ফিলিস্তিনে রক্তগঙ্গার শেষ কোথায়
মো. ইশতিয়াক হোসেন রাতুল:
|
![]() ফিলিস্তিনে রক্তগঙ্গার শেষ কোথায় গাজা, পশ্চিম তীর ও জেরুজালেম—এই তিন ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত ফিলিস্তিন আজ এক দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের হাতে বন্দি। ১৯৪৮ সালে পশ্চিমাদের আশীর্বাদে ইসরায়েলের অবৈধ জন্মের পর থেকেই এই ভূখণ্ডকে রক্তে রঞ্জিত করা হয়েছে। জাতিসংঘ, পশ্চিমা বিশ্ব, এমনকি কিছু আরব দেশও এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এই গণহত্যার পৃষ্ঠপোষকতায় সকলে অন্ধ সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস কি কখনো ক্ষমা করেছে? এই পৃথিবীর বুকেই তো একদিন রোম সাম্রাজ্য ছিল, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ছিল, মঙ্গোলদের তাণ্ডব ছিল—সব হারিয়ে গেছে। ইসরায়েলও হারাবে, সময় তার চক্র পূর্ণ করবে, কিন্তু তার আগে? তার আগে ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিন কাঁদবে? প্রতিদিন তাদের রক্তে নদী বইবে? ফিলিস্তিনের বর্তমান সংকট বুঝতে হলে আমাদের ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখতে হবে। কিভাবে এক সুপ্রাচীন ভূখণ্ডকে গিলে ফেলার ষড়যন্ত্র হলো? কীভাবে শত শত বছরের অস্তিত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হলো? একসময় ফিলিস্তিন ছিল এক বহুধর্মীয় ও শান্তিপূর্ণ জনপদ, যেখানে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিরা একসঙ্গে বাস করত। কিন্তু ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করল ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। ১৯১৭ সালে ব্রিটেনের ‘বেলফোর ঘোষণা’ ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিনে একটি "জাতীয় আবাসভূমি" গঠনের প্রতিশ্রুতি দিল। এর মাধ্যমে মূলত ফিলিস্তিনিদের মাতৃভূমি ছিনিয়ে নেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ এক ধ্বংসাত্মক পরিকল্পনা গ্রহণ করল—ফিলিস্তিনকে ভাগ করে একপাশে ইহুদিদের রাষ্ট্র আর অন্যপাশে ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নিল। যে জমি শত শত বছর ফিলিস্তিনিদের ছিল, সেটিই ভাগ করে দেওয়া হলো! এটা কি ন্যায়বিচার? নাকি সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত? ১৯৪৮ সালে এক কলঙ্কজনক দিন! ইসরায়েল নামক অবৈধ রাষ্ট্রের জন্ম হলো, আর তার সঙ্গে জন্ম হলো গণহত্যার এক নতুন অধ্যায়। লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হলো, বাস্তুচ্যুত করা হলো। ইতিহাস একে বলে "নাকবা" (The Catastrophe)। কিন্তু আসল বিপর্যয় তো এখনো শেষ হয়নি। ১৯৬৭ সালে মাত্র ছয় দিনে ইসরায়েল পুরো ফিলিস্তিন দখল করল। গাজা, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম—সব চলে গেল দখলদারদের হাতে। আজও এই দখলদারিত্ব চলছে, এবং বিশ্ববিবেক নির্বিকার। ইসরায়েলের আগ্রাসন কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত গণহত্যা। তাদের লক্ষ্য একটাই—ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করা। পশ্চিম তীরে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি গড়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গাজাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কারাগারে পরিণত করা হয়েছে, যেখানে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা—সব বন্ধ! বোমাবর্ষণ করে একের পর এক ফিলিস্তিনি শহর ধ্বংস করা হচ্ছে। শিশুদের মাথা উড়ে যাচ্ছে, স্কুল ধ্বংস করা হচ্ছে, হাসপাতালগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। আল-আকসা মসজিদকে বারবার আক্রমণ করা হচ্ছে, মুসলমানদের পবিত্র ভূমিকে হাতছাড়া করার চক্রান্ত চলছে। এই বর্বরতা কি কেবল ফিলিস্তিনিদের সমস্যা? না, এটি মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ! আমেরিকা ইসরায়েলের গণহত্যার প্রধান মদদদাতা। প্রতি বছর ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়, জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রস্তাবে ভেটো দেয়। ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন—সবাই ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছে। গণহত্যা দেখেও তারা মানবাধিকারের বুলি আওড়ায়! সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, জর্ডান—সবাই মুখে প্রতিবাদ করে, কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে। মুসলিম বিশ্বের এই বিশ্বাসঘাতকতা ফিলিস্তিনের রক্তের দায় বহন করছে! কিন্তু ফিলিস্তিনিরা কি হার মেনে নিয়েছে? না! ইতিহাসে যতবার অন্যায় এসেছে, ততবার বিদ্রোহ জন্ম নিয়েছে। আজও ফিলিস্তিনিরা জানে, তারা যদি লড়াই না করে, তবে তারা বিলীন হয়ে যাবে। হামাস একমাত্র সংগঠন, যারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। পশ্চিমারা এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে, কিন্তু সন্ত্রাসী কারা? যারা নিজেদের মাতৃভূমির জন্য লড়ছে, নাকি যারা একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করছে? গাজার জনগণ প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে, কিন্তু মাথা নত করেনি। এই গণহত্যার সামনে আমরা কি চুপচাপ বসে থাকব? না, আমাদেরও দায়িত্ব আছে। ফিলিস্তিনের বাস্তবতা প্রচার করতে হবে। ইসরায়েলকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে বয়কট আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ফিলিস্তিনের মানুষদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে হবে। বিশ্বজনমত তৈরি করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলতে হবে। ইসরায়েল ও তার দোসররা মনে করছে, এই গণহত্যা চিরকাল চলবে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, অন্যায় কখনো টেকে না! এই আগ্রাসনও একদিন ধ্বংস হবে, দখলদাররা হারিয়ে যাবে। ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ! প্রতিরোধ জিন্দাবাদ! মানবতা জিন্দাবাদ! লেখক : শিক্ষার্থী, গণ যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ডেল্টা টাইমস/মো. ইশতিয়াক হোসেন রাতুল/সিআর/এমই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |