জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত
ডেল্টা টাইমস ডেস্ক:
|
![]() জলবায়ু সংকটে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শিশুর শিক্ষা ব্যাহত শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি। “লার্নিং ইন্টারাপটেড: গ্লোবাল স্ন্যাপশট অব ক্লাইমেট-রিলেটেড স্কুল ডিসরাপশন ইন ২০২৪” শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এপ্রিল-মে মাসে তাপপ্রবাহের কারণে শিশুরা পানিশূন্যতা এবং হিটস্ট্রোকের ঝুঁকিতে পড়ে, যার ফলে দেশব্যাপী দুই সপ্তাহ স্কুল বন্ধ রাখতে হয়। মে মাসে ঘূর্ণিঝড় রিমাল এবং জুন মাসে ভয়াবহ বন্যা দেশের শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও বিপর্যস্ত করে। বন্যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে সিলেট জেলায়। তীব্র বন্যায় সেখানে ব্যাপকভাবে অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয় যার ফলে ছয় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের হিসেবে গত বছর ১২ মাসের মধ্যে জলবায়ুজনিত কারণে সিলেট অঞ্চলে শিশুরা সব মিলিয়ে আট সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর খুলনা, চট্টগ্রাম ও রংপুর–এই প্রত্যেক জেলায় শিশুরা ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত স্কুল দিবস হারিয়েছে। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “চরম আবহাওয়াজতি ঘটনাবলীর তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তা বার বার আঘাত হানার প্রবণতাও বেড়েছে। জলবায়ু সংকট এটাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এগুলোর সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের শিশুদের শিক্ষার ওপর এবং শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।” প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু সংকটের কারণে বাংলাদেশে শিখন দারিদ্র্য বাড়ছে। প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই ক্লাস অনুযায়ী তাদের কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না। ইউনিসেফ আরও জানিয়েছে, জলবায়ুজনিত কারণে শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার পাশাপাশি কন্যাশিশুদের বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বাড়ছে। বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে রয়েছে, যেখানে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “বড় সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকলে শিশুদের-বিশেষ করে কন্যাশিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়ার সুযোগ বেড়ে যায়, বেড়ে যায় পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারনে শিশুবিবাহের ঝুঁকির হার।” প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব প্রভাব থেকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য স্কুল ও শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও পরিকল্পনার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে এবং শিক্ষায় জলবায়ু-কেন্দ্রিক বিনিয়োগ লক্ষণীয়ভাবে কম। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে শিশুদের সুরক্ষায় শিক্ষা খাতে জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরি এবং শিশু-কেন্দ্রিক নীতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “চরম আবহাওয়ার ঘটনা বারবার আঘাত হানার কারণে বাংলাদেশের শিশুরা তাদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শুধু শিক্ষা নয়, চরম তাপমাত্রা ও দুর্যোগ শিশুদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।” তিনি বলেন, “শিশুরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় নীতিনির্ধারকদের কাছে জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের এই দাবিকে নীতির কেন্দ্রে রাখতে হবে।” বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জলবায়ু সংকট শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে সতর্ক বার্তা দিয়েছে ইউনিসেফ। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |