কোটা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞাপন রোববার (৭ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে ষোলশহর স্টেশন থেকে মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি চারটা ২০ মিনিটে এসে নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় আসলে সেখানেই বসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা, ১৮’র হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার, দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছেন। বিজ্ঞাপন এর আগে, বিকেল সোয়া তিনটায় ষোলশহর স্টেশন এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে বৈষম্য কখনও মানা যায় না। সরকারি চাকরিতে কোটা থাকলে মেধার মূল্যয়ন হবে না। আমরা কোনো বৈষম্য মানি না। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমরা ওয়াসা মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেব।’ এর আগে শুক্রবার (৫ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন। বিজ্ঞাপন ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার। ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়। ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। বিজ্ঞাপন রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |