বিশ্বব্যাপী ৩৭০ মিলিয়নেরও বেশি মেয়ে ও নারী যৌন নিপীড়নের শিকার
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
বর্তমানে জীবিত থাকা মেয়ে ও নারীদের মধ্যে প্রতি আটজনে একজনই ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউনিসেফের মতে বিশ্বে ৩৭০ মিলিয়ন মেয়ে ও নারী ১৮ বছর হওয়ার আগেই (প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন) ধর্ষণ অথবা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। আন্তর্জাতিক কন্যা দিবসের আগে প্রকাশিত হয় এই প্রতিবেদনটি। শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার প্রথম বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক প্রতিবেদন এটি। এতে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে কিশোরী মেয়েদের ওপর যৌন সহিংসতার মাত্রা এবং এর প্রভাব প্রকাম পেয়েছে। প্রতিবেদনে অনলাইনে মৌখিকভাবে যৌন হয়রানির কথাও বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী যৌন সহিংসতার শিকার মেয়ে এবং নারীদের সংখ্যা ৬৫০ মিলিয়নে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ কার্যকরভাবে এ বিষয়ে ব্যাপক প্রতিরোধ এবং সহায়তা কৌশল গ্রহনের ওপর জোর দিয়েছে। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘শিশুদের প্রতি যৌন সহিংসতা আমাদের নৈতিক বিবেকের ওপর একটি বড় দাগ। এ ধরনের ঘটনা শিশুদের মনের মধ্যে গভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী ট্রমা সৃষ্টি করে। শিশুরা প্রায়ই পরিচিতদের দ্বারা এমন পরিস্থিতির শিকার হয়, যাদের কাছে শিশুরা নিরাপদ থাকার কথা ছিল। ’ ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সীমানা অতিক্রম করে শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে বলে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সাব-সাহারান আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভুক্তভোগীর তথ্য পওয়া গেছে, সেখানে ৭৯ মিলিয়ন মেয়ে এবং নারী (২২ শতাংশ) যৌন সহিংসতার শিকার। এরপর পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ৭৫ মিলিয়ন (৮ শতাংশ), মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় ৭৩ মিলিয়ন (৯ শতাংশ), ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় ৬৮ মিলিয়ন ( শতাংশ), ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ানে ৪৫ মিলিয়ন (১৮ শতাংশ), উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ায় ২৯ মিলিয়ন (১৫ শতাংশ) ও ওশেনিয়ায় ৬ মিলিয়ন (৩৪ শতাংশ) যৌন সহিংসতার শিকার। দুর্বল প্রতিষ্ঠান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী, রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা সঙ্কটের কারণে বিপুল সংখ্যক শরণার্থী পালিয়েছে। এদের মধ্যে মেয়েরা আরো বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে। ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ‘নাজুক পরিবেশে থাকা শিশুরা যৌন সহিংসতার জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে ভয়াবহ যৌন সহিংসতা প্রত্যক্ষ করছি, যেখানে ধর্ষণ এবং লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা প্রায়ই যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’ তথ্য অনুসারে, শৈশবে ঘটা বেশিরভাগ যৌন সহিংসতা বয়ঃসন্ধিকালে ঘটে (১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে)। যে শিশুরা যৌন সহিংসতার শিকার হয় তাদের বারবার নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই চক্র ভাঙতে এবং এই জাতীয় ট্রমাগুলোর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবগুলো হ্রাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেঁচে থাকা ব্যক্তিরা প্রায়ই যৌবনে যৌন সহিংসতার ট্রমা বহন করে। যৌন সংক্রামিত রোগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হন। সেইসঙ্গে একটি ভালো সম্পর্কে গঠনেও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা এ ধরনের ঘটনা যখন গোপন রাখে তখন প্রভাব আরো জটিল হয়। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও মেয়ে ও নারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তারপরও ২৪০ থেকে ৩১০ মিলিয়ন ছেলে ও পুরুষও একই ঘটনার শিকার। বিশ্বে প্রায় প্রতি ১১ জনে একজন ছেলে বা পুরুষ শৈশবে ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ইউনিসেফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপকতা নজিরবিহীন। যদিও এর সঠিক তথ্য ও প্রকৃত সংখ্যা নানা কারণে জানা সম্ভব নয়। কারণ, লোকলজ্জার মতো নানা সামাজিক কারণে অনেকেই এ বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। ধর্ষণের মতো ঘটনাও অনেকে চেপে যান নানা রকম সামাজিক ট্যাবুর কারণে। সূত্র : ইউনিসেফ ডট ওআরজি ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |