ভবিষ্যৎ জানার দাবি: ইসলামের দৃষ্টিকোণে প্রতারণার ইতিহাস
ডা. সাঈদ এনাম:
|
![]() . এমন ধারণা পোষণ করা বা প্রচার করা শুধু প্রতারণাই নয়, বরং ইসলাম সম্পর্কে ভুল বোঝার প্রকাশ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কথা ছড়ায়, তবে সে হয়তো পার্থিব সুবিধা হাসিল বা আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে এমন করছে। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এমন ব্যক্তি একজন মিথ্যাবাদী এবং পথভ্রষ্ট। পবিত্র কুরআনে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন:“আপনি বলে দিন, আমি নিজের কল্যাণ বা ক্ষতির মালিক নই; যা আল্লাহ চান তাই ঘটে। আর যদি আমি অদৃশ্যের (গায়েব) খবর জানতাম, তাহলে তো অনেক কল্যাণ অর্জন করতাম এবং কোনো অমঙ্গল আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী এবং সুসংবাদদাতা তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে।”— (সূরা আল-আ'রাফ: ১৮৮) ইসলামের ইতিহাসে শুরু থেকেই কিছু লোক ধর্মকে ব্যবসার হাতিয়ার বানিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগেও এমন ভণ্ড নবী ও মিথ্যা দাবিদারদের উত্থান ঘটেছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত ছিল মুসায়লামা আল-কাজ্জাব এবং সাজাহ বিনতে হারিস। মুসায়লামা আল-কাজ্জাব: ইয়ামামার এই ভণ্ড নবী নিজেকে নবী দাবি করে স্বরোচিত কথাকে ওহী হিসেবে প্রচার করত। সে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে চিঠি লিখে দাবি করেছিল যে নবুওয়াতের দায়িত্ব তাকে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে যৌথভাবে দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ‘কাজ্জাব’ (মিথ্যাবাদী) আখ্যা দেন এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। খলিফা আবু বকর (রা.)-এর সময় ইয়ামামার যুদ্ধে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী মুসায়লামার ৪৫ হাজার অনুসারীকে পরাজিত করে এবং তাকে হত্যা করে। সাজাহ বিনতে হারিস: এই ধূর্ত নারীও নিজেকে নবী দাবি করে সাধারণ মানুষকে যাদু ও মিথ্যা নাটকের মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করত। সে একটি বড় মুরিদ বাহিনী গড়ে তুলেছিল। আধিপত্য বিস্তারের আশায় সে মুসায়লামার সঙ্গে জোট গঠন করে এবং তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। মুসায়লামা এই প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং বিয়ের কাবিন হিসেবে সাজাহর অনুসারীদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ তিন ওয়াক্তে কমানোর ঘোষণা দেয়। পরে তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় মুসায়লামা সাজাহকে পরিত্যাগ করে। সাজাহর অনুসারীরা তার প্রতারণা বুঝতে পেরে তাকে ছেড়ে চলে যায়, এবং সে আত্মগোপনে চলে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে। উপসংহার
ইসলাম স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে নবুওয়াত চিরতরে সমাপ্ত হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ জানার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। যারা গায়েবী জ্ঞানের দাবি করে, তারা নিঃসন্দেহে মিথ্যাবাদী ও প্রতারক। ইতিহাসে মুসায়লামা ও সাজাহর মতো বহু প্রতারক ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। আজও যদি কেউ এমন দাবি করে, তবে সে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে পথভ্রষ্ট। আমাদের সঠিক আকিদা লালন করা উচিত এবং এ ধরনের প্রতারণা থেকে দূরে থাকা উচিত। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি, সিলেট মেডিকেল কলেজ ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন ডেল্টা টাইমস/ডা. সাঈদ এনাম/সিআর |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |