সাবেক অডিটর মজিবুরের বিরুদ্ধে
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে সরকারি সুবিধা ভোগের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রকাশ: রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫৩ এএম আপডেট: ১২.০১.২০২৫ ১২:০৯ পিএম

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে সরকারি সুবিধা ভোগের অভিযোগ

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদে সরকারি সুবিধা ভোগের অভিযোগ

সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় মুক্তিযুদ্ধ না করেও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ, বিজ্ঞান, তথ্য এবং প্রযুক্তি অডিট অধিদপ্তরের সাবেক অডিটর মো. মজিবুর রহমান। তার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ প্রদর্শন করে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৯ সালের ২ জুলাই জুনিয়র অডিটর পদে চাকরিতে যোগদানের সময় তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচয় দেন। তবে কোনো মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র দাখিল করতে পারেননি। তার সার্ভিস বইয়ের কোথাও মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগের উল্লেখ নেই। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তখন থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে।


চাকরিতে যোগদানের পর থেকে মজিবুর রহমান বিভিন্ন সময়ে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যান। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি চাকরির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর আবেদন করেন। এই আবেদনে তিনি দাবি করেন, তার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদে জমা রয়েছে। কিন্তু যখন সনদ যাচাই করা হয়, তখন দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো সনদ ইস্যু করা হয়নি।


২০২০ সালে মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, তিনি জাল সনদপত্র দাখিল করেছেন। তদুপরি, এলপিআরে যাওয়ার পরও বিনা অনুমতিতে সরকারি বাসায় অতিরিক্ত ৮ বছর বসবাস করেছেন। এই সময়ে তার কাছ থেকে বাসা ভাড়া আদায় এবং ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য প্রতারণা করেছেন।

মজিবুর রহমান ২০২১ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করে অতিরিক্ত দুই বছর চাকরিকাল গণনা এবং পেনশন সুবিধা চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালত তার পক্ষে রায় প্রদান করে। তবে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বা গেজেটের কোনো সঠিক প্রমাণ মেলেনি। এতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে দ্বন্দ্ব এবং প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়।


২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা সনদের পক্ষে কোনো তথ্য বা প্রমাণ নেই। সরকারি তালিকায় তার নাম পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি ও আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।


মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তার পেনশন সুবিধা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পাশাপাশি তার ভুয়া সনদের বিষয়টি আইনানুগভাবে তদন্তের জন্য পুনরায় নির্দেশ দেওয়া হয়।


মজিবুর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা দাবির সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হওয়ায় তার পেনশন সুবিধা এবং অন্যান্য আর্থিক বিষয় সমাধানে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।


 জানা গেছে, মজিবুর রহমানের সনদপত্র যাচাইকালে চাকরিতে প্রবেশকালে ন্যূনতম যোগ্যতা এইচএসসি হলেও সনদপত্রে বেশ কিছু অসংগতি দেখা গেছে। তাঁর এইচএসসির সনদের রেজিস্ট্রেশন যাচাইয়ের জন্য যশোর শিক্ষা বোর্ডে চিঠি পাঠিয়েছে অডিট কার্যালয়।


সরকারি সুযোগ-সুবিধা অর্জনের জন্য ভুয়া সনদপত্র দাখিল এবং প্রতারণার মাধ্যমে সুবিধা নেওয়ার এই ঘটনা দৃষ্টান্তমূলক তদন্তের দাবি রাখে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।


দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড রোধে এই ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য।


ডেল্টা টাইমস/সিআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com