৫ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীকে অবসর সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত ৫ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীকে অবসরের ৬ মাসের মধ্যে অবসরকালীন সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে এক রিটের রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্যাহ মিয়া। তিনি আদেশের বিষয়টি ঢাকা মেইলকে জানিয়েছেন। রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, এটা চিরন্তন সত্য যে শিক্ষকদের রিটায়ারমেন্ট (অবসরকালীন) বেনিফিট (সুবিধা) পেতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয়। এই হয়রানি থেকে তারা কোনোভাবেই পার পান না। একজন প্রাথমিকের শিক্ষক কত টাকা বেতন পান, সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। এজন্য তাদের অবসরভাতা ৬ মাসের মধ্যে দিতে হবে। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক জারি করা প্রজ্ঞাপন, ২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল ‘এস, আরও নং ৮৮-আইন/২০১৭’ এবং ‘এস, আরও, নং-৮৯-আইন/২০১৭’ সংশোধনী/প্রজ্ঞাপন/গেজেট সমূহের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং নতুন একটি প্রবিধানমালা জারি করে শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরের ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে কর্তনকৃত ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ সর্বমোট ১০ শতাংশ অর্থের বিপরীতে সুবিধা প্রদান করার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট পিটিশনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়। আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট প্রবিধানমালা, ১৯৯৯ এর প্রবিধান-৬ এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা প্রবিধানমালা, ২০০৫ এর প্রবিধান-৮ অনুযায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কর্তনের বিধান ছিল। যার বিপরীতে শিক্ষকদের ট্রাস্টের তহবিল হইতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হতো। বিজ্ঞাপন কিন্তু বিগত ১৯ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ তারিখে উল্লেখিত প্রবিধানমালাগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কর্তনের বিধানগুলো সংশোধন পূর্বক ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ করে ‘এসআরও নং ৮৮-আইন/২০১৭’ এবং এসআরও নং-৮৯-আইন/২০১৭’ মূলে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যাতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ২ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ কর্তনের পরিবর্তে ৪ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ কর্তনের বিধান করা হলেও উক্ত অতিরিক্ত অর্থ কর্তনের বিপরীতে শিক্ষক ও কর্মচারীদের কোনো বাড়তি আর্থিক সুবিধার বিধান করা হয়নি। পরবর্তীতে বিগত ১৫ এপ্রিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ১৯ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের সংশোধনী অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারীদের এপ্রিল/২০১৯ মাসের বেতন হতে ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা যথাক্রমে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টে জমা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন। যার ফলে অতিরিক্ত অর্থ কর্তনের বিপরীতে কোন আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি না করেই শিক্ষক ও কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ টাকা কর্তনের আদেশের কারণে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫ (পাঁচ) লক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে ক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত অর্থ কর্তনের আদেশ বাতিল করার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে তারা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। তাতেও কর্তৃপক্ষ নীরব থাকলে, শিক্ষক ও কর্মচারীরা ১৫ এপ্রিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক জারি করা প্রজ্ঞাপনটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। রিট পিটিশনটির প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ১৫ এপ্রিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনটি কেন অবৈধ হবে না তা জানতে চেয়ে বিবাদীদের প্রতি ৪ সপ্তাহের রুল জারি করেন। পরবর্তীতে বিগত ৩১ আগস্ট ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে রিটকারীরা ১৯ এপ্রিল ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ তারিখের এসআরও নং ৮৮-আইন/২০১৭’ এবং এসআরও, নং-৮৯-আইন/২০১৭’ সংশোধনী/প্রজ্ঞাপন/গেজেট সমূহের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং নতুন একটি প্রবিধানমালা জারি করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরের ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে কর্তনকৃত ৬ শতাংশ এবং ৪ শতাংশ সর্বমোট ১০ শতাংশ অর্থের বিপরীতে সুবিধা প্রদান করার নির্দেশনা চেয়ে সাপ্লিমেন্টারি রুলের জন্য আবেদন দাখিল করেন। ওই আবেদনের শুনানির পর বিচারপতি জাফর আহমেদ এবং বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিবাদীদের প্রতি চার সপ্তাহের রুল জারি করেন। সেই রিটের চুড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতনের ১০ শতাংশ কর্তনের বিপরীতে আর্থিক ও অবসর সুবিধা অবসরের ৬ (ছয়) মাসের মধ্যে প্রদানের নির্দেশনা দিয়ে রায় প্রদান দেন। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |