মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রঃ সুশাসন ও কালোটাকা
রাশিদুল রাশেদ
প্রকাশ: সোমবার, ২২ জুন, ২০২০, ১২:০৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

লেখক: রাশিদুল রাশেদ

লেখক: রাশিদুল রাশেদ

লেখাটির শুরুতে উইনস্টন চার্চিলের বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি মন্তব্য দিয়ে শুরু করতে চাই- তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি রহস্যঘেরা প্রহেলিকাচ্ছন্ন হেঁয়ালি( a riddle wrapped in mystery inside an enigma)। একদিকে এখানে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকট অপ্রতুলতা সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জিত হয়েছে; অন্যদিকে সুশাসনের নিশ্চিত অবক্ষয় ঘটেছে। কিন্তু সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উদার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুনিশ্চিত হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, পঞ্চাশ বছরের একটি রাষ্ট্রের খোদ রাজনৈতিক দলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ছিঁটেফোঁটাও নেই।

 বিশেষ করে বড় বড় দলগুলোতে খুবই লক্ষ্যণীয়।  যার কারণে অনেক দলের শীর্ষ পদে চার দশকের বেশী সময় একই ব্যক্তির অবস্থান এবং তা উত্তরাধিকার সূত্রেও বটে। আর বাঙালির মনের মধ্যে সুশিক্ষা, সুন্দর মনন, জ্ঞানস্পৃহা, সৃজনশীল মনোবিকাশ, নৈতিকতার যুক্তিগত কৌশল যোগ ঘটেনি। এটা সত্যি যে, সুশিক্ষা, সুন্দর মনন, জ্ঞানস্পৃহা, সৃজনশীল মনোবিকাশ, নৈতিকতার যুক্তিগত কৌশল যোগ ছাড়া সুশাসন নিশ্চিত কোনক্রমেই সম্ভব নয় এবং কোনভাবে সুশাসন নিশ্চিত করা যায় না। বর্তমান পৃথিবীতে সভ্য বা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সুশাসনের অপরিহার্য উল্লেখযোগ্য দিক নির্ণয় হলো- নৈতিকতার জ্ঞান অর্জনের সর্বতোভাবে চেষ্টা করা এবং তা ব্যবহারিক আচরণের মাধ্যমে সুন্দরভাবে প্রয়োগ করে সুশাসনের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা। 

যখন জর্জ ফ্লয়েডের পুলিশি হত্যার জন্য  আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তুমুল! "ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার" শ্লোগানে পশ্চিমা বিশ্ব উদ্বেলিত। তখন অন্যদিকে বাংলাদেশের বাজেটে কালোটাকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা এবং সে আলোচনা রাষ্ট্রীয়ভাবেই হচ্ছে । অর্থাৎ এদেশে টাকাতে বর্ণবাদের দুর্গন্ধ দেখতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় এই অবৈধ উপার্জিত টাকা এবং সেটা একদল অবৈধ উপার্জিত ধনীদের দ্বারা। আবার পক্ষান্তরে সবচেয়ে বেশি আমদানিও হয় প্রবাসী গরীব  শ্রমিকদের রক্ত ঘামে ভেজা উপার্জিত ডলার। যাকে রাষ্ট্র ভদ্র ভাষায় বলে রেমিট্যান্স। এই রেমিট্যান্স নিয়ে রাষ্ট্রের আবার বিশাল অহংকার। কেননা ডলার রিজার্ভের অর্থ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তালিকায় এগিয়ে দেয়। যাইহোক আমি বলছিলাম- টাকাতে বর্ণবাদের দুর্গন্ধ নিয়ে। অবশ্য এ দুর্গন্ধ ধুলাবালির বা ময়লা আবর্জনার কিংবা পায়খানার নয়। 

এটা দুর্গন্ধ হলো কুৎসিত বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ। কারণ এ দুর্গন্ধ টাকা অবৈধভাবে উপার্জিত। বিশেষ করে- রাষ্ট্রের প্রশাসকরা ঘুষ, দুর্নীতি, প্রজেক্ট লুট হরিলুটের মাধ্যমে উপার্জন করে, ব্যবসায়িকরা রাষ্ট্রের ভ্যাট-ট্যাক্স অন্যায়ভাবে ফাঁকি দেয়, ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি করে, পণ্যে ভেজাল সংমিশ্রণ করে, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি, লুটপাটের মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন করে, ড্রাগ চোরাচালান, কালোবাজারি, নারী শিশু পাচার, অবৈধ অস্ত্রের ক্রয়বিক্রয়ের টাকাসহ এরকম আরো কিছু অবৈধ আয়ের মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন করে থাকেন। যা রাষ্ট্রের জ্ঞাত বহির্ভূত আয়। যে আয় রাষ্ট্রের কাছে কালোটাকা। কালোটাকা সাম্প্রদায়িকতার নিদর্শন শব্দ বরং অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা বলা শ্রেয়তর। তো অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা বৈধতার প্রশ্ন হলো অবৈধ কাজকে নিশ্চিত সমর্থন করে দেওয়া। যা কোনভাবেই একটি সভ্য বা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কখনো করে থাকেনা এবং তা কোনক্রমেই কাম্যও নয়। 

২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করা ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। নিশ্চিত করেই বলা যায় এটা উচ্চাভিলাষী প্ল্যান্ট বাজেট। যা বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশে কতটুকু বাস্তবায়ন যোগ্য! তা কিন্তু প্রশ্নের মুখাপেক্ষী। তাই আমি বলি- শুধু চাপার জোরে নয়, যুক্তির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবারের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.২। যা স্মরণকালের মধ্যে সর্বোচ্চ বটে এবং মহামারী নোভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রামিত একটি দেশের পক্ষে এই মূহুর্তে কোনভাবেই বাস্তবায়ন যোগ্য হবে বলে মনে হচ্ছেনা। যেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে সরকারের বিরুদ্ধ পরিবেশে আলোচনা সমালোচনা করার তেমন কেউ নেই। 

তাই গণ তর্কবিতর্কের আলোকে সমাধানগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ ও চুড়ান্ত করার প্রয়োজন রয়েছে বা ছিলো।  নাহলে এ ধরণের উচ্চাভিলাষী বাজেট কেতাবি হিসেবে অভিহিত বা গণ্য হবে। যা গত কয়েক বছরের বাজেটে রাষ্ট্রের নাগরিকগণ লক্ষ্য করেছে। অর্থাৎ গত কয়েক বছরের রাষ্ট্রীয় বাজেট কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, তা কিন্তু প্রায় রহস্যঘেরা একটি বিষয়। কাজীর গরুর মতো! কেতাব পর্যন্ত সীমাবদ্ধ, গোয়ালঘরে থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই। যার সমূহ প্রমাণ এই নোভেল করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা আমাদের কাছে প্রমাণিত হচ্ছে। রাষ্ট্র স্বাস্থ্যসেবার তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কোন অর্জন করতে পারেনি। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রের বহু মানুষ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেছে। 

তবে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সুতরাং অবৈধ উপার্জনের পথ বন্ধ করার কৌশলে রাষ্ট্রকে চলতে হবে। শুধু স্বাস্থ্য খাত নয় বরং রাষ্ট্রের সমস্ত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন করে যাচ্ছে একদল মানুষ। এজন্য অবৈধ উপার্জনের পথ বন্ধ করা এখন রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব আধুনিক সভ্য সময়ের রাষ্ট্র হিসেবে এড়াতে পারেনা। তাইলে অবৈধ টাকা উপার্জন হবে না। আর তখন বর্ণবাদী শব্দ কালোটাকা সাদা করার কোন প্রয়োজন হবে না। যেটা আমরা আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে দেখতে পাই নিশ্চিত। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন বিহীন রাষ্ট্রগুলো 'কালোটাকা' শব্দটি উচ্চারণ করে সাম্প্রদায়িকতার তকমা লাগিয়ে দেয় না।  [মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]


রাশিদুল রাশেদ
(এম আই কে রাশিদুল ইসলাম রাশেদ)
কবি, লেখক, রাজনীতিবিদ।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com