মঙ্গলবার ৮ অক্টোবর ২০২৪ ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

তাঁত শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ
বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চায় তাঁতী সমিতি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪:২৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চায় তাঁতী সমিতি

বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চায় তাঁতী সমিতি

দেশের তাঁত শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় কিন্ত এ শিল্পে ব্যবহৃত সুতা, কেমিক্যাল ও রঙ ব্যবসা কব্জা করতে চায় এমন একটি ব্যবসায়ী চক্র তাঁত শিল্প ধ্বংসের গভীর ষড়যন্ত্র করে আসছে। ষড়যন্ত্রকারী ওই চক্রটি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত সাধারণ তাঁতী এবং সারাদেশে বাজারজাতকরনের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার ব্যবসায়ীর জীবিকার একমাত্র পথটি দূরূহ করে তুলতে অপচষ্টো করছে। এসব অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতী সমিতি’র সাবেক সভাপতি মো. মনোয়ার হোসেন। 

মো. মনোয়ার হোসেন জানান, সরকার প্রান্তিক তাঁতীদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড হতে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করেন এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় তাঁত বোর্ড নিবন্ধিত প্রাথমিক তাঁতী সমিতিকে সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানির ব্যবস্থা করেন। নারায়নগঞ্জভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী চক্র পলিয়েস্টার সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানি করে তাঁতীদের নিকট বিক্রি করতে চান। কিন্ত প্রকৃত তাঁত বস্ত্রে পলিয়েস্টার সুতার ব্যবহার হয়না। চক্রটির কেউ তাঁতী বা তাঁতী প্রতিনিধিও নন। এদের কারও কোনো তাঁত নেই। তাদের উদ্দেশ্য হলো সাধারণ তাঁতীরা যাতে সহজে সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানি করতে না পারে এবং তাঁতীদের নামে বরাদ্দকৃত সুতা যাতে তারা করায়ত্ত করতে পারে । সরকার কর্তৃক জারিকৃত চেকলিস্ট বাতিল করে চক্রের সদস্যরা সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ব্যবসায় বহুগুণ মুনাফা করাই এ চক্রের উদ্দেশ্য। এ হীন উদ্দেশ্যে তারা সরকার ও তাঁতী সমিতিকে জড়িয়ে অপপ্রচার চালিয়ে আসতেছে। শুল্কমুক্তভাবে (৫ শতাংশের অধিক) সুতা, রং ও রাসায়নিক আমদানি বন্ধ হলে দেশের বাজারে পলিয়েস্টার সুতার একচেটিয়া ব্যবসা উক্ত স্বার্থান্বেষী চক্রটি করায়ত্ত করতে পারবে এবং পলিয়েস্টার সুতার দাম বহুগুণ বাড়িয়ে দিবে। প্রান্তিক তাঁতীদের পক্ষে বহুগুণ দাম দিয়ে সুতা কিনে কাপড় উৎপাদন করে বাজারে প্রতিযোগীতা করে বিক্রি করা প্রায় অসম্ভব। ফলে দাম বাড়ায় যেমন ভাবে প্রান্তিক তাঁতীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর এর বিপরীতে ষড়যন্ত্রকারীদের বহুগুণ মুনাফা লাভের লক্ষ্য অর্জিত হবে। 

চক্রটি সংবাদ সম্মেলন ডেকে ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে তাঁত বোর্ডের এবং সাধারণ তাঁতীদের স্বার্থবিরোধী খবর পরিবেশন করে চলছে। নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য তারা সাধারণ তাঁতীদের নাম ব্যবহার করে গত ০৪/০৯/২০২৩ তারিখে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছিল। তারা সুতা ব্যবসায়ী এবং সাধারণ তাঁতীদের শত্রু। পুর্বেও এরা সক্রিয় ছিলো। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে আমরা একটি দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার পেয়েছি। পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটে ষড়যন্ত্রকারী ওই চক্রটি আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং পুর্বের ন্যায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য ব্যবসায়িক; তাঁত শিল্পবান্ধব নয়।  

তিনি জানান, মাঠপর্যায়ের লিয়াজোঁ অফিসারের সুপারিশসহ তাঁতী সমিতির নামে সুতা আমদানির আবেদন অফিসে আসলে তা প্রথমে যথাযথভাবে যাচাই করা হয় এবং আবেদন যথাযথ থাকলে প্রধান কার্যালয়ের সমিতি কর্মকর্তা ফাইল উপস্থাপন করেন। এরপর ফাইল পর্যায়ক্রমে সহকারী ম্যানেজার, ম্যানেজার, ডিজিএম হয়ে জিএমের কাছে যায়। জিএম সুপারিশ করে ফাইল অনুমোদনের জন্য মেম্বার এবং চেয়ারম্যানের কাছে পাঠান। তারা ফাইল অনুমোদন করলে জিএম চিঠি ইস্যু করেন। ফলে তাঁতী সমিতির নামে সুতা আমদানির সুপারিশের ক্ষেত্রে কোনো কর্মকর্তার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই। সমন্বিতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফাইল অনুমোদনের পরই চিঠি ইস্যু করা হয়। উপরন্তু, নীতিমালা অনুযায়ী সরকারের দেয়া শুল্কমুক্ত আমদানী সুবিধার আওতায় প্রাথমিক তাঁতী সমিতির আবেদনের প্রেক্ষিতে সুতা, রং ও পাঁচ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য আমদানির বিষয়ে বোর্ডের অনুমোদনও একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যানের চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে আমদানি-রপ্তানির দপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যাংকে ঋণপত্র (লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি) খোলার পর আমদানি কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর স্থানীয় কাস্টমস অফিসের প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি ও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তাঁত বোর্ডের মাধ্যমে তাঁতীদের মধ্যে আমদানিকৃত পণ্য বিতরণ করে মাস্টার রোল সংরক্ষণ করা হয়।

উল্লেখ্য, আমদানি পণ্য তাঁতীদের গোডাউনে পৌছানোর পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরজমিন মাল প্রত্যক্ষ করে মালের সত্যায়ন প্রদান করে থাকেন। এইসকল প্রক্রিয়ায় জাতীয় তাঁতী সমিতির কেউ বা অন্য কারো কোথাও যুক্ত হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। 

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কুটির শিল্প হস্তচালিত তাঁতশিল্প দেশের গৌরবময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। অর্থনীতিতে তাঁত শিল্প গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। এই খাতটি নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম চাবিকাঠি এবং জীবন-জীবিকার গুরুত্বপূর্ণ উৎস। আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির ধারক ও বাহক তাঁত শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় বয়নে উৎকর্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে এবং গুণগত মান বজায় রাখার মাধ্যমে দেশীয় তাঁতশিল্পের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছে। ২০১৮ সালে দেশব্যাপী পরিচালিত তাঁত শুমারি অনুযায়ী দেশে বিদ্যমান ১,১৬,১১৭টি তাঁত ইউনিটে মোট হস্তচালিত তাঁতের সংখ্যা ২,৯০,২৮২টি। বর্তমানে এ শিল্পের সাথে তাঁতীসহ প্রত্যক্ষভাবে প্রায় নয় (৯) লক্ষ লোক নিয়োজিত রয়েছে। তাঁতশিল্প থেকে বছরে ৪৭ দশমিক ৪৭৪ কোটি মিটার কাপড় উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড-এর তথ্য অনুযায়ী তাঁতশিল্প দেশের বস্ত্র চাহিদার প্রায় ২৮ ভাগ পূরণ করার পাশাপাশি জিডিপিতে অবদান রাখে ০.১০ শতাংশ।

এ শিল্প রক্ষা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত কর্মীদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানে মো. মনোয়ার হোসেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) জনাব ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের সম্মানীত চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব)  মো. মাহমুদ হোসেন মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ডেল্টা টাইমস/সিআর/একে

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com