শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার: একটি বিতর্কিত অধ্যায়
রহমান মৃধা:
|
. পরিবারের আন্তর্জাতিক বাসস্থান এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা দেশের জনগণের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বিশ্বের নানা দেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। আমেরিকা, লন্ডন, ফিনল্যান্ড—এ দেশগুলোতে তাদের সম্পদ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ, এ দেশের গরিব জনগণ দিনের পর দিন তাদের মৌলিক চাহিদার জন্য সংগ্রাম করছে। এই দুর্নীতি, অর্থ পাচার এবং ক্ষমতার অপব্যবহার দেশকে গভীর সংকটে ঠেলে দিয়েছে। ১. সায়েম ওয়াজেদ জয়ের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সায়েম ওয়াজেদ জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তাকে দেশের বিভিন্ন ডিজিটাল প্রকল্পের ‘মস্তিষ্ক’ হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, তার কর্মকাণ্ডের পরিণতি দেশের জনগণের জন্য বিপর্যয়কর। অভিযোগ: • তার নামে আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যে সম্পত্তি রয়েছে, যা তার প্রাপ্ত অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য যথেষ্ট। • তার বিদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক নয়। • ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থের লুণ্ঠন এবং তা বিদেশে পাচারের বিষয়টি বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। ২. শেখ রেহানার বিলাসবহুল জীবন (লন্ডন) শেখ রেহানা, যিনি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন, তার বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং সম্পত্তির পরিমাণ একেবারে অস্বাভাবিক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সম্পদ দেশের জনগণের আর্থিক শোষণের ফল। অভিযোগ: • লন্ডনের অভিজাত এলাকায় তার বিশাল সম্পত্তি রয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণের অর্থের জালিয়াতি ও দুর্নীতির ফল। • তার সন্তানদের জীবনযাপন এমনভাবে প্রমাণিত যে, তা রাষ্ট্রীয় অর্থের পাচারের সাথে জড়িত। ৩. শেখ রেহানার সন্তানদের বিদেশি কর্মকাণ্ড (ফিনল্যান্ড ও লন্ডন) শেখ রেহানার সন্তানরা ইউরোপে বসবাস করছেন এবং তাদের জীবনযাপন কোনো সাধারণ পরিবারের সন্তানদের জন্য কল্পনাতীত। অভিযোগ: • ফিনল্যান্ডে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে, যা সরাসরি দেশের জনগণের টাকা লুটের ফল। • তাদের বিলাসী জীবনযাপন এবং সে অর্থের উৎস জনগণের কাছে অজানা। দুর্নীতির মূল কৌশল: পরিবারকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে একেবারে পরিবারকেন্দ্রিক করে তুলেছে, যাতে দেশে কোনো গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা স্থাপন না হতে পারে। প্রকৌশলসমূহ: ১. রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের লুটপাট: • পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পসহ নানা উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ। ২. ব্যাংক লুটপাট: • রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা চুরি এবং ব্যাংকিং সেক্টর ধ্বংসের মাধ্যমে অর্থপাচারের অপকর্ম। ৩. রাজনৈতিক দমননীতি: • বিরোধীদলকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে, বিচারব্যবস্থাকে দুর্বল করে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা। অর্থ পাচার: কেবল অভিযোগ নয়, বাস্তবতা বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নাম সরাসরি এই অর্থ পাচারের অভিযোগে উঠে এসেছে। অর্থ পাচারের কিছু নির্দিষ্ট অভিযোগ: • বিলাসবহুল সম্পত্তি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, ফিনল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে তাদের নামে থাকা সম্পত্তি সরাসরি রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের ফল। • বিদেশি ব্যাংকে অর্থ গচ্ছিত রাখা: সুইস ব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যাংকে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে, যা জনগণের কাছে এক অসহনীয় চুরির নিদর্শন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবার: একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ এ পরিবারকে ইতিহাসের পাতায় চিহ্নিত করা হবে এক দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে। তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থনৈতিক শোষণ জাতিকে এমন এক দারিদ্র্যের দিকে নিয়ে গিয়েছে, যেখান থেকে উত্তরণ এক কঠিন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবারের প্রভাব: • তারা বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে জাতির কাছে নিজেদের অগণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। • তাদের কর্মকাণ্ড জাতির প্রতি অশ্রদ্ধা এবং তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠিত নীতির সাথেও সাংঘর্ষিক। জাতির প্রতি চরম অবিচার শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের জনগণের বিশ্বাসকে বারবার ধ্বংস করেছে। তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ এবং ক্ষমতা নিজের পরিবারের পক্ষে মোড়ানো, যা শুধু ব্যক্তিগত লাভের জন্য নয়, বরং এক জাতিগত ক্ষতির সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনা এবং তার পুরো পরিবার যেভাবে দেশের মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে এবং দেশের অর্থ পাচার করেছে, তা পৃথিবীতে নজিরবিহীন ঘটনা। জাতির কাছে তারা আজীবন এক ঘৃণিত পরিবার হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকবে। আর এর জন্য দায়ী তার নিজের পরিবার। তাদের কর্মকাণ্ড জাতির স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। কীভাবে তারা দেশটার ক্ষতি করেছে, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি আজ গভীর হতাশায় নিমজ্জিত। পরিশেষে; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে “জাতির পিতা” এবং “বঙ্গবন্ধু” উপাধি প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিতর্কিত অধ্যায়। তিনি দেশের স্বাধীনতার নেতা ছিলেন, কিন্তু তার পরবর্তী শাসনামলে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো, বিশেষ করে বাকশাল গঠন এবং একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। বাকশালের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের কণ্ঠ রোধ করা হয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করা হয়, এবং জনগণের অধিকার খর্ব করা হয়। এটি শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপ্নকেই চুরমার করেনি, বরং একটি জাতির বিশ্বাসকেও আঘাত করেছে। শেখ মুজিবুর রহমানের এই কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, “জাতির পিতা” বা “বঙ্গবন্ধু” উপাধি তার জন্য প্রযোজ্য কি না, তা নতুন করে মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। এই উপাধি দিয়ে যদি কোনো নেতার ভুল কর্মকাণ্ড আড়াল করা হয়, তবে সেটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে একটি ভুল বার্তা পাঠাবে। জাতি তার ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হবে। একজন নেতার শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামের ভূমিকা নয়, তার পরবর্তী কর্মকাণ্ডও বিবেচনার যোগ্য। তাই, শেখ মুজিবুর রহমানের “জাতির পিতা” এবং “বঙ্গবন্ধু” উপাধি পুনর্বিবেচনা এবং সংশোধন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি শুধু ইতিহাসের সত্য উন্মোচনের জন্য নয়, বরং জাতির ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল আর কখনো পুনরাবৃত্তি হবে না, এবং জাতি তার ইতিহাসকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে শিখবে। আজকের প্রেক্ষাপটে এই সংশোধন জরুরি, যাতে জাতি সঠিক দিকনির্দেশনা পায় এবং প্রকৃত নেতৃত্বের মর্যাদা দিতে শিখে। এ লেখাটি যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষণীয় নথি হিসেবে কাজ করে এবং জাতি তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়—এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। ডেল্টা টাইমস/রহমান মৃধা/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |