ক্ষমতার পালাবদল নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নীতির আমূল রূপান্তর জরুরি
প্রজ্ঞা দাস:
|
![]() ক্ষমতার পালাবদল নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নীতির আমূল রূপান্তর জরুরি একটি বিভ্রান্তির ইতিহাস স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সামরিক শাসন, গণআন্দোলন, দলীয় পালাবদল—সবই হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো: শাসক পরিবর্তনের পরও কেন দুর্নীতি, দলীয়করণ, ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অপরিবর্তিত? কারণ, ক্ষমতার বদল কেবল "শীর্ষে থাকা মুখ" বদলায়, কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের অভ্যন্তরে ক্ষমতার কেন্দ্রগুলো (যেমন- আমলাতন্ত্র, নীতি-নির্ধারণী সংস্থা, বিচারব্যবস্থা) অক্ষত থাকে। একদল ক্ষমতায় এলে প্রশাসন তাদের অনুগত হয়, অন্যদল এলে আবার নতুন শাসকের চোখে ধুলো দেয়। এই চক্রে জনগণ কেবল প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়ে। দলীয়করণের বিষ:প্রশাসন, পুলিশ, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত দলীয় স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত। আইনের ঊর্ধ্বে ক্ষমতাবানরা:দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ রাজনৈতিক ইচ্ছার অধীন। কেন্দ্রীভূত শাসন:স্থানীয় সরকারগুলি নামমাত্র; উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ শূন্য। সংবিধানের অপব্যবহার:ক্ষমতাসীনরা সংবিধানকে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার বানিয়েছে। আমলাতন্ত্রকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করতে সংবিধানে স্বাধীন সরকারি কর্মকমিশন গঠন। কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও মূল্যায়নে দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য। স্থানীয় সরকারকে অর্থ, প্রশাসনিক ও নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা হস্তান্তর (বিকেন্দ্রীকরণ)। উচ্চ আদালতের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ। জাতীয় প্রসিকিউশন কমিশন গঠন করে দুর্নীতি ও ফৌজদারি মামলার তদন্ত স্বাধীন করা। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতের নীতি প্রণয়নে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন। সকল নীতি-প্রস্তাবনা সংসদ ও গণমাধ্যমে উন্মুক্ত আলোচনার পর বাস্তবায়ন। রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দল আইন কঠোর করা। নির্বাচনী অর্থায়নের উৎস স্বচ্ছ করতে ডিজিটাল লেনদেন বাধ্যতামূলক। সংবিধানের মূলনীতি (যেমন- ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র) সংশোধনযোগ্য তালিকা থেকে বাদ। সংবিধান সংশোধনে গণভোট বাধ্যতামূলক করা। রাষ্ট্রব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের পথে প্রধান বাধা হলো ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থ। তবে ইতিহাস প্রমাণ করে, কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া কোনো দেশই দীর্ঘমেয়াদি উন্নতি করতে পারেনি। দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দেখায়—স্বচ্ছ প্রশাসন ও নীতিনির্ধারণের মাধ্যমেই অর্থনৈতিক বিপ্লব সম্ভব। "ক্ষমতার বদল" নয়, প্রয়োজন একটি নতুন সামাজিক চুক্তি—যেখানে রাষ্ট্র জনগণের সেবক হবে, প্রভু নয়। এই লক্ষ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করে সংস্কারের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন জরুরি। অন্যথায়, ক্ষমতার আবর্তনে বাংলাদেশ আটকে থাকবে একই গ্লানি, অনিশ্চয়তা ও পশ্চাদপদতার চক্রে। লেখক : শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ। ডেল্টা টাইমস/প্রজ্ঞা দাস |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |