কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ রাজনীতির মধ্যেও ছাত্র আন্দোলনের উত্থান
আকাশ আল মামুন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়:
|
![]() . জুলাই বিপ্লবের পর শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও প্রক্টরিয়াল বডি ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেছে। তবুও ক্যাম্পাসের বাইরে ছাত্ররাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ২০০৬ সালের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভা ও সর্বশেষ ১০০তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্ররাজনীতিকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর সময় তাদের দলীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়। তবে এসব আইনি বিধিনিষেধ সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধ রাখার দাবি জানালেও, সংগঠনগুলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ মনে করেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত ও আদর্শকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। সুস্থ ধারার রাজনীতির মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরি করা সম্ভব। সরকার পরিবর্তনের পর আমরা গত ১৭ বছরের স্বৈরতন্ত্র থেকে মুক্তি পেয়েছি। এখন সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে।" ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, "আমাদের রাজনীতি আদর্শিক, যা কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পরিচালিত। গত ১৫ বছরে দেশে সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি ছিল না। শিক্ষার্থীরা যদি চায় ক্যাম্পাসে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হোক, তবে আমরা সেটিকে সাধুবাদ জানাবো। শিক্ষার্থীরা যদি ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আমরা সেখানে আমাদের প্রতিনিধি দেব।" বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোজাম্মেল হোসেন আবির বলেন, "লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থের চেয়ে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। এর একমাত্র সমাধান হলো দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠা করা। ছাত্রসংসদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা সম্ভব।" আরেক সমন্বয়ক জান্নাতুল ইভা বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির প্রভাব বন্ধ করা জরুরি। ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের স্বার্থ রক্ষায় নেতৃত্ব দিতে পারবে।" ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিমুক্ত হওয়া উচিত। দলীয় রাজনীতির পরিবর্তে ছাত্রসংসদ গঠনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মতামত ও অধিকার সুরক্ষিত হবে।" বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন পাটাতনের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ মনে করেন, "ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের নতুনভাবে ভাবা উচিত। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে দলীয় রাজনীতি না থাকলেও ছাত্রসংসদ থাকা জরুরি।" প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিম জানান, "১০০তম সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোনো দলীয় ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে না। তবে শিক্ষার্থীরা যদি ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য লিখিত আবেদন করেন, আমরা তা বিবেচনা করবো।" কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের মতে, দলীয় রাজনীতির প্রভাব কমিয়ে ছাত্রসংসদ প্রতিষ্ঠাই একমাত্র সমাধান। এ ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বগুণ বিকাশে ভূমিকা রাখবে এবং দলীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষায় কার্যকর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি এবং শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো এটাই প্রমাণ করে যে, রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি সুষ্ঠু নেতৃত্ব তৈরির বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |