বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর ভয়ের নীতি কায়েম কাম্য নয়
তানভীর আহমেদ রাসেল
|
সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি ব্যাচের ৪০ জন শিক্ষার্থীকে একসঙ্গে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিভাগটি। ভয়াবহ সেশনজটের কবলে পড়ায় তা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করা, সরাসরি উপাচার্যের নিকট অভিযোগ দেওয়া ও ফেইসবুকে সংশ্লিষ্ট বিষয়কে প্রসঙ্গ টেনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও বিভাগীয় শিক্ষকদের উদাসীনতা নিয়ে লেখালেখি করায় এমন ন্যাক্কারজনক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিভাগটি। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এই ঘটনাটি বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া কিংবা মুক্ত মত প্রকাশের প্রচেষ্টাকে রুদ্ধ করার একটি খন্ডচিত্র মাত্র। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে রয়েছে জ্ঞানচর্চার উন্মুক্ত অবকাশ ও স্বাধীন চিন্তা বিকাশের অফুরন্ত সুযোগ। রয়েছেন অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলী, যাঁদের পাঠদান ও আন্তরিকতায় সমৃদ্ধ হবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। পাশাপাশি বিকশিত হবে মনন ও মননশীলতা। কিন্তু বর্তমান এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি আসলেই তাই হচ্ছে?নানান অসংগতি, অসততা, আধিপত্য বিস্তার ও ভয়ের নীতি কায়েম করে ক্লাসরুমগুলো সংকুচিত করার মাধ্যমে ক্রমেই শিক্ষার পরিবেশ ও সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে, অনেক বিভাগের শিক্ষকদের আন্তরিকতা যেমন প্রশংসার দাবিদার তেমনি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা বিভাগের শিক্ষকদের উদাসীনতা ও আন্তরিকতা অভাবে শিক্ষার্থীদের পদে পদে ভোগান্তি ও মাসের পর মাস সেশনজটের বিষফোঁড়া বহন করা অনাকাঙ্খিত ও অত্যন্ত দুঃখজনক। এসব অসংগতি কিংবা উদাসীনতার বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা সোচ্চার হলে এক ধরনের হুমকির মধ্যে রুদ্ধ করা হয় শিক্ষার্থীদের মত প্রকাশের অধিকার। স্বাধীন চিন্তা বিকাশের প্রচেষ্টাকে দামিয়ে দেওয়ার অপকৌশলে হিসেবে কখনো সিজিপিএ এর ভয়, কখনো শোকজ কিংবা কখনো অন্য কোন হীন প্রচেষ্টা যা কিনা উচ্চ শিক্ষার প্রকৃত অর্থের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞান চর্চার আঁতুড়ঘর। জ্ঞান তৈরি ও জ্ঞান বিতরণের কারখানা। একাডেমিক জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে গবেষণাকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি নিজেদের মুক্ত চিন্তা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে সেবা দিবে পুরো দেশ তথা জাতিকে যা নিশ্চিত হয় জ্ঞানচর্চা, স্বাধীন ও সৃজনশীল মুক্তচিন্তা বিকাশের যথার্থ পরিবেশ ও শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষকদের মানষিকতার উপর, দমন পীড়ন বা ভয়ের নীতি কায়েম করার মাধ্যমে নয়। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে আগামির তারুণ্যের বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য উচ্চ শিক্ষার সকল মানসম্মত সুযোগ নিশ্চিত করতে সরকার, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসাশনের আন্তরিক ভূমিকার বিকল্প নেই। লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ডেল্টা টাইমস্/তানভীর আহমেদ রাসেল/সিআর/আরকে |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |