রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের পথচলা
সাদিয়া সুলতানা রিমি
|
রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের পথচলা সফরের অংশ হিসেবে, মহাসচিব কক্সবাজারে অবস্থিত রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করবেন এবং এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন, যা মানবিক সহায়তার প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়কে আরও উৎসাহিত করবে। এছাড়া, উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক ও সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যমে সংকটের টেকসই সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই-কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেছেন, মিয়ানমারের জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও আলোচনা অপরিহার্য। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উচ্চ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যাতে টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা যায়। গত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি সহায়তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেছে, প্রতি মাসে প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা রোহিঙ্গাদের জন্য অপরিহার্য। বর্তমান চ্যালেঞ্জ যদিও জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সমন্বিত উদ্যোগ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কিছু অগ্রগতি আনতে পারে, তবুও কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান: মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি: দেশটির চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের কারণে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন বা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ধীরগতি হয়ে পড়েছে নতুন শরণার্থী প্রবাহ: সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাড়তে থাকা সহিংসতার ফলে হাজার হাজার নতুন শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, যা বিদ্যমান আশ্রয়শিবিরগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা ও তহবিল সংগ্রহ: রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া চালু রাখতে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকলে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান অর্জন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সম্ভাব্য সমাধানের দিক বর্তমান অবস্থা বিবেচনায়, নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে: উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন ও বৈঠক: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে ২০২৫ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত করা: জাতিসংঘ মহাসচিব এবং হাই-কমিশনাররা তৃতীয় দেশে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া দ্রুত করার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বাংলাদেশের ওপর চাপ কমানো যায়। আন্তর্জাতিক সহায়তা বৃদ্ধি: বাংলাদেশ সরকার বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও মানবিক তহবিল বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা রোহিঙ্গাদের পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা ও আশ্রয় সুবিধা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তবে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ জটিলতা, নতুন শরণার্থী প্রবাহ ও সীমিত তহবিলের কারণে সমাধানের প্রক্রিয়া এখনও ধীরগতিতে এগোচ্ছে। স্থায়ী ও টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সার্বিক সহযোগিতা ও দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত পরিকল্পনা অত্যন্ত প্রয়োজন। লেখক : শিক্ষার্থী, গণিত বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
|
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |