ডা. মো: রায়হান পিএএ’র সেই ব্যাতিক্রমী উদ্যোক্তা 'পাঠশালা' পরিদর্শনে যুগ্ম সচিব
শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
|
বগুড়ার শেরপুরে গড়ে উঠেছে অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড (হরমোন) ধরনের ওষুধ ব্যবহারমুক্ত দেশী মুরগী পালনে প্রশিক্ষণ পাঠশালা ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’। উপজেলা শহরের টাউন কলোনি এবং গাড়িদহ ইউনিয়নের চকপাথালিয়া গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে এই পাঠশালা। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সারা দেশ থেকে আসা উদ্যোক্তাদের নিয়ে চলে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এ পাঠশালায় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়ড ব্যবহার না করেই দ্রুত সময়ে দেশি মুরগির অধিক মাংস ও ডিম উৎপাদন, বাণিজ্যিক খামার গড়া ও বাজারজাতকরণের নানা কৌশল শেখানো হয় হাতে কলমে। ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ পাঠশালার উদ্ভাবক শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা.মো.রায়হান পিএএ । ডা. মো. রায়হান ২০১৫ সালে ভোলার মনপুরা উপজেলা থেকে বদলী হয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগদান করেন। এ উপজেলায় এসে জানতে পারেন স্থানীয় আমজাদ হোসেন, আবদুল কাদের ও এনামুল হক তাঁদের বাড়িতে সনাতন পদ্ধতিতে ৫০-৬০টি করে দেশি মুরগি পালেন। তিনজনকে নিজ অফিসে ডেকে আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে দেশি মুরগির খামার করার কথা বলেন, তাদের সায় থাকায় করেন প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা। অল্প দিনেই সফল হন তাঁরা। তাঁদের সফলতার কথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা উপজেলায়। শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে উদ্যোক্তাদের হিড়িক পড়ে যায়। ইতিমধ্যে এ পাঠশালায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলাতেই গড়ে উঠেছে ১ হাজার দুশোর অধিক খামার। এ পাঠশালায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধড়মোকাম গ্রামের জাকারিয়া ইসলাম (২২) ইতিমধ্যে একজন সফল খামারির খেতাবও পেয়েছেন। দেশজুড়ে শিক্ষিত বেকারদের মাঝে এ উদ্যোগ পাঠশালার কর্মকান্ড ছড়িয়ে পড়ে। পাঠশালাটির প্রতি আগ্রহ বাড়ায় চট্টগ্রামের বোয়ালখালি থেকে ইনাম ইলাহী চৌধুরী, যশোরের অভয় নগরের হোসনে আরা, আবিদ হাসান, কুমিল্লার দেবিদ্বারের আকরাম হোসেন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আসিফ, টাংগাইলের মধুপুর ভুয়াপুরের ফরিদ, সাবির দেওয়ানসহ তাদের মত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আসছে বহু শিক্ষিত বেকারেরা। অন্যদিকে, ডাঃ মো: মো. রায়হান পিএএ’র উদ্যোগে অভিভূত হয়ে ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ নামের উদ্যোক্তা পাঠশালাটি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ২০টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ (সমন্বয় ও সংস্কার)। এরই ধারাবাহিকতায় (২৪ ফেব্রুয়ারী) বুধবার সন্ধ্যায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম ফেরদৌস আলম এক সরকারী সফরে ডা. মো: রায়হানের উদ্ভাবিত "স্বপ্ন ছোয়ার সিঁড়ি মডেল ও উদ্যোক্তা পাঠশালা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ লিয়াকত আলী সেখ, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাঃ রফিকুল ইসলাম তালুকদার, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র বগুড়ার উপ-পরিচালক ডাঃ মোঃ সাজেদুল ইসলাম, শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আমির হামজা, প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গাউসুর রহমান আলাল, কৃষিবিদ সানজিদা হক, ভেট'স সোসাইটি অব বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাওহীদুল ইসলাম সুমন, পুসাসের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শওকত শামীমসহ গনমাধ্যম ব্যাক্তিবর্গ। দেশের জন্য ইতিবাচক বাস্তবিক কর্মকান্ডে অবদান রাখায় "স্বপ্ন ছোয়ার সিঁড়ি" মডেল ও উদ্যোক্তা পাঠশালার ভূয়সী প্রশংসা করে যুগ্ন সচিব বলেন, নিরাপদ প্রাণিজ উৎপাদনে এবং টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে "স্বপ্ন ছোয়ার সিঁড়ি" মডেল ও উদ্যোক্তা পাঠশালা জাতীয় পর্যায়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের সাথে সাথে সামনে এগিয়ে যাবে। উল্লেখ্য, দেশি মুরগির জাত সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং স্বল্প বিনিয়োগে উদ্যোক্তা তৈরিতে অবদান ও জনসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রাখায় ডা.মো.রায়হান পিএএ ইতিমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে (ব্যক্তিগত শ্রেণি) জনপ্রশাসন পদক, (আর-৬২ তম) বুনিয়াদী প্রশিক্ষণে ২য় স্থান অর্জন করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে স্বর্ণপদক, নাগরিক সেবায় শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবনী কর্মকর্তার স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৯ সালে বগুড়া জেলা প্রশাসন ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও পদক অর্জন করেছেন। একই বছর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের পক্ষ থেকে ইনোভেশন শোকেসিং শ্রেষ্ঠ পাইলটিং উদ্যোগ নির্বাচিত হন। ডেল্টা টাইমস্/শহিদুল ইসলাম শাওন/সিআর/জেড এইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |