গাড়ি নিয়ে বিপাকে সাবেক তিন এমপি, দিতে হবে ২৭ কোটি টাকা
আলী আজীম, মোংলা (বাগেরহাট):
|
সংসদ সদস্য (এমপি) কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা তিনটি বিলাসবহুল প্রাডো গাড়ি আটকে দিয়েছে মোংলা কাস্টমসের শুল্ক বিভাগ। যারা গাড়িগুলো আমদানি করেছিলেন তারা আর সংসদ সদস্য না থাকায় এগুলো আটকে দেওয়া হয়েছে। তবে ‘বিল অব এন্ট্রি’ দাখিল না হলে এই তিনটি গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই এসব গাড়ি খালাস করতে হবে বলে মোংলা কাস্টমস হাউস সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এ বিধানের আওতায় আনা আরও সাতটি গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হলেও এখনও বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে নিবন্ধন করা হয়নি বলে জানা গেছে। রোববার (২৫ আগস্ট) দুপুরে মোংলা কাস্টমস হাউসের শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তা (আরও) মো. শাকিল আহম্মেদ জানান, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘কারুজেন্ট অটো’ মোংলা বন্দরে সংসদ সদস্য কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি তিনটি আমদানি করে। আমদানি হওয়া ২০২৩ মডেলের পার্ল হোয়াইট (মুক্তা রং) বিলাসবহুল প্রাডো ব্রান্ডের এ তিনটি গাড়ি আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্যদের। এরা হচ্ছেন দিনাজপুর-১ আসনের মুহাম্মদ জাকারিয়া, টাঙ্গাইল-৮ আসনের অনুপম শাহজাহান জয় এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা জামান ববি। তবে রোববার পর্যন্ত এই তিনটি গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে কেউ ‘বিল অব এন্ট্রি’ করতে আসেনি। তাই গাড়ি তিনটি ‘বি এল লক’ বা আটকে দেওয়া দেওয়া হয়েছে। মোংলা কাস্টমস হাউসের এই রাজস্ব কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যারা গাড়িগুলো আমদানি করেছিলেন তারা আর সংসদ সদস্য না থাকায় এবং বিল অব এন্ট্রি দাখিল না হলে এই তিনটি গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন না।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘একেকটি প্রাডো গাড়ি আমদানি করা হয়েছিল ৯৯ লাখ টাকায়। শুল্ক দিতে গেলে একটি গাড়িরই দাম পড়বে ৯ কোটি টাকা।’ মোংলা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মুহাম্মদ মাহফুজ আহমদ বলেন, ‘দেশে সংসদ সদস্য কোটায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় মোট ৪৪টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি হয় তিনটি। বাকি গাড়িগুলো চট্টগ্রাম ও কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি করা হয়েছে। আমদানি করা এসব গাড়ির বেশির ভাগই জাপান ও সিঙ্গাপুর থেকে আনা হয়েছে।’ টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার, টয়োটা জিপ, প্রাডো, টয়োটা এলসি স্টেশন ওয়াগটের এসব গাড়িগুলোর ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ৩০০০-৪০০০ সিসির বলেও জানান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলা কাস্টমস হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে চট্টগ্রাম, মোংলা বন্দর ও কমলাপুর আইসিডি থেকে সাতটি গাড়ি ছাড়া হয়েছে। সেগুলো আমদানি করেছেন ক্রিকেটার ও মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের ফয়জুর রহমান, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের গোলাম ফারুক পিংকু, নাটোর-১ আসনের আবুল কালাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের মুজিবুর রহমান মঞ্জু এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরি। আরেকজন সাবেক সংসদ সদস্যের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। কিন্তু পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, সংসদ সদস্যরা প্রতি পাঁচ বছরে একবার শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি করতে পারেন। এ ধরনের গাড়ির ওপর কর ৮১০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে তবে এমপিদের তা দিতে হয় না। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার একদিন পর ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দিলে সংসদ সদস্যরা সংসদে তাদের সদস্যপদ এবং করমুক্ত গাড়ির মতো সুযোগ-সুবিধাও হারান। এ বিষয়ে মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘যেসব গাড়ি ৬ আগস্টের পরে আমদানি হয়েছে তা খালাসের সুযোগ নেই। এ ধরনের গাড়ি খালাস করতে হলে শুল্ককর পরিশোধ সাপেক্ষে খালাস করতে হবে। এ ছাড়া সংসদীয় আসনে এমপিদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ সুবিধা দেওয়া হয়। বর্তমানে সংসদ ভেঙে দেওয়ায় তা শুল্কমুক্ত সুবিধায় খালাসের সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী, স্বাভাবিক হারে শুল্ককর পরিশোধ করেই খালাসের অপেক্ষায় থাকা গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে হবে।’ ডেল্টা টাইমস/আলী আজীম/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |