বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে মূল চ্যালেঞ্জ হলো অপরাধীদের গ্রেপ্তার
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি:
|
বাংলাদেশে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্য দমনে মূল চ্যালেঞ্জ হলো বন্যপ্রাণী অপরাধীদের গ্রেফতার এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনায় জটিলতা। ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যের প্রায় ৩০% ঘটনায় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। এরমধ্যে ২০% এরও কম ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাংলাদেশের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদালতে দায়েরকৃত প্রায় ৪শো মামলার এক চতুর্থাংশের চূড়ান্ত রায় দিতে আদালতের গড়ে আট বছর সময় লেগেছে। বাকি মামলা এখনো পেন্ডিং রয়েছে। এসব মামলায় শাস্তিও তুলনামূলক ভাবে কম ছিলো যা গড়ে এক বছরের নীচেয় জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। রোববার (৩ মার্চ) সকালে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে মোংলায় ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার আয়োজনে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। “পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য প্রাণীকূল বাঁচাই” শ্লোগানে চালনা বন্দর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে সুন্দরবনের মহাবিপন্ন, বিপন্ন ও সংকটাপন্ন বন্যপ্রাণী সুরক্ষা এবং বন্যপ্রাণী অপরাধ দমনের দাবিতে সমাবেশ, র্যালি, মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। রোববার সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত র্যালি, সমাবেশ ও মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ’সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’ এর সমন্বয়কারী পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ। এসময়ে বক্তব্য রাখেন চালনা বন্দর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকন উদ্দিন, শিক্ষক নেতা শরিফুল ইসলাম, ’ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)’ এর নেতা আব্দুর রশিদ হাওলাদার, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ’র কমলা সরকার, পরিবেশকর্মী মো: আলম গাজী, হাছিব সরদার, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার শেখ রাসেল প্রমূখ। বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসের কর্মসুচিতে বক্তারা আরো বলেন, সুন্দরবনের বাঘ, হরিণ, ভোদড়, হাঙ্গর, ইরাবতি ডলফিন, শুশুক, কচ্ছপ, শকুন, শাপলাপাতা মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী আজ মহাবিপন্ন, বিপন্ন ও সংকটাপন্ন তালিকার অন্তর্ভূক্ত। জাতিসংঘের আইইউসিএন, ১৮৩টি দেশ স্বাক্ষরিত সাইটিশ চুক্তি ও বন্যপ্রাণী আইন সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুযায়ি বাংলাদেশের ৪৩টি স্থলচর স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৮৪টি পাখি, ৫০টি সরীসৃপ, ১৬টি বাদুড়/শাপলাপাতা মাছ, ১২টি হাঙ্গর/কামুট এবং ২টি উভচর প্রাণী মহাবিপন্ন, বিপন্ন এবং সংকটাপন্ন তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মোঃ নূর আলম শেখ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ১৮ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ”রাস্ট্র পরিবেশ রক্ষা ও উন্নতি বিধান এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণী বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অক্ষুন্ন রাখবে ও নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকবে। সভাপতির বক্তব্যে মোঃ নূর আলম শেখ আরো বলেন বন্যপ্রাণীর অবেধ বাণিজ্য দুর্নীতি বিস্তার করে, সেই সাথে আইনের শাসন এবং বন্যপ্রাণী ও বন্য পরিবেশের পাশে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। তিনি আরও বলেন চোরাকারবারি, মুনাফালোভী ব্যবসা-বানিজ্য, বাঘ-হরিণসহ বন্যপ্রানী হত্যা, বৃক্ষ নিধন ও বিষপ্রয়োগে মাছ নিধন বন্ধ করতে না পারলে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীর অস্তিত্ব টিকে থাকবেনা। সমাবেশ-মানববন্ধন ও র্যালি শেষে রবিবার দুপুরে মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ হাবিবুর রহমানের মাধ্যমে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ডেল্টা টাইমস্/আলী আজীম/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |