স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফার্মাসিস্টের অংশগ্রহণ জরুরি
নাজমুল ইসলাম
|
![]() স্বাস্থ্যসেবা খাতে ফার্মাসিস্টের অংশগ্রহণ জরুরি গ্রিক চিকিৎসক গ্যালেনকে বলা হয় ‘ফাদার অব ফার্মাসিস্ট’। তিনিই সর্বপ্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানে ফার্মাসিস্টের ভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা গভীরভাবে উপলব্ধি করেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক জন মরগান মেডিকেল সায়েন্স থেকে ফার্মেসিকে আলাদা বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের আলাদা পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৬ সালে ফার্মেসি অধ্যাদেশ (The Pharmacy Ordinance, 1976) জারি করে ফার্মেসিকে একটি পেশাগত বিষয় এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাজীবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। এছাড়াও বর্তমানে ১৪টি সরকারি ও ২৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর গড়ে চার হাজার ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট বের হয় এবং বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল থেকে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছে। তবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে না। এতে সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য সেবা থেকে। জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৬-এর ৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ওষুধের যৌক্তিক ও নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ৪.৩ অনুচ্ছেদের ‘ঙ’ (ব) উপ-অনুচ্ছেদে দেশে পর্যায়ক্রমে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে ‘হসপিটাল ফার্মেসি’ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তদুপরি কতৃপক্ষের উদাসীনতায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ফার্মেসি ও কমিউনিটি ফার্মেসি পদে নিয়োগ/পদায়ন অনিশ্চিত হয়ে আছে। এই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি খাতে পদায়ন না হওয়ায় গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা সেবা প্রদান করে স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সমৃদ্ধ করতে পারছে না। ফলে দেশের আপাময় জনগণ উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে ডাক্তার, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের ভূমিকা যেমন অপরিসীম, ঠিক তেমনিভাবে হাসপাতালে ওষুধের সংরক্ষণ, গুণগত মান নিয়ন্ত্রণ, সঠিক ওষুধ নির্বাচন, ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও ওষুধ সেবন-পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের জন্য গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টের ভূমিকাও অপরিহার্য। সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবা খাত মানেই ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্টদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাস্থ্যসেবা টিম। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের পদায়ন/নিয়োগ হয় না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতালে কর্মরত ফার্মাসিস্টদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, মালয়েশিয়ায় ফার্মাসিস্ট ও জনসংখ্যার আনুপাতিক হার ১:২৩১৫, সিঙ্গাপুরে ১:২১৩০, ইংল্যান্ডে ১:১০০০ এবংথাইল্যান্ডে প্রতি ১০ শয্যার বিপরীতে একজন ফার্মাসিস্ট রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যার সংখ্যা ৫১,৩১৬টি। এই বিপুল সংখ্যক হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও হেলথ টেকনোলজিস্ট থাকলেও নেই একজনও নেই গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট। লেখক: ফার্মেসি বিভাগ (৩য় বর্ষ), পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ডেল্টা টাইমস্/সিআর/এমই
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |