বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব ও অর্থনৈতিক সংকট
রায়হান আহমেদ তপাদার
|
আরেকটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হলো ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের পর একাধিকবার নীতি সুদহার কমানো হয়েছে। সুতরাং প্রশ্ন উঠেছে, ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের নীতি সুদহার কি ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে কম হবে? এফটি মনে করছে, এটি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে বাস্তবতা হলো, ট্রাম্প শুল্ক বৃদ্ধি, কর্পোরেট করের হার কমানোসহ যেসব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেগুলি বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে। ফেডারেল রিজার্ভ সতর্ক থাকবে বলে এফটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার কমানোর ধারায় অব্যাহত রাখার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের শেষভাগে বিশ্বের অর্থনীতির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল বিটকয়েনের মূল্য বৃদ্ধি। বিশেষ করে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম বেড়েছে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিটকয়েনের দাম দুই লাখ ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডলারকে দুর্বল করে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বাড়ানোর প্রচেষ্টাও উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক বাজারকে বিপদে ফেলতে পারে। এছাড়া, আমেরিকান ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করার যেকোনো চেষ্টা মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে দিতে পারে। ভূ-রাজনৈতিক কারণের প্রভাবও অনিশ্চিত। ট্রাম্প অর্থনীতি এবং বাজারকে প্রভাবিত করার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের মতো ঝুঁকি নিতে পারেন। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে যদি ট্রাম্প তার অশুভ পরামর্শসমূহ অনুসরণ করেন, তবে তাকে বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। ২০২৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো হতে পারে, তবে সামগ্রিকভাবে কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের প্রভাব বিভিন্ন কারণে খারাপ হতে পারে। পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতির ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কিছু নীতির কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়তে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমতে পারে। এরপর, যদি ট্রাম্প তার নিয়ন্ত্রণহীন এজেন্ডাকে সীমিত রাখতে পারেন, তবে আমলাতন্ত্রের জটিলতা দূর হতে পারে এবং প্রতিযোগিতা বাড়বে, ফলে দীর্ঘ মেয়াদে দাম কমবে। তিনি চাইছেন, প্রতিদিন ৩ মিলিয়ন ব্যারেলের সমান তেল ও গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে, যা মূল্য কমাতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া, কেউ কেউ মনে করেন, পূর্ববর্তী প্রশাসনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তুকি ছাড়াই সবুজ শক্তিতে রূপান্তর করা সম্ভব। ট্রাম্পের প্রযুক্তিবিদরা তাকে পরামর্শ দিচ্ছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, অটোমেশন এবং বায়োমেডিকেল গবেষণা থেকে শুরু করে ভবিষ্যতের অনেক শিল্পে আমেরিকা উন্নতি করবে। তবে, অভিবাসন বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে শ্রমব্যয়ের বৃদ্ধি এবং মূল খাতে শ্রমের ঘাটতির ঝুঁকি বাড়বে। যদি ট্যাক্স কমানো হয় এবং অন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতি কার্যকর করা হয়, তবে তা পরবর্তী দশকে পাবলিক ঋণ প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করতে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে দেবে এবং দীর্ঘমেয়াদী সুদের হার বাড়াতে সহায়ক হবে। ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলোও অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল। ট্রাম্পের নীতিগুলোর পরিণতি, ইতিবাচক বা নেতিবাচক, তার সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করবে। বিশ্বের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সিদ্ধান্তও ট্রাম্পের নীতির প্রভাবের শিকার হতে পারে। যেমন, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড এবং জাপান তাদের সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে, যা পরিস্থিতির ওপর আরও নির্ভরশীল। বর্তমানে, যেহেতু বিশ্বের অর্থনীতি এবং বাজারের ভবিষ্যৎ কিছুটা অনিশ্চিত, তাই ট্রাম্পের নীতির বিপরীতে নানা প্রতিবন্ধকতা এবং চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য। ডেল্টা টাইমস/রায়হান আহমেদ তপাদার/সিআর |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |