গুণীদের বায়োগ্রাফি হতে পারে চলচ্চিত্র শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার
নুর মোহাম্মদ শাওন
|
কিছুদিন আগে বলিউডের একটা সিনেমা দেখলাম নাম “সুপার ৩০”। সিনেমাটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে ‘আনন্দ কুমার’ নামের এক শিক্ষকের মহৎ উদ্যেগের কাহিনী নিয়ে। যিনি অনেক বাধা বিপত্তির পরও তার মহৎ উদ্যেগ বন্ধ করেন নি। ইদানিং দেখা যাচ্ছে বলিউডে বিভিন্ন সফল ব্যাক্তিদের জীবনী ও মহৎ উদ্যেগের উপর সিনেমা বানাচ্ছে। যার ফলে গুণী ব্যাক্তিদের সম্পর্কে, দেশে তাদের অবদান সম্পকে, তাদের উদ্যেগ বাস্তবায়নে দূঢ় সকল্প সম্পর্কে সহজে জানা যাচ্ছে যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয়। চলচিত্র হচ্ছে একটি দেশের শক্তিশালী বিনোদনের মাধ্যম। এর মাধ্যমে যদি বিনোদনের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট বার্তা পৌছে দেওয়া যায় তাহলে সেটা সহজে মনে গেঁথে যায়। যেমন, শিক্ষক আনন্দ কুমারকে যখন প্রভাবশালীদের ভাড়াটে খুনি দ্বারা তাকে হুমকি দেওয়া হয় তখন শিক্ষক আনন্দ কুমার সাংবাদিককে একটি অনুরোধ করেছিলো, ‘যদি তাঁর খারাপ কিছু হয়ে যায় তাহলে যেন সে তার এই সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ না করে। যেন তাঁর মতো আরো যারা বিপ্লবী আছে তারা যেন তার এই সংবাদ শুনে তাদের উৎসাহ কমে না যায়।’ এ রকমভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক মহান ব্যক্তিত্ব আছে আমাদের দেশে। তারা তাদের নিজের স্বার্থকে না বলে দেশের মানুষের কথা ভেবেছেন, দেশে ফিরে এসেছেন বিদেশের লোভনীয় অফারকে না বলে। যেমন, জামান নজরুল ইসলাম স্যার। তিনি বিশ্বে জেএন ইসলাম নামে পরিচিত এবং বিজ্ঞানীমহলে বাংলাদেশ জেএন ইসলামের দেশ নামে পরিচিত। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তাঁর ‘দি আলটিমেট ফেইট অব দি ইউনিভার্স’ বইটি ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞানী স্টিপেন হকিংয়ের ‘অ্যা ব্রিফ হিস্টোরি অব টাইম’ এর চেয়ে যে কোনো বিবেচনায় শ্রেষ্টতর। অথচ আমরা কতজনই এই বইটির নাম বা এ সম্পর্কে জানি। এরকম আরো অনেক মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের দেশে রয়েছে, অনেককে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু তাদের কতজনকে আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মনটুকু দিতে পেরেছি। “আমরা আমাদের জ্ঞানীদের সম্মান করতে পারি না” এদিক দিয়ে আমাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আবার অনেকে কিছু সম্মাননা পান মৃত্যুর পরে। কিন্তু তাদের কর্মজীবন, ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে আমরা কতজনই জানি? ![]() নুর মোহাম্মদ শাওন তাদের কাছ থেকে শিখার অনেক কিছু আছে কিন্তু তা জানার বা জানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কতটুকু? এ ক্ষেত্রে তাদের জীবনী ভিত্তিক চলচিত্র একটি প্রচার মাধ্যম হবে কারণ, তাদের জীবনবৃত্তান্ত বই আকারে প্রকাশ করা হলে তা শুধু শিক্ষিত সমাজের কিছু অংশের কাছেই ব্যাপি লাভ করবে। অন্যদিকে, তাদের জীবনীভিত্তিক চলচিত্র তৈরি হলে তা সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই খুব সহজেই পৌছাবে। তাই বলে আমি বই প্রকাশের বিপক্ষে না । বই প্রকাশের পাশাপাশি চলচিত্র নির্মাণ হলে তা সর্বশ্রেণীর মানুষের কাছে সহজেই পৌছায়। কারণ এখন বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে কোনো একটি বিষয়ে জানার জন্য মানুষ বই পড়ার ছেয়ে যদি ইউটিউবে সেই বিষয়টি পেয়ে যায় তাহলে সেখান থেকেই মানুষ তথ্য সংগ্রহের দিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর বিনোদনের মাধ্যে কোনো বিষয় জানলে সেই বিষয়টি মানব মস্তিষ্কে বেশি প্রভাব পেলে। বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। চলচ্চিত্র শিল্পকে ভালো অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন উদ্যেগ নেওয়া হয়েছে কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। হল মালিক সমিতি হল বাঁচাতে ভারতীয় হিন্দী সিনেমা আমদানী করে প্রদর্শনের উদ্যেগ নিচ্ছে। বর্তমানে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় মানুষ বিভিন্ন দেশের মুভি সহজেই দেখতে পাচ্ছে ফলে মানুষের এখন আর প্রচলিত মসলাদার ছবিতে আগ্রহী নয়। তারা মৌলিক কাহিনীর প্রতি আগ্রহী। বাংলাদেশেও মৌলিক কাহিনীনির্ভর সিনেমার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ‘আয়নাবাজি’, ‘ঢাকা এ্যাটাক’ সিনেমাগুলো। তাই আমাদেরকে চলচ্চিত্র শিল্পের ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার হিসেবে মৌলিক গল্পের দিকে জোর দিতে হবে এক্ষেত্রে গুণীদের বায়োগ্রাফী হতে পারে এই মৌলিক গল্পের একটি বড় উৎস। (প্রকাশিত
লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, ডেল্টা
টাইমস্ কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার ডেল্টা
টাইমস্ কর্তৃপক্ষ নেবে না। ) নুর মোহাম্মদ শাওন শিক্ষার্থী, লোক প্রশাসন বিভাগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। ইমেইল: [email protected] ডেল্টা টাইমস্/নুর মোহাম্মদ শাওন/সিআর/জেড এইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |