নারীর হাত ধরে নারীদের এজেন্সি তৈরির পথ কতদূর
সারজানা আক্তার লিমানা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬:০৮ পিএম আপডেট: ১৭.০১.২০২৫ ৬:১৭ পিএম

.

.

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তিন দিনব্যাপী শীতকালীন বইমেলায় গিয়েছিলাম। প্রায় ৭-৮টি স্টল ঘুরে দেখার সময় নারী বিষয়ক বইগুলো বিশেষভাবে চোখে পড়ল। বইগুলোর শিরোনাম— নারীর পর্দা, নারী সাহাবীদের জীবনকথা, নারী সাহাবীদের আদর্শ, সোনালি যুগের মায়েরা, মহিলাদের নাজাতের উপায় ইত্যাদি। কিন্তু লক্ষ্য করলাম, এসব নজরকাড়া বইয়ের লেখক প্রায় সবাই পুরুষ। এতগুলো স্টল ঘুরেও মাত্র ২-৩ জন নারী লেখকের বই চোখে পড়ল।

অবাক করার মতো বিষয়, নারীর পর্দা কেমন হওয়া উচিত, নারী সাহাবীদের জীবন কেমন ছিল, নারী কী করলে জাহান্নামী হবে, নারীর মুক্তির উপায়— এককথায় নারীর জীবনযাপনের কোড অব কন্ডাক্ট নির্ধারণের ভারও পুরুষদের হাতে। তাহলে, নারীর এজেন্সি কোথায়?


ইসলামের প্রাথমিক যুগ কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। ইসলামের ইতিহাসে হযরত আয়েশা (রা.), উম্মে দারদা (রা.), ফাতিমা বিনতে মোহাম্মদ (রা.), জয়নব বিনতে কামাল, ফাতিমা আল-বাতায়াহিয়্যাহ, লুবনা অভ কর্ডোভার মতো অনেক নারী মুহাদ্দিস, ফকিহ, উস্তাযা পাওয়া যায়। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, নারীরা লেখালেখির ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। এটি সত্য হলেও, এর পেছনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না।


লেখালেখিতে নারীদের পিছিয়ে পড়ার কারণগুলো যেমন বিশ্লেষণ করা দরকার, তেমনি প্রখ্যাত নারী স্কলারদের অবদান মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আরও গভীর গবেষণা প্রয়োজন।


নারীর এজেন্সি বোঝার ক্ষেত্রে ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, হযরত উমর (রা.)-এর শাসনকালে মসজিদে তাঁর খুতবার সময় এক নারী সাহাবীর প্রতিবাদ।

হযরত উমর (রা.) খুতবার মধ্যে বলেন, দেনমোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৪০০ দেরহাম নির্ধারণ করা হবে। খুতবা শেষে এক নারী সাহাবী প্রশ্ন করেন:"হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি কীভাবে ৪০০ দেরহামের বেশি দেনমোহর নির্ধারণ নিষিদ্ধ করতে পারেন? কুরআনে আল্লাহ তাআলা ক্বিনতার (প্রচুর পরিমাণ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। এটি দেখিয়ে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা ইচ্ছামতো দেনমোহর নির্ধারণ করতে পারো। সুতরাং আপনি কীভাবে এটি সীমাবদ্ধ করেন?"

এই প্রশ্ন শুনে হযরত উমর (রা.) মসজিদে পুনরায় উঠে বলেন: "সত্য বলার জন্য আল্লাহ ঐ নারীর প্রতি রহম করুন। আমি ভুল করেছি। এখন থেকে তোমরা যত ইচ্ছা দেনমোহর দিতে পারো।"


এই ঘটনায় নারীর উপস্থিতি না থাকলে কি নারীর অধিকার রক্ষা সম্ভব হতো? হযরত উমর (রা.) নারীর মতামতকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁর সিদ্ধান্ত সংশোধন করেছিলেন। তবে বর্তমান যুগে পুরুষ লেখকরা নারীদের বিষয়ে লেখার আগে তাদের এজেন্সি স্বীকার করেন কিনা তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।


প্রাচ্য-ইসলাম-নারী নিয়ে কাজ করা আসমা বার্লাস, কেসিয়া আলী প্রমুখ গবেষকরা নারীর এজেন্সি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সাবা মাহমুদ সমাজ-নৃতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফলে, নারীর এজেন্সি নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে ইসলামবিদ্বেষ বা নারীবাদ হিসেবে অভিহিত না করে যৌক্তিক আলোচনার পথ সুগম করতে হবে।


প্রশ্ন তোলার পরিবেশ না থাকলে নারীর এজেন্সি যেমন রক্ষা পাবে না, তেমনি নতুন জ্ঞান উৎপাদনের পথও রুদ্ধ হবে। সুতরাং, নারীর এজেন্সি তৈরির পথে আমাদের ভাবনা ও কাজ যৌক্তিক হতে হবে এবং সমাধানের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত।



লেখক: সারজানা আক্তার লিমানা 
ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ডেল্টা টাইমস/লিমানা/সিআর

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
  এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ  
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।

ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com
সম্পাদক ও প্রকাশক: মো. জাহাঙ্গীর আলম, নির্বাহী সম্পাদক: মো. আমিনুর রহমান
প্রকাশক কর্তৃক ৩৭/২ জামান টাওয়ার (লেভেল ১৪), পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০ থেকে প্রকাশিত
এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত।
ফোন: ০২-৪৭১২০৮৬০, ০২-৪৭১২০৮৬২, ই-মেইল : deltatimes24@gmail.com, deltatimes24@yahoo.com