প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী ‘সবুজ-হলুদ-লালে’ চিহ্নিত করা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
|
![]() প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনা এবং কাঠামোগত উন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটি প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিবেদন হস্তান্তর করে: ছবি পিআইডি এ রকম ১৪টি সারসংক্ষেপ সুপারিশের কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা সংস্কার পরামর্শ কমিটির আহ্বায়ক ড. মনজুর আহমদ। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত কনসালটেশন কমিটির প্রতিবেদন দাখিল’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশের কথা জানান তিনি। ![]() প্রাথমিক বিদ্যালয়কে মান অনুযায়ী ‘সবুজ-হলুদ-লালে’ চিহ্নিত করা হবে তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন অংশ গোষ্ঠীর সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশের ১১টি জেলার ১২টি উপজেলায় সরেজমিন পরিদর্শন করে তৈরি করেছে। এগুলোকে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি করণীয় হিসেবে ভাগ করা হয়েছে। নির্বাচিত সুপারিশগুলো হচ্ছে ভিত্তিমূলক দক্ষতা : প্রাথমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য হিসেবে শিশুদের বাংলা ও গণিতের ভিত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলা শুধু একটি বিষয় নয়, এটি অন্য সব বিষয়ে প্রবেশের চাবিকাঠি। গণিতে মৌলিক দক্ষতা অর্জিত না হলে শিক্ষার্থীরা শিখনে ক্রমাগত পিছিয়ে থাকবে। এ জন্য প্রতিদিন এ দুটি বিষয়ে ৬০ থেকে ৭৫ মিনিট করে শিক্ষণ-শিখন সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এক শিফটের স্কুল : শিখন সময় বৃদ্ধির জন্য সব বিদ্যালয়কে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এক শিফটের স্কুলে পরিণত করা প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমে অন্তত ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এবং দশ বছরের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে এক শিফট চালু করা যেতে পারে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত অনূর্ধ্ব ১:৩০ নিশ্চিত করা দরকার। নিরাময়মূলক সহায়তা : পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য শ্রেণির ভেতরে ও বাইরে নিরাময়মূলক সহায়তা দিতে হবে। এজন্য স্কুল স্থানীয়ভাবে প্যারা-টিচার (শিক্ষা-সহায়ক) নিয়োগ দিতে পারে। দরিদ্র পরিবারের ব্যয় লাঘব : যত দ্রুত সম্ভব মিড-ডে-মিল প্রবর্তন, খাতা-কলম-ব্যাগ ইত্যাদি সামগ্রী বিতরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্ধারিত অতি দরিদ্র পরিবারের শিশুদের জন্য বর্ধিত হারে অর্থ সাহায্য প্রদান করা যেতে পারে। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর পেশাগত উন্নয়ন : শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের শিক্ষাকর্মীদের পেশাগত মর্যাদা, পদোন্নতি ও পেশাগত অগ্রগতির ব্যাপারে নির্দিষ্ট আশু পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবানুসারে ‘সহকারী শিক্ষক’ পদবি বিলুপ্ত হবে; ‘শিক্ষক’ হিসেবে কর্মজীবনের সূচনার পর ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হিসেবে পরবর্তী পদোন্নতি হবে। সেইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে প্রাথমিক শিক্ষকসহ বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বতন্ত্র মর্যাদা ও উচ্চতর বেতন কাঠামো বিবেচনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যে আশু উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতি ও অসদাচারণ নিরোধ : দুর্নীতি, অসদাচরণ ও কর্তব্যে অবহেলা নিরোধের লক্ষ্যে একটি অন্যতম সুপারিশ হলো, অভিযোগ জানানোর জন্য দেশব্যাপী হটলাইন স্থাপন করা যেতে পারে। সব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে এসব তথ্য নিয়মিত সময়ান্তরে জনসমক্ষে প্রকাশ করা যেতে পারে। বিকেন্দ্রায়নের লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প : শিক্ষা শাসন ও ব্যবস্থাপনার প্রকৃত বিকেন্দ্রায়নের উদ্দেশ্যে দেশের দশ জেলার ২০টি উপজেলায় পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতায় পাইলট প্রকল্প শুরু করা যেতে পারে। প্রাক-প্রাথমিকের মান ও বিস্তার : চলমান ৫+ বয়সের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার যথাযথ মানোন্নয়ন এবং ৪+ শিশুদের পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি অন্যান্য বিদ্যালয়েও অভিভাবকদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিস্তার প্রয়োজন। বিদ্যালয়-বহির্ভূত শিশুদের কার্যসূচি : বিদ্যালয়-বহির্ভূত ও ঝরে পড়া শিশুদের কার্যসূচির জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত ও দক্ষ এনজিওদের সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যকর মডেল তৈরি করতে হবে। সুযোগবঞ্চিতদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ : বিভিন্নভাবে সুযোগবঞ্চিত শ্রমজীবী, প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের সুপারিশ করা হয়েছে। জেন্ডার ন্যায্যতা ও জলবায়ু অভিঘাত বিষয়ে এবং দুর্গম এলাকার শিশু ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে নির্দিষ্ট পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ : শিক্ষকদের প্রি-সার্ভিস শিক্ষা ও যোগ্যতা অর্জন এবং শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিরন্তর পেশাগত উন্নয়নের সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যালয় শিক্ষার সামগ্রিক পরিকল্পনা ও স্থায়ী শিক্ষা কমিশন : সর্বজনীন প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মানসম্মত বিদ্যালয় শিক্ষার খাত পরিকল্পনা এবং স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের বিষয় সুপারিশ করা হয়েছে। সমগ্র শিক্ষাখাতের জন্য পরামর্শক পরিষদ : প্রাথমিক শিক্ষা সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমগ্র শিক্ষাখাতের সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরামর্শক পরিষদ গঠিত হতে পারে। পরে তা স্থায়ী শিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত হতে পারে। শিক্ষা সংস্কার পরামর্শ কমিটির আহ্বায়ক মনজুর আহমদ বলেন, শিক্ষা সংস্কারের জন্য কোনো সহজ জাদু-সমাধান নেই। প্রদত্ত সুপারিশ সম্পর্কে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সময়াবদ্ধ সমন্বিত বাস্তবায়ন কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম ও সরকারের বার্ষিক বাজেট হবে সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রধান বাহন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার প্রমুখ। ডেল্টা টাইমস/সিআর
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |