বিতর্কের উর্ধ্বে ৭১
মোজাফফর হোসেন ভূইঁয়া:
|
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্মের প্রতীক। লক্ষ প্রানের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। আমরা আজ মহসংকটে আছি। আজ এই অর্জনকে একটি দলের দুঃশাসনের কারনে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ আর হাসিনা সরকার এক নয়। হাসিনা সরকারের শাসন আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক নয়। এই মুক্তি যুদ্ধ সকল মানুষের অধিকার আদায়ের যুদ্ধ। এই স্বাধীনতা সকল মানুষের স্বাধনতা। এটাকে কেউ তার নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবে না। আমরা হাসিনা সরকারের অপশাসনের দায়ভার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর নিক্ষেপ করতে পারি না। বর্তমানে তখনকার সময় স্বাধনতা বিরুধীতাকারী চেতনার লোকদের বলবো নিজেদের পরিবর্তন করুন গড়ে তুলুন নতুন চেতনা। কোন অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নতুন চেতনা জাগিয়ে তোলা যায় না। চেতনাকে আঘাত করবেন না। যে চেতনা মানুষকে গোষ্ঠিবদ্ধ করে তোলে সেই চেতনার ভিন্ন রুপে কেন আঘাত করতে হবে? সমাজের এই মারাত্বক উপাদনে কেন আঘাত করার মাষিকতা সৃষ্টি করতে হবে? চেতনায় আঘাত করলে তা ধীরে ধীরে শানিত হয়। আরো ধারালো রুপে প্রতিঘাত করে সমাজের রুপ পরিবর্তন করে ফেলে। এর উদাহরণ আমাদের সামনে ভাসছে। শুধু বোঝার ক্ষমতার অভাব। ইহা একটি মারাত্বক উপাদান যা পরিবর্তন অসম্ভব। ৭১ কে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই। এটা চিরন্তন সত্য কথার মতো কোন বাস্তব কথা। সার্বভৌমত্ম সৃষ্টির জন্য শহীদ হওয়া আর রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য প্রান দেওয়া এক কথা নয়। স্বাধীনতার জন্য প্রান দান ও বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে দেশকে রক্ষার জন্য যুদ্ধ করার জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন বলেই আজ রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য নতুন সংগ্রামের পথ দেখেছি। সকল সংগ্রামই গুরুত্বপূর্ন। তার মানে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কে প্রশ্নবিদ্ধ করার কোন সুযোগ নেই। যারা দূর্নীতি রোধকল্পে সংগ্রাম করেছে তাদেরকে সম্মান দানে কোন বাধাঁ নেই। কার তাদের জীবন ত্যগে যারা নতুন ক্ষমতার স্বাদ নিবে তারাতো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভাইকে সম্মান দিতে গিয়ে বাবাকে ভুলে গেলে চলবেনা। বাবাকে অসম্মান করে ভাইকে বড় করা যাবে না। এটা রক্তের সম্পর্ককে অস্বীকার করার মতো একটি বিষাদময় অবস্থা। পৃথিবীতে সার্বভৌমত্মের স্বাধীনতা আসে একবার আরতা ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করতে হয় বারবার। ধরে রাখার জন্য করা সংগ্রামকে পূর্ববর্তী সংগ্রামের অর্জনকে ছোট করার অপপ্রয়াসকে কোন ষড়যন্ত্র বলেই ধরে নিতে হবে। এ ধরনের ষড়যন্ত্র যুগে যুগে ছিল এখন আছে আবার আসবে। এধরনের ষড়যন্ত্রকে রুখে দাড়ানোর মতো সাহসী সন্তান সব সময় বাংলা জন্মদেয়। ৭১ আর বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন। বঙ্গবন্ধু জাতিগত চেতনার স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি কোন নির্দিষ্ট দলের লোক নন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌত্মের প্রতীক। তার ডাকে একটি জাতি এক ও অভিন্ন মত প্রকাশ করে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশকে স্বাধীন করে একটি সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম দেয়। এখানে তার ডাকে সবাই সারা দিয়েছে সাধারন মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছে হায়েনাদের উপর। জাতীয় চার নেতার দুঃসাহসী পদক্ষেপ আর বিচক্ষন পররাষ্ট্রনীতির কারনে যুদ্ধের ঢোল সারা পৃথিবীর মানুষের মনে জায়গা করে নিতে সহায়তা করেছে। জেনারেল আতাউল গণি ওসমানির সামরিক বাহিনীতে জিয়াউর রহমান সহ সকল সেক্টর কমান্ডারদের সাহসী পদক্ষেপে পূর্বপাকিস্থান বাংলাদেশ রুপে আর্বিভূত হয় পৃথিবীর মানচিত্রে। এই ইতিহাস কারো অজানা নয়। এই সহজ সমীকরণকে বিকৃত করার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি এমন দুঃসাহস দেখায় তবে আরেকটি নতুন ৫ আগষ্টের জন্ম হতে পারে যা তোমরা না বুঝলেও আমার কল্পনায় খেলছে এবং তাই হবে। বর্তমান সময়ে মহান মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ষড়যন্ত্রের এক জঘন্য খেলায় ব্যস্থ এক দল মানুষ। তারা মূলত দেশের স্বাধীনতা চাই নাই। তাদের এই হীন উদ্দেশ্য শুধু বঙ্গবন্ধুকে লাঞ্চিত করা নয় তারা আজ জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা এমনকি দেশের নাম নিয়ে হীন পায়তারা করছে। কিন্তু তারা এটা ভাবতে পারছে না বিকৃত ইতিহাস কখনো স্থায়িত্ব পায় না। আমরা দুঃশাসনের বিপক্ষে সে যেই হোক । নতুনদের প্রতি অনুরুধ সুশাসন নিশ্চিতে কাজ করুন। আওয়ামিলীগের মতো আরেকটি দুঃশাসনের চেষ্ঠা করলে হয়তো পালানোর পথ পাবেন না। তাই চেতনায় আঘাত করবেন না। মানবিক হোন , সুশাসন সৃষ্টিতে কাজ করুন। কারো অর্জনকে খাট করে নিজেদের দখলবজিতে নিয়োগ করবেন না। কোন একটি সরকারের কারনে দেশের বৃহৎ কোন গোষ্ঠিকে এড়িয়ে চলার নীতি কখনো ভাল শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলা সম্ভব নয়। তাদের ভিতরের ভাল কর্মীদের প্রেশনা জোগাতে হবে। তাদরে জীবনকে নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা দান করতে হবে। তাদের চেতনাকে মূল্যায়ন করতে হবে। দেশে তখনি সুশাসন সৃষ্টি হবে যখন সকল চেতনা সমুহ স্বাধীন হবে। চেতনা যখন মন খোলে কথা বলতে পারবে তখনি সুশাসন নিশ্চিত সম্ভব হবে। অতীতের দুঃশাসনগুলো আমাদের মেরুদন্ডকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে গেছে। আমাদের এই তরুন নেতৃত্বকে সেই মেরুদন্ড মেরামতের দায়িত্ব নিতে হবে। তা কেটে ফেলার সুযোগ নেই। প্রতিটি মানুষের চিন্তা আলাদা। তার নিজস্ব মতামতের ভিত্তিতেই চেতনার জন্ম হয়। কারো কারো কাছে ৭১ সেরা আবার কেউ বলবে ২৪ সেরা। এটা কার একান্তই ব্যক্তিগত চিন্তা চেতনা। কিন্তু উৎকৃষ্টতা কি? তা বোঝার জন্যই গণতন্ত্রের উদ্ভব। শেখ মুজিবরের সাথে যেমন কাউকে তুলনা করা যাবে না তেমনি ৭১ কে অন্য কিছুর সাথে তুলনা করে খাট করার অভিপ্রায় হবে নতুন কোন বিপ্লবের বীজ বপন। যে চারা গজিয়ে গেছে, যার ফল আমরা ভোগ করছি সে গাছ কেটে ফেলার চেষ্ঠা হবে আত্মঘাতি। সে গাছকে পরিচর্যা করতে হবে। আগাছা ছাটাই করে তার রিষ্ট পোষ্ট ফল উৎপাদন করতে হবে। যার প্রভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আমরা স্বাধীন থাকতে চাই । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমরা তার অর্থ বুঝিনা। স্বাধঅনতা কি শুধুই আলো ? এটি মূলত আলো আধাঁরের মিশ্রন। এখানে যখন কোন আধাঁর ভর করে তার থেকে মুক্তির জন্য আলো জ¦ালাতে হয়। সে আলো না জ¦ললে নষ্ট রাজনৈতিক চেতনা ভর করে। সেই নষ্ট রাজনৈতিক চেতনা একটি দেশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে হত্যা করে। এখন দেখা যাচ্ছে একটি অপশাসন থেকে বাচাঁর জন্য বিপ্লব করে আবার নতুন আরেকটি অপশাসনের শিকার হতে হচ্ছে সাধারন মানুষ। আপনি সব আইন রহিত করতে পারেন কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে রহিত করতে পারেন না কেন? আপনারা কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্বর আচরণকে বন্ধ করতে পারছেননা? আপনারা কেন সাধারনদের উপর চাপিয়ে দেওয়া মামলকে থামাতে পারছেন না? কেন মামলার ভয় দেখিয়ে চাদাঁবাজিকে রোধ করতে পারছেন না? আমরা কি এই জন্য ছাত্র জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছি? আমরা কি এই শাসনের জন্য সরকার হটিয়েছি? আমরা কি ধর্মান্ধতাকে সর্মথন করেছি? আপনাদের গোপন মানষিকতাকে বাস্তবায়নের জন্য আমাদেরকে ব্যবহার করেছেন। যদি তাই হয় তবে কিভাবে দেশ স্থিতিশীল হবে? সবাইকে বুঝতে হবে আমাদের কৃষ্টি, কালচার, রীতি নীতি, মূল্যবোধ এবং সামাজিক সহাবস্থান মনোভাব। আজ আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো শ^াস বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। যেমন শাসন আমরা দেখেছি আওয়ামী সরকারের সময়। আমাদের কেন একই বৃত্তে বসবাস করতে হবে? কেন আমাদের সমাজের ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে এম বর্বর আচরণ দেখতে হবে? তবে পরিবর্তন কিসে? কে সহনশীল আচরণ করবে? কারা ক্ষমা করে নতুন আলোর সন্ধান দেবে? যে আলোর সন্ধানে আমরা রাস্তায় খেয়েছি গুলি, যে আলোর সন্ধানে আমরা হয়েছি লাঞ্চিত। আজ ঠিক একই রুপে কেন আমাদের আসতে হবে? আমাদের নিয়ন্ত্রন আজ কাদের হতে? কতটুকু আশায় আজ নীড় গড়া হবে? কাদের জন্য আজ শান্তির নীড় গড়বে তোমাদের সুপ্ত চেতনা। আমাদের মনুষ্যত্ববোধ আর মানবিকতা কেন এমন অসহনশীল অবস্থায় পতিত? কেন আজ আমরা দখল বানিজ্যে লিপ্ত? কোন দল দখল করছে সম্পদ আহরনের নেশায় কোন দল দখল করছে ক্ষমতা বৃদ্ধির পায়তারায়। একোন খেলায় মগ্ন আজ আমাদের জাতি। এটি কথা প্রচলিত আছে ” তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হইব না কেন” কিন্তু তা আজ আমাদের উত্তম হতে সহায়তা করছে না এখন আমরা ভাবি ” তুমি অধম তাই আজ আমিও অধম হইব”। আমরা ক্ষমা করতে ভুলে গেছি। আমরা প্রতিশোধ পরায়ণ মানষিকতাকে ধারন করেছি প্রতিটি পথে পথে, প্রতিটি পদে পদে সকল স্থানে বা সবার সনে। খুব ভয়ানক পরিস্থিতে আছি আমরা। এ যেন বাঘের মুখে আমাদের বস বাস। আমরা ভুমি পেয়েছি, আমরা স্বাধীন হয়েছি তা শুধু নামে বা গন্ধে। আমরা জীবনকে উপভোগ করতে শিখেছি আপন মহিমায়। কিন্তু শিখিনি গোষ্ঠিবদ্ধ কোন সুখ ভোগ করতে। আমরা বিপর্যয়ের মাঝে বাস করছি কারন আমরা আজও শিখিনি কিভাবে জীবনকে শান্তিতে জাগাতে হয়। কিভাবে বাস করতে হয় একে অপরের সুন্দর মননশীলতায়। আমরা আকৃতিতে মানুষ কিন্তু আচরণে ? লোভ আমাদের সমাজকে করে তুলেছে অস্থির। এখন ক্ষমতাবান হওয়া, বিত্তশালী হওয়া, অত্যাচারী হওয়া একটা নেশা ও ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এই সব অর্জন করতে ইমান, আমল, নৈতিকতা, ন্যয়পরায়নতা, সহনশীলতা, মহানুভবতা, মানবিকতা এবং মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করি না। যখন এসবকে বিসর্জন দেওয়ার মতো মানষিক প্রস্তুতি চলে আসে তখন আমরা আর মুনুষ থাকতে পারি না। হিংস্রতাকে আলিঙ্গন করে নতুন বৈশিষ্টের রুপ লাভ করে ফেলি। আমাদের রাজনৈতিক নেতা কর্মী সমর্থকগণ নিজেদের চেতনার সাথে অন্যের চেতনাকে প্রতিপক্ষ ভেবে তা দমন কাজে ব্যস্থ হয়। তারা বরাবরের মতো ভাবে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে হলে বিরুধী চেতনাকে জাগতে দিবে না। কিন্তু তা সাধারন ভাবেই ক্ষমতার দীর্ঘ স্থায়িত্ব কাল হ্রাস করে। বিগত সরকারো রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কবলে পড়ে অনেক মানুষ ঘর ছেড়েছে, দেশ ছেড়েছে, জেল খেটেছে, এমনকি কেউ কেউ ঝীবন হারিয়েছে। তারা সুযোগের অপেক্ষায় থেকেছে। পতনের সাথে সাথে তার হিংস্র দানবের মতো ঝাপিয়ে পড়েছে আওয়ামীলীগের উপড়। কে ভাল কে মন্দ তা বিবেচনা করার সময় নেই। দখল, হত্যা, মামলা, চাদাবাজি সব কিছুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে। তোরা ভুলে গেছ তোমাদের অতীত। তোমরা জ্ঞান হােিয়ছো তোমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। ঠিক এই ক্ষমাশীলতার অভাবে সব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। হয়তো তারা এমন কোন দিনের অপেক্ষা করবে । তাই তোমার মাধ্যমেই শুরু হোক উত্তম কাজের। আমরা অপেক্ষায় আছি নতুন কোন মহান ব্যক্তির যারা শুধু মুখে নয় কাজের মাধ্যমে দেখিয়ে দিবে সহানুভুতি জাগানুর স্বপ্ন। সবাই দেশকে পরিবর্তন করতে চায় কিন্তু নিজে পরিবর্তিত হতে চায় না। এ যেন স্বপ্নের মাঝে রাজা হওয়ার মতো চাহিদা। সবাই এমপি, মন্ত্রী, প্রধামন্ত্রী হতে চায় কেউ মানুষ হতে চায় না। সবকিছুর উর্ধ্বে মানুষ তা বোঝার ক্ষমতাই নেই আজ আমাদের মাঝে। আমাকে ঠকানো হয়েছে আমিও ঠকাবো, আমাকে আঘাত করেছে আমিও আঘাত করবো এ যেন প্রতিনিয়ত আঘাত প্রতিঘাতের খেলা। ক্ষমাশীলতার মনোভাব কারো মাঝেই নেই। কতদিন চলবে এই খেলা। কখন আমরা বুকফুলিয়ে বলতে পারবো আমরা স্বাধীন দেশের নিরাপদ নাগরিক। আমি বার বার বলছি আমরা খুবই আশাবাদী হয়তো আমরা পাব। হয়তো আমরা জেগে উঠবো নতুন কোন সুরে। সে বাশরী হয়তো আমাদের মাঝে আমরা পেয়েছি। এখন সময়ের অপেক্ষা। লেখক : কথা সাহিত্যিক |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |