জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও অনিয়ম করে নিয়োগ পেয়েছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু-নীল দল হতে মনোনীত শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।২০১২ সালে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার তদবিরের মাধ্যমে নিয়ম ভঙ্গ করে শিক্ষক পদে নিয়োগ পান এই শিক্ষক। এরপর থেকে সরকার দলীয় ও আওয়ামী লীগ পরিচয়ে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, ফ্যাসিবাদের দোসর মো: শফিকুল ইসলামের নিয়োগের ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র। ২০১২ সালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স না থাকা সত্বেও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সাংঠনিক সম্পাদককে ব্যবহার করে যোগ্যতা না থাকা সত্বেও বাগিয়ে নেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রভাষক পদটি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১১ সালের ১৫ অক্টোবর একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ী পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্তানুসারে, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর 'সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স' থাকার শর্ত থাকলেও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি ছিল না। তিনি পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে স্নাতক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স এন্ড একাউন্টিং বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এমনকি ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে তার আবেদিত বিভাগে ফিন্যান্স বিষয়ের শিক্ষক নেয়ার কথাও বলা হয়নি। তাই তার নিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে। শুধু নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েই তিনি থেমে থাকেননি। ২০২১ সালে ভিসি মোস্তাফিজুর রহমান-এর সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতায় বাগিয়ে নেন স্ত্রীর জন্য সেকশন অফিসার পদের চাকরি। বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে সরকার দলীয় শিক্ষক নেতা সেজে এবং শেরপুর-১ আসনের সাংসদ ও হুইপ মোঃ আতিউর রহমান আতিক এর জামাতা হিসেবে ক্ষমতা দেখিয়ে জিম্মি করে রাখতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের। ভয়ে তটস্ত থাকতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমনকি করোনাকালীন সময়ে, তার ভরসার আশ্রয়স্থল হুইপ আতিকের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেন। অনুসন্ধানে আরও ঊঠে আসে, ৫ আগষ্ট দেশের প্রেক্ষাপটে স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটলে সাথে সাথে শিক্ষক শফিকুল লেবাস পাল্টে ফেলেন। ফ্যাসিবাদি সরকার পরিবর্তনের পর শফিকুল ইসলাম গত আওয়ামীলীগ সরকারের বদনাম করে রং পাল্টানোর অভিনয় শুরু করেছেন। তার এই ভোল পাল্টানোর অভিনয় দেখে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা হতবাক হয়েছেন। অনিয়ম করে নিয়োগ পাওয়া ওই শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি ডেল্টা টাইমসকে বলেন,আমার নিয়োগে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। বিজ্ঞপ্তির সকল শর্ত পূরণ করে এবং অন্যান্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার আমি নিয়োগ পাই। উল্লেখ্য যে বিবিএ এবং এমবিএ উভয় ক্ষেত্রেই আমি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থী। সাবেক উপাচার্য ও ভর্তি পরীক্ষার অনিয়ম এবং দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত চলমান। আমিও ওই তদন্ত কমিটির সদস্য বিধায় আমাকে বিতর্কিত করার জন্য একটি চক্র হীন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ২০২১ সালে ভিসি মোস্তাফিজুর রহমানের সময়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে স্ত্রীর জন্য সেকশন অফিসার পদের চাকরি বাগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূরণ করে এবং লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পায়। এ ব্যাপারে জানতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |