মেধাবী, প্রতিভাবান ও যোগ্যদের যথার্থ মূল্যায়ন হোক
মো. আরফাতুর রহমান:
|
মেধাবী ও প্রতিভাবনগণ যে কোন দেশের বা জাতির এক অতীব অমূল্য ঐশ্বর্য ও দূর্বার শক্তি। বিশ্বের যে কোনো জাতি টিকে থাকে সে দেশের প্রতিভাবানদের মাধ্যমে। কোনো দেশে বা জাতির সমাজদর্শন, ইতিহাস ও সংস্কৃতি দর্শন, অর্থনীতি-উন্নয়ন ও রাজনীতি এবং ধর্ম, ঐতিহ্য প্রভৃতির পরিকাঠামো প্রতিভাবানরাই বিনির্মাণ করেন এবং সমুন্নত রাখেন। সে কারণে দেশের মেধাবী তথা প্রতিভাবানদের মূল্যায়ন হলে সে দেশ সমাজ-রাজনীতি-ধর্ম-দর্শন-সংস্কৃতিতেই শুধু উন্নতি লাভ করবে না, বরং মেধাবীরা যোগ্যদের মূল্যায়ন করে বলেই দেশে সন্ত্রাস-দুর্নীতিসহ যে কোন অপরাধ কখনো আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবার নয়। আর এমনটিই স্বত:সিদ্ধ। একটি প্রতিষ্ঠানে যখন অযোগ্য এবং Non-Productive লোকের সংখ্যা যোগ্যদের চেয়ে তুলনামূলক হারে বেড়ে যায় এবং তাদেরকে যোগ্যদের সমান বা বেশি মূল্যায়ন করা হয় তখন যোগ্যদের মধ্যে দুই ধরনের পরিবর্তন আসে।একটা অংশ আসেপাশের সবার অবস্থা এবং পরিবেশের প্রভাবে নিজেও গা ছেড়ে দিয়ে কাজ করা শুরু করে যাতে তাদের Productivity কমে যায়। অপরদিকে আরেক অংশ যারা এতকিছুর পরেও নিজের লেভেল নিচে নামাতে চায় না, নিজের দক্ষতা ধরে রাখতে চায়- তারা তখন নিজের উন্নতির জায়গা না দেখে এবং অযোগ্যদের তুলনায় ইফোর্ট এবং পারফর্ম্যন্স বেশি দিয়েও মূল্যায়ন না পেয়ে Disturbed & Demotivated হয়ে অন্যত্র চলে যায়। আর উনারা যেহেতু যোগ্য এবং চর্চা করে নিজের দক্ষতা সবসময় উন্নত করে তাই উনাদের অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো অফার পেতেও খুব একটা বেগ পেতে হয়না। এইক্ষেত্রে অযোগ্যদের তো নতুন কিছু হারাবার নেই, যা পায় সেটাই অতিরক্ত; আর যোগ্যদের ক্ষেত্রে যারা গা ছেড়ে দিয়ে নিজেও দক্ষতাকে নষ্ট করে ফেলে তাদের অবশ্য ক্ষতি হয়, কিন্তু যারা নিজেকে শানিত করেই রাখা তাদের তো সমস্যাই নেই, তারা যেখানেই যায় ভালো করে। কিন্তু সকল প্রেক্ষাপট থেকেই সবচেয়ে বড় ক্ষতিটাই হয় প্রতিষ্ঠানের, যেটা একটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস পর্যন্ত করে দিতে পারে। কারন অযোগ্যদের কাছ থেকে এমনিও পাওয়ার কিছু নেই, যতটুকু পাওয়ার সেটা যোগ্যদের কাছ থেকেই এবং সেই সাথে যোগ্যদের মূল্যায়ন করলে তারা কর্মপরিবেশ সুন্দর করে একসময় অনেক অযোগ্যকেও দক্ষ করে তুলতে পারে। কিন্তু বিরক্ত ও অবমূল্যায়িত হয়ে যোগ্যরা যদি গা ছেড়ে দেয় তাতে তো প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি আবার তারা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে চলে গেলে তো দামী সম্পদ হারিয়ে যাওয়ার মতই ক্ষতি। "এত এত লোকের বাজারে কেউ চলে গেলেও প্রতিষ্ঠানের কিছু আসবে যাবে না, আরো যোগ্য লোক আনাই যাবে। অতএব প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি নেই"। - এমন একটা চিন্তা মাথায় আসতেই পারে। এক্ষেত্রে বাস্তবতা হচ্ছে এত লোক থাকলেও সত্যিকারের যোগ্য এবং পারফেক্ট ম্যাচিং লোক এত নেই, আর যা আছে তাদের সবাইও ফ্রী হয়ে বসে নেই যে চাইলেই চলে আসবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে যোগ্যদের মূল্যায়ন এবং অযোগ্যদের কমানোর মত সংস্কৃতিই যদি না তৈরী হয় তাহলে নতুন যত যোগ্য লোককেই আনা হোক না কেন, তারাও তো চূড়ান্তভাবে এই দুই পরিস্থিতির দিকেই যাবে। হয় নিজেও অযোগ্যদের সাথে একাকার হয়ে গা ছেড়ে দিবে অথবা টিকতে না পেরে চলে যাবে এবং এটি একটি চক্রের মত ঘুরতেই থাকবে। যাতে করে প্রতিষ্ঠানের Productivity তো বাড়বেই না বরং যোগ্য লোক যাওয়া আর নতুন লোক আসা এবং এসে সব বুঝে এডজাস্ট করতে সময় নিয়ে এরপর আবার চলে যাওয়া - এই চক্র চলতে চলতেই শুধু সময় যাবে এবং খরচ হবে; সমস্যার সমাধান আর হবে না! তাই যে কোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই অযোগ্যদের সংখ্যা কমিয়ে যোগ্যদের বাড়ানো এবং সেইসাথে যোগ্যদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার সংস্কৃতি খুব বেশি জরুরী। পর্যাপ্ত পরিমাণে দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদ যেমন প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান সম্পদ তেমনি অধিক অদক্ষ ও অযোগ্য জনবল যেকোন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভয়াবহ মাত্রার দায়, এবং এই দায় আপাতদৃষ্টিতে বুঝা না গেলেও এটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের কারন পর্যন্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমাদের দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় উদারতা, নৈতিকতাবোধ এবং মূল্যবোধ ও প্রজ্ঞা ও দর্শনচর্চার প্রাতিস্বিক অর্জনকে প্রকৃতরূপে বিশ্বমাঝে প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়ে দিতে সক্ষম হলেই এই সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট ডেল্টা টাইমস্/মো. আরফাতুর রহমান/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |