বিশেষ আইনে বিদ্যুত ও জ্বালানির সম্পাদিত চুক্তি পর্যালোচনার দাবি সিপিডির
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
বিদ্যুৎ, জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইন বাতিল করে ওই আইনের অধীনে সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করার দাবি জানিয়েছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ। রোববার (১৮ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ দাবি জানান। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার কথা বলে ২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বিধান বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আইন’ প্রণয়ন করে সরকার। শুরুতে দুই বছরের জন্য আইনটি করা হলেও পরে ২০১২ সালে ২ বছর, ২০১৪ সালে ৪ বছর, ২০১৮ সালে ৩ বছর এবং সর্বশেষ ২০২১ সালে ৫ বছরের জন্য এর মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। আইনটির ৯ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অধীন কৃত বা কৃত বলিয়া বিবোচিত কোনো কার্য, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের নিকট প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’ তিনি আরও বলেন, চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১০০ দিনের বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সিপিডি। এ সময় বলা হয়, উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে বছরে পিডিবির ক্ষতি হচ্ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি এবং বেসরকারি কোম্পানির কাছে বকেয়া বিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বিজ্ঞাপন মোয়াজ্জেম বলেন, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ৩৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকার বাড়তি বোঝা টানতে হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথমে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের সংস্কারে মনোনিবেশ করতে হবে। সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ এবং ক্রয় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এই সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বিশেষ আইন ২০১০ বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, ‘পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের সঙ্গে তাদের শুল্ক পুনর্নির্ধারণের জন্য পুনরায় আলোচনা করা, বিশেষ করে যেসব কোম্পানিতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রয়েছে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যূনতম সময় পার করেছে। সিপিডি পরিচালক বলেন, তৃতীয় পদক্ষেপ হতে হবে, যেসব কোম্পানি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির জন্য অযাচিতভাবে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) বাতিল করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে অনুযায়ী, চুক্তি সংশোধন করলে, ভর্তুকির চাপ কমবে। গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না বলেও আমরা মনে করছি। সংবাদ সম্মেলনে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, আমাদেরকে এলএনজি ও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে নবায়ন যোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে হবে। এডিপিতে এলএনজি সংশ্লিষ্ট যেসব প্রকল্প রয়েছে সেগুলোর বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুতের দরপত্রের ক্ষেত্রে আমরা সঠিক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে পারি না। ফলে বাড়তি দরের দরপত্রদাতাদের কাছেই কাজ দিয়ে দিতে হয়। এই বাড়তি বিডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বেড়ে যায়। এছাড়া ভাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রের (রেন্টাল) সঙ্গে এমনভাবে চুক্তি হয়েছে যে তারা বিদ্যুৎ না দিলেও পে করতে হচ্ছে। ফলে ভর্তুকি আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে নো ইলেক্ট্রিসিটি, নো পে অনুযায়ী, চুক্তি সংশোধন করলে, ভর্তুকির চাপ কমবে। গ্রাহককে বাড়তি দাম দিতে হবে না বলেও আমরা মনে করছি। তিনি আরও বলেন, এসব কাজ এই মূহুর্তেই সম্ভব না। আমরা বলছি না এখনই করার। তবে সামনে থেকে যেন নতুন চুক্তি না হয় এবং নবায়ন করা না হয় সেটাই চায় সিপিডি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে। তিনি বলেন, ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৭ হাজার মেগাওয়াট, রিজার্ভ মার্জিনসহ ৩৫ হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকতে পারে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনায় ৫৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা, যা অযৌক্তিক। তাই এটার সংশোধন দরকার বলে আমরা মনে করছি। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আরপিজিসিএলসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গত কয়েক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন আবারও নিরীক্ষা করা, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে জবাবদিহিতা বাড়াতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার দাবী জানান। এ খাতের জন্য ১৭টি সংস্কারের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে। টেকসই জ্বালানি রূপান্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারে জোর দিতে হবে। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |