাগরিকের এই ভোটাধিকার প্রয়োগে কেউ বাধা দিলে আইন এর প্রতিকার দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তথা নাগরিক আইনগত অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করতে পারবে। এর অন্যতম নজির হিসেবে আশবি বনাম হোয়াইট (১৭০৩) মামলা উল্লেখযোগ্য। এই মামলায় বিবাদী একজন রিটার্নিং অফিসার ছিলেন। তিনি ভোটকেন্দ্রে বাদীকে ভোটদানে বাধা দেন। বাদীর প্রার্থী পরবর্তীতে জয়লাভ করে। তথাপি বাদী তার আইনগত অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলার রায়ে আদালত সিদ্ধান্ত দেয় যে, বিবাদী দায়ী হবে, যদিও বাদীর আর্থিক ক্ষতি হয়নি কিন্তু আইনগত অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। একজন নাগরিকের ভোটাধিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কতটা গুরুত্ব বহন করে তা উক্ত মামলা পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। গণতন্ত্রের প্রথম ধাপ হলো রাষ্ট্রের নাগরিকের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা। যে রাষ্ট্র নাগরিকের সুষ্ঠু ভোটপ্রদান নিশ্চিত করতে পারে না সে রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক হয় না। তাছাড়া একটি নির্বাচন একটি দেশ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করে দেশের ভবিষ্যৎ কাঠামো ও শাসনব্যবস্থা। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, এই নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে আগামী পাঁচ বছরের শাসনব্যবস্থা কিরুপ হবে। তাই নির্বাচনে সরাসরি অংশ নিয়ে প্রত্যক্ষ ভোটদানের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রত্যেক নাগরিককে ভোটপ্রদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। ক্ষমতাসীন দলের কাছে জনসাধারণের দাবি তারা যেন ৭ জানুয়ারি মুক্ত ও স্বাধীনভাবে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ সুনিশ্চিত করেন। এছাড়া গণমাধ্যমগুলোতে জোড় করে কেন্দ্র দখল করা, জাল ভোট দেয়া, ভোটারদের হুমকি বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন দণ্ডনীয় অপরাধ এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচার-প্রচারণার প্রসার ঘটানো অতীব জরুরি। এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কার্যকর ও সচল করার সম্ভাবনা তৈরি এবং সেইসাথে ‘উইল অব দ্য পিপল’ তথা জনগণের মতামতের ভিত্তিতে ক্ষমতার পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ডেল্টা টাইমস/সিআর/এমএনবি |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |