মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদনে সফল খুবি
খুবি প্রতিনিধি:
|
আশ্চর্য হলেও বিষয়টি সত্য। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল সফালতা দেখিয়েছে মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদন করে। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে গৃহপালিত পশুর খাদ্যের চাহিদা পূরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গবেষক দল এ গবেষণা সম্পন্ন করেছে। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঘাসকে ‘হাইড্রোপনিক ফডার’ বলা হয়, যা সাধারণ ঘাসের থেকে বেশি পুষ্টিকর। গবেষণা প্রকল্পটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রের অর্থায়নে এবং অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের গৃহীত। গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে এক কর্মশালার মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন গবেষকেরা। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে মাটি ছাড়া ঘাস উৎপাদন প্রাণিসম্পদের উৎপাদনে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। বাংলাদেশের জনগণের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতিতে গৃহপালিত পশুর জন্য ঘাস উৎপাদন করা যায়। এই ঘাস সাধারণ ঘাসের থেকে অনেক বেশি পুষ্টিকর। সাধারণ ঘাসের তুলনায় হাইড্রোপনিক ফডারের বেশকিছু সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে অধিকতর ভিটামিন, খনিজ উপাদান, প্রাণীদের কাছে সুস্বাদু ও খুব সহজেই হজম হয়ে শরীরের পরিপাকতন্ত্র দ্বারা পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়ে যাওয়া অন্যতম। সাধারণ ঘাসের তুলনায় এর মধ্যে থাকা বীজের জন্য আমিষের মাত্রা বেশি হয়। গবেষণায় আরো উঠে আসে, হাইড্রোপনিক ফডারের অন্যতম সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সুবিধা হচ্ছে প্রতিকূল পরিবেশে এর ব্যবহারযোগ্যতা। বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও দুর্যোগ-প্রবণ দেশ। বাংলাদেশে নগরায়ণ ও শিল্পায়নের প্রভাবেও কৃষি জমি ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এমন অবস্থায় অল্প জায়গায় কোনো কৃষি জমি ছাড়াই ও নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নদীভাঙন, অতিবৃষ্টি, মাটির অনুর্বরতা প্রভৃতি সমস্যা মোকাবিলা করে প্রাণী খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব এই উপায়ে। একই সঙ্গে দেশের নিরবচ্ছিন্ন প্রাণিজ আমিষের জোগান দিতে হাইড্রোপনিক ফডার হতে পারে একটি স্থিতিশীল সমাধান। হাইড্রোপনিক পদ্ধতিটি পৃথিবীতে নতুন না হলেও এই প্রযুক্তির ব্যবহার বিরল। বাংলাদেশে খুব কম জায়গায় এই পদ্ধতির ব্যবহার করা হয় যদিও সঠিকভাবে ব্যবহার করলে প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র খামারি থেকে বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোও লাভবান হতে পারবে। গবেষণার বিষয়ে প্রধান গবেষক অ্যাগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক সরদার শফিকুল ইসলাম জানান, ‘সাধারণ ঘাসের তুলনায় হাইড্রোপনিক ফডারের বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে যার মধ্যে অধিকতর ভিটামিন, খনিজ উপাদান, প্রাণীদের কাছে সুস্বাদু ও খুব সহজেই হজম হয়ে শরীরের পরিপাকতন্ত্র দ্বারা পুষ্টি উপাদান শোষিত হয়ে যাওয়া অন্যতম। সাধারণ ঘাসের তুলনায় এর মধ্যে থাকা বীজের জন্য আমিষের মাত্রা বেশি হয়। এটি ৭ থেকে ১১ দিনে উৎপাদন করে ব্যবহার করা হয় বিধায় এতে আঁশ কম থাকে ফলশ্রুতিতে এনার্জির পরিমাণেও সাধারণ ঘাসের তুলনায় সাধারণত বেশি হয়।’ এই গবেষণা প্রকল্পের সহকারী গবেষক ও ওই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মো. মোসতাযাবুর রহমান জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণায় মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়ায় পাঁচ প্রজাতির বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে এগুলোর ফলন, পুষ্টিগত উপাদান ও উৎপাদনের খরচ সম্পর্কে বিশদভাবে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এখানে দেখানো হয় ভুট্টা, গম, যব, সরগাম ঘাস ও বরবটির বীজ ব্যবহার করে কীভাবে খামারিরা প্রাণিসম্পদ বিকাশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারবেন। ডেল্টা টাইমস/সানজিদা/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |