সোমবার ২ অক্টোবর ২০২৩ ১৭ আশ্বিন ১৪৩০

লঞ্চ ট্রাজেডি: সরকারি কর্মকর্তারা কেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে ?
যৌথ বিবৃতিতে ১০ বেসরকারি সংগঠনের প্রশ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:১৪ পিএম আপডেট: ২৯.১২.২০২১ ৫:২৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

ঝালকাঠিতে যাত্রীবোঝাই লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মালিকসহ কয়েকজন শ্রমিক-কর্মচারির বিরুদ্ধে মামলা হলেও সংশ্লিষ্ট কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো মামলা হয়নি। এমনকি বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিকে ফিটনেস প্রদানকারী শিপ সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ, গভীর উদ্বেগ ও হতাশা ব্যক্ত করে পরিবেশ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ও পরিবহন বিষয়ক ১০টি বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে জোরালো প্রশ্ন উত্থাপন করে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কেনো? বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলোর নেতারা এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন। 

তদন্ত কমিটি, দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের বেঁচে যাওয়া যাত্রী এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি যান্ত্রিক ও অবকাঠামোগত- দুইদিন থেকেই যথেষ্ট ত্রুটিপূর্ণ ছিল। লঞ্চে মোট ৮৭টি কেবিন থাকলেও বার্ষিক সার্ভের সময় (ফিটনেস পরীক্ষা) নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের ঢাকা কার্যালয়ের (সদরঘাট) শিপ সার্ভেয়ার ৮১টি কেবিন উল্লেখ করেছেন। সার্ভে সনদে যে সংখ্যক লাইফবয়া, লাইফজ্যাকেট ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের উপস্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সবগুলোই অনেক কম ছিল। এছাড়া লাইফবয়াগুলো ছিল যাত্রীদের নাগালের বাইরে। ত্রুটিপূর্ণ ইঞ্জিনের পাশাপাশি লঞ্চটির ইঞ্জিনকক্ষও ছিল অনিরাপদ। 

বিবৃতিদাতারা বলেন, রাতে ৪২০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এমভি অভিযান-১০ প্রায় ৮০০ যাত্রী বহন করলেও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের সদরঘাটে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ‘মাত্র ৩৫০ যাত্রী আছেন’ উল্লেখ করে ভয়েজ ডিক্লারেশন (টার্মিনাল ছাড়ার অনুমতি) দিয়ে লঞ্চটিকে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএ এবং নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট পরিদর্শকরাও জননিরাপত্তামূলক বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। অথচ ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার জন্য দুটি সংস্থার সংশ্লিষ্ট সকলকে বাদ দিয়ে লঞ্চটির মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারদের বিরুদ্ধে নৌ আদালতে মামলা করা হয়েছে। 

আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য এবং কেউ-ই আইনের উর্ধ্বে নন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, মালিক ও শ্রমিকদের দোষত্রুটি থাকলে তদন্তে অবশ্যই তাঁরা দোষী সাব্যস্ত হবেন, নৌ আদালতে কিংবা প্রচলিত আইনে তাঁদের শাস্তি হবে- এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু যাঁদের চরম দায়িত্বহীনতার কারণে এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হলো তাঁদেরকে আইনের আওতায় না আনা এমনকি এতোদিনেও দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার না করা ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের রক্ষার অপকৌশল বলে দৃশ্যমান হচ্ছে।      
 
বিবৃতিদাতারা হলেন- নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুর রহমান সেলিম, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগের সভাপতি শেখ ওমর ফারুক, বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ও কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ সিকদার, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. হানিফ খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইনসুর আলী, নিরাপদ নৌপথ বাস্তবায়ন আন্দোলনের সদস্যসচিব আমিনুর রসুল বাবুল, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, মিডিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডেভেলপমেন্টের (মেড) নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম সবুজ, যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সামসুদ্দীন চৌধুরী এবং পুরনো ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।  

২৫ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা-বরগুনা নৌপথের ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবোঝাই এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটে। এতে এ পর্যন্ত ৪৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঢাকা ও বরিশালের হাসপাতালে প্রায় ৮০ জন চিকিৎসাধীন। এছাড়া বহু যাত্রী এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাদের স্বজনেরা দাবি করেছেন।   



ডেল্টা টাইমস্/সিআর/আরকে

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬১, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com