‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খলা’
ডিএমপির নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর অনুষ্ঠান
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) বরাবর একটি চিঠি দেয় বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। তবে সরকার নির্ধারিত সময়ের পর অনুষ্ঠানের অনুমতি চাওয়ায় ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। পরে নির্দেশনা উপেক্ষা করেই তারা গতকাল রোববার শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করে। অনুমতি না থাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানটি সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সরকারের বেঁধে দেওয়া সময় মানেনি তারা। সময় সংকোচনের নির্দেশনার মধ্যেই ‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খলা’ শিরোনামে সন্ধ্যায় শাহবাগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হওয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার দিকে শেষ করে। গতকাল রোববার ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে রাজধানীর রমনা বটমূলে মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছায়ানট। শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠান করে রিজিস শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সামনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এবং জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী। অন্য সংগঠনগুলোর মতো উদীচীও অনুষ্ঠানের আগেই ডিএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করে অনুমতি নেয়। কিন্তু তারা নির্ধারিত সময়ের পরে অনুষ্ঠান করার আবেদন করে। পরে ডিএমপির পক্ষ থেকে একটা চিঠিতে তাদেরকে এ আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়। নববর্ষের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, হাতিরঝিল, রবীন্দ্র সরোবরসহ বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করতে হবে। অপরদিকে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বর্ষবরণের সব আয়োজন বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ করা হবে। এদিকে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকায় সকালে একক কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেনি। সাংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। তবে সারাদেশে ৫০টি জেলায় তাদের একক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পরে ‘বর্ষবরণ মানে না শৃঙ্খলা’ শিরোনামে সন্ধ্যায় সারাদেশে আবার উদীচী শিল্পীরা প্রতিবাদী অনুষ্ঠান আয়োজন করে। উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে ডিএমপি কমিশনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া বিষয় না। বিষয়টি হচ্ছে, একটি স্থানে অনুষ্ঠান করবে উদীচী এটা জানানোর জন্য চিঠি দেওয়া। ডিএমপির পক্ষ থেকে পাল্টা চিঠি দিলে সেটা আমলে না নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। আমাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিল, পুলিশ অনুষ্ঠানে বাধা দিলেও আমরা আমাদের শক্তি দিয়ে অনুষ্ঠান চালিয়ে যাবো। তবে পুলিশ এতে বাধা দেয়নি, তারা শেষ করার জন্য বারবার বলেছে। তিনি বলেন, গত ১০ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার বরাবর দেওয়া চিঠিতে বিকেল ৫টায় শাহবাগে কর্মসূচি করার কথা বলা হয়। তবে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে গণমাধ্যমে প্রেস রিলিজ পাঠানো হয়েছে। উদীচীর বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে হামলার পর থেকে ঢাকায় একক কোনো অনুষ্ঠান করে না সংগঠনটি। তবে ছায়ানটের অনুষ্ঠানকে মৌলবাদীরা সমর্থন দেয়। এতে তাদের অনুষ্ঠানকে সমর্থন দিয়ে আসছে উদীচী। অমিত রঞ্জন দে বলেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতেই সময় সংকোচনসহ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি নাটিকা পরিবেশন করেন শিল্পীরা। এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন হাবিবুল আলম, হরেকৃষ্ণ দেবনাথ ও সাজেদা বেগম। দ্রুত অনুষ্ঠান শেষ করার কথা পুলিশের পক্ষ বলা হলেও বাধার মুখে পড়তে হয়নি। ব্যক্তিগত মতামত উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের যখন জনভিত্তিক থাকে না। তখন সরকার পাওয়ার প্লে করা কোনো জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের উপরে ভর করে। সরকার এ সময় জনসম্পৃক্ততা অনুষ্ঠানগুলোতে কঠোর কঠোর সিদ্ধান্ত নেই। যখন সে জনবান্ধব থাকে তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |