মার্ক কার্নির সামনে যত চ্যালেঞ্জ
অলোক আচার্য:
|
![]() মার্ক কার্নির সামনে যত চ্যালেঞ্জ রাজনীতিতে উত্থান পতন আছে। সেই হাত ধরেই কানাডার রাজনীতিতে এই পরিবর্তন। আজ হয়তো যাকে তুমুল জনপ্রিয় ভাবছি কালও যে সে ঠিক সেরকম জনপ্রিয় থাকবেন এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না। বছরের শুরুতেই পদত্যাগ করেন জাস্টিন ট্রুডো। জাস্টিন ট্রুডো একজন ফ্রেশ রাজনীতিবিদ হিসেবেই পরিচিত। বিশ্বে জনপ্রিয় রাজনীতিকদের তালিকা তৈরি হলে কয়েকজনের ভিতর জাস্টিন ট্রুডোর নাম উঠে এসেছে। মাত্র কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক দশক আগে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। নিজের দলের হাল যখন ধরেন তখনও তিনি দলের ভিতরে ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এবং এসবের জেরে তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন। মেয়াদ শেষ না করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। কানাডার লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে ২০১৫ সালে জাস্টিন ট্রুডো দেশটির ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। অবশ্য ট্রুডোর রাজনীতির ইতিহাস আরও অনেক বছর আগের। তরুণ বয়স থেকেই তিনি ছিলেন লিবারেল দলের সমর্থক। বাবার মৃত্যুর পর ২০০০ সাল থেকে ট্রুডো লিবারেল পার্টিতে আরো বেশি জড়িয়ে পড়েন। ২০০৭ সালে লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব মনোনয়ন পান। ২০০৮ সালের ফেডারেল ইলেকশনে তিনি হাউজ অব কমন্সে নির্বাচিত হয়ে লিবারেল পার্টির যুব ও সংস্কৃতি বিভাগের একজন সমালোচক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরবর্তী বছর তিনি নাগরিক ও ইমিগ্রেশন বিভাগের সমালোচকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে সেকেন্ডারি শিক্ষা এবং যুব ও শৌখিন খেলাধুলা বিভাগের সমালোচকের দায়িত্ব পান। ২০১৩ সালের এপ্রিলে ট্রুডো লিবারেল পার্টির নেতৃত্ব পান। ২০১৫ সালে তার নেতৃত্বে ১৮৪ এর মধ্যে ৩৬ টি আসন পেয়ে কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিয়ে লিবারেল পার্টি সরকার গঠন করে। বাবার হাত ধরেই তিনিও আসেন কানাডার ক্ষমতায়। দীর্ঘ সময় ধরে কানাডার হাল ধরে থাকেন। জো ক্লার্কের পর তিনি কানাডার দ্বিতীয় কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন থেকে বেশ ভালোভাবেই সামলেছেন দায়িত্ব। খুব বেশি সমালোচনা হয়নি কানাডা অথবা ট্রুডোকে নিয়ে। তবে কিছু বিষয় তার সমালোচানা সৃষ্টি করেছে। ভারতের সাথে কানাডার সুসম্পর্ক বরাবরই ছিল। কিন্তু এই অবস্থার চূড়ান্ত অবনতি ঘটে গত বছর। খালিস্থানপন্থী শিখ নেতা হরদিপ সিং নিজ্জর হত্যাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সম্পর্ক টানাপোড়েন শুরু হয়। এর সাথে যোগ হয় ট্রাম্পের সাথে শুল্ক বাণিজ্য নিয়ে যুদ্ধ যা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। এবং কানাডার অর্থনীতিকে আঘাত করতে শুরু করেছে। বাইরের এসব বিষয়ের সাথে নিজের দলেও তাঁর অবস্থান ক্রমশই দুর্বল হতে থাকে। তবে এসব ট্রুডোর পদত্যাগের পিছনে যথেষ্ট কারণ নয়। রয়েছে আরও বেশ কিছু কারণ। কানাডার মানুষের জীবনেও মুদ্যাস্ফীতি প্রভাব বিস্তার করেছিল। এখনও সে হাল রয়েছে। ফলে মার্ক কর্নির সামনে এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। জনগণের জীবন যাত্রার ব্যয় কমিয়ে আনা। এটাও ট্রুডোর জনপ্রিয়তাকে কমিয়ে আনে। এছাড়া জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় তার অবস্থান, ফেডারেল বাজেট প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা যা নিজের দলেও হয়েছিল এসব ক্রমেই তার সময়কে কমিয়ে আনতে ভূমিকা রেখেছিল। ২০২৪ সালের জুনে টরন্টোতে একটি বিশেষ নির্বাচনে লিবারেল পার্টি তাদের সবচেয়ে নিরাপদ একটি আসন হারায়। অক্টোবর মাসে লিবারেল পার্টির ২০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা ট্রুডোকে চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী পদে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন। এখন আর সেটা তিনি করবেনও না। কারণ দলটির নতুন নেতা এসেছে। আগামী অক্টোবর মাসে কানাডার সাধারণ নির্বাচন। বিরোধীদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। কিন্তু দলের অবস্থা বস্তুত ভালো না। মূলত ব্যক্তি মার্ক কার্নিতেই জনগণ আস্থা রেখেছেন। দলকে এখান থেকে টেনে তুলতে মার্ক কর্নিকেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। ট্রুডোর পদত্যাগের আগে কয়েকটি সমীক্ষাতেই দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর জনপ্রিয়তা একবারে তলানিতে ঠেকেছে। মুদ্রাস্ফীতি থেকে বেকারত্ব, কানাডার আইনশৃঙ্খলা তলানিতে ঠেকা , দেশের বাইরে থেকে আসা লোকেদের দাপট সহ নানা ইস্যুতে দলটি এখন অনেকটাই ব্যাকফুটে রয়েছে। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলতে ট্রুডোকে সরতেই হতো এবং নতুন কাউকে তাঁর স্থানে আসতেই হতো। দলের চাপ ছিল। জনগণের চাপও সম্ভবত ছিল। ঘরে বাইরে একসাথে চাপ সামলানো ট্রুডোর জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর চেয়ে সরে দাঁড়িয়ে দলকে কিছুট সময় দেওয়া ঘুরে দাঁড়ানোর এবং নিজেকে কিছুটা ভারমুক্ত করে আবার শুরু করা এই দুইয়ের জন্য উত্তম হিসেবে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়ানোই শ্রেয় মনে করেছেন তিনি। বলা যায় টুডোর হাত ধরেই উত্থান ঘটেছিল লিবারেল দলের। আবার তাঁর হাত ধরেই ক্রমাগত জনপ্রিয়তা হারিয়েছে দলটি। এ যেন একই বৃত্তের দুই মেরু। এখন মার্ক কার্নিকে সামলাতে হবে চতুর্দিক। সামনে নির্বাচনের আয়োজনও করতে হবে। দল গোছাতে হবে। জনগণের আস্থা ফেরাতে কাজ করতে হবে। কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ট্রাম্পের একজন সমালোচক হিসেবেই পরিচিত। ট্রাম্পের কানাডাকে অঙ্গরাজ্য করার মন্তব্যের পর থেকেই দেশটিতে এক ধরনের জাতীয়তাবাদ চেতনা তৈরি হয়েছে। দেশের প্রতি এই অনুভূতির মূল্য দিতে কর্নিকে সজাগ থাকতে হবে। সেকারণেই জনগণ সম্ভবত পছন্দ করেছে মার্ক কর্নিকে। ট্রাম্পের সাথে লড়াই করার মতো শক্ত মানসিকতার একজনকে দরকার ছিল কানাডার। যুক্তরাষ্ট্রের এক তরফা সিদ্ধান্ত যা কার্যত বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছে বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে। সেখান থেকে কানাডাকে বাঁচিয়ে পাল্টা জবাব দিতেই মার্ক কার্নিকে বেছে নেওয়া। সেই সাথে সামনের নির্বাচনে নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর চ্যালেঞ্জও রয়েছে। আর তা না হলে ফের বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হবে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা দলকে। লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট ডেল্টা টাইমস/অলোক আচার/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |