কুয়েটের তদন্ত প্রতিবেদন জমা
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সাজার সুপারিশ
ডেল্টা টাইমস্ ডেস্ক:
|
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) লালন শাহ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং পুলিশি তদন্তের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর সিন্ডিকেট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মহিউদ্দিন আহমাদ কালের কণ্ঠকে জানান, তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্তভাবে তাঁরা তদন্ত করেছেন। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ড. মো. সেলিম মারা যাওয়ার দিনের ঘটনা ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা যে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে একাডেমিক শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁরা সরাসরি যুক্ত, এমনটা প্রমাণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাঁর মৃত্যু মানসিক পীড়নের ফলে হলেও অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণে উপযুক্ত প্রমাণ তদন্ত কমিটির কাছে নেই। এ কারণে পুলিশি তদন্তের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। পুলিশি তদন্তে অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন প্রফেসর ড. মো. আলহাজ উদ্দীন, প্রফেসর ড. খন্দকার মাহবুব হাসান, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার দেবাশীষ বসাক এবং কেএমপির (খুলনা মেট্রাপলিটন পুলিশ) অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. শাহাবুদ্দীন। অভিযোগ ওঠে, ছাত্রলীগ কুয়েট শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বে গত ৩০ নভেম্বর ৪০-৪২ জন নেতাকর্মী ড. সেলিমকে রাস্তা থেকে ডেকে তাঁর রুমে নিয়ে যান। তাঁরা হলের ডাইনিং ম্যানেজার নিযুক্তি নিয়ে ড. সেলিমকে চাপ দেন এবং তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। মানসিক চাপ সইতে না পেরে বাসায় ফেরার পর ড. সেলিম হৃদরোগে আক্রান্ত হন ও মৃত্যুবরণ করেন। শিক্ষক সমিতি ও পরিবারের পক্ষ থেকে এই মৃত্যুকে অস্বাভাবিক বলে দাবি করা হয়েছে। প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে কুয়েট কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগ নেতা সেজানসহ ৯ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করে। ড. সেলিমের মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই ১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রামে নিজ বাড়ির কবরস্থানে দাফন করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর লাশ গত ১৪ ডিসেম্বর কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়। এদিকে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং হলগুলো খালি করার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। গত ২৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অতি দ্রুত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়; পাশাপাশি আগামী ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া এবং ৯ জানুয়ারি থেকে সব একাডেমিক কার্যক্রম যথারীতি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা স্যারের মৃত্যুর পর পাঁচটি দাবি করেছিলাম। প্রথম দাবি ছিল সন্দেহভাজনদের সাময়িক বহিষ্কার করা।’ শিক্ষক সমিতির অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে সব দায়-দেনার বাইরে শিক্ষকের পরিবারকে এক কোটি টাকার আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া; ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শনাক্ত করে ক্যাম্পাস থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা; ক্যাম্পাস থেকে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা এবং শিক্ষকের মৃত্যুর বিষয়টি আইনিভাবে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করা। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/জেড এইচ
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |